ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে বাড়ি আত্মসাতের মামলার অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তার করা আপিলের শুনানি হবে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর।
রোববার (৩০ আগস্ট) সকালে এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
এ সময়ের মধ্যে মওদুদ আহমদকে লিভ টু আপিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলার বিচারিক কার্যক্রমের ওপর ৩০ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ সময়ের মধ্যে অভিযোগ আমলে নেওয়া বৈধ বলে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে তাকে নিয়মিত আপিল করতেও বলা হয়েছে।
গত ২৩ জুন মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া প্রশ্নে রুল খারিজ করে দিয়ে বিচারিক আদালতে অভিযোগ আমলে নেওয়া বৈধ বলে আদেশ দেন বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। হাইকোর্টের ওই এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন মওদুদ আহমদ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ নিজেই শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান।
শুনানিতে মওদুদ আহমদ বলেন, তিনি এখনো হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাননি। তাই লিভ টু আপিল করতে পারেননি। পরে আদালত শুনানির জন্য ৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। এ সময়ের মধ্যে তাকে লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেন।
ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কামরুল ইসলাম মোল্লার আদালতে মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাড়ি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে।
গত বছরের ১৪ জুন অভিযোগ আমলে নেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে মওদুদ আহমদ রিভিশন করলে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ২৩ জুন রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
মওদুদের ভাই মনজুর আহমদ পলাতক থাকায় আগেই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, গুলশানে বসবাসরত মওদুদ আহমদের বাড়ির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। এক পর্যায়ে বাড়িটির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের স্ত্রীরও নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা বাংলাদেশ ত্যাগ করলে ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট মওদুদ তার ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাই মনজুরের নামে একটি ভুয়া আম মোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন।
দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদ ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর অবৈধভাবে বাড়ি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মওদুদ ও তার ভাই মনজুরের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় বলা হয়, ১৯৬০ সালের ২৪ আগস্ট গুলশান আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এক বিঘা ১৩ কাঠা আয়তনের (হোল্ডিং নং ১৫৯) প্লটটি পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসানকে হস্তান্তর করে তৎকালীন ডিআইটি (বর্তমানে রাজউক)।
পরবর্তীতে লিজ গ্রহীতার প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত আবেদনের ভিত্তিতে তার স্ত্রী ইনজে মারিয়া প্ল্যাজ (অস্ট্রেলিয়ান) এর নামে ওই প্লটটি ১৯৬৫ সালে লিজ দলিল হিসাবে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়।
সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত ‘মিনিস্ট্রি অব ক্যাবিনেট অ্যাফেয়ার্স’ জারির আগেই ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ ও মুক্তিযুদ্ধের পরপরই তার স্বামী মো. এহসানের দেশত্যাগের কারণে প্লটটি পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, মওদুদ আহমদ ওই সম্পত্তি আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেকে ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ প্রদত্ত আম মোক্তারনামার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দাবিদার দেখানোর জন্য ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট একটি আম মোক্তারনামা তৈরি করেন এবং তা তার সুবিধামতো সময়ে ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে নানা কৌশলে বাড়িটি দখলে নিয়ে নিজেকে ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজের ভাড়াটিয়া হিসেবে দেখিয়ে বাড়িটিতে বসবাস করে আসছেন তিনি।
এজাহারে আরও উল্লেখ রয়েছে, এ নারীর (ইনজে মারিয়া) স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে আসার কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও মওদুদ আহমদ তার পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে তা দেখান। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে তৎকালীন সরকারে যোগদান করে প্রথমে সরকারের মন্ত্রী এবং ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মন্ত্রিসভায় উপ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিজের ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় হোল্ডিং নং ১৫৯নং এর প্লটটির মূল্য মাত্র ১০০ টাকা দেখিয়ে বরাদ্দ নেন তিনি। ১৯৮০ সালে প্লটটি রেজিস্ট্রি করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ইনজে মারিয়া জনৈক মহসিন দরবার বরাবরে একটি আম মোক্তারনামা সম্পাদন করেছেন বলে দেখানো হয়। ইনজে মারিয়া ১৯৮৫ সালে মারা যান। এটা জানা সত্ত্বেও মহসিন দরবার নামের ব্যক্তিকে দিয়ে মৃত ব্যক্তির আম মোক্তার হিসেবে ১৯৮৫ সালে বাড়িটি মওদুদের সহোদর ভাই মনজুর আহমদ বরাবর চুক্তি সম্পাদনা দেখানো হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, মওদুদ তার ভাই মনজুর আহমদকে অবৈধভাবে ওই বাড়ির কথিত মালিক বানানোর কাজে একে অন্যকে সহায়তা করার মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন।
তবে মওদুদ আহমদের পক্ষে দাবি করা হয়, বাড়িটি সরকারি সম্পত্তি নয়, ব্যক্তিগত সম্পত্তি। আর মওদুদ আহমদের ভাই ব্যক্তি মালিকের কাছ থেকেই বাড়িটি ক্রয় করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
ইএস/এএসআর