ঢাকা: গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। রোববার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যায় গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয জোটের মিটিং থেকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
দলীয় সূত্রমতে, একের পর এক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে প্রচণ্ড চাপে পড়া বিএনপি এই মুহূর্তে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যেতে চায় না। আপাতত দল পুনর্গঠন ও আটক নেতা-কর্মীদের আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্ত করে সংগঠন মজবুত করাই দলটির প্রধান লক্ষ্য।
কিন্তু, সরকার সম্প্রতি আর এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় জনমনে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। আর এমন জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বিএনপির পক্ষে ‘মুখ বুজে’ বসে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে রোববার রাতে জোট নেতাদের সঙ্গে বসছেন জোট নেতা খালেদা জিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বেকায়দায় থাকা বিএনপি গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি’র ইস্যুতে হরতালের মত বড় কর্মসূচিতে আপাতত যাচ্ছে না। বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের সেন্টিমেন্টের প্রতি ন্যুনতম শ্রদ্ধা জানানোর কৌশল হিসেবে আপাতত জেলায় জেলায় বিক্ষোভ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় বিএনপি।
তবে জোট শরিক, বিশেষ করে জোটের অন্যতম প্রধান শক্তি জামায়াত যদি ১ দিনের হরতাল কর্মসূচির ব্যাপারে জোরালো অবস্থান নেয়-সেটিও ভেবে দেখবেন জোট নেতা খালেদা জিয়া।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, যে কোনো ধরনের জনস্বার্থবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক জোট আছে। জোটের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে এবং সে কর্মসূচি জনগণের আশা- আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিল রেখে চূড়ান্ত করবে জোট।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী বাংলানিউজকে বলেন, জোটের মিটিং ডাকা হয়েছে। ওই মিটিংয়েই কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। তবে আপাতত হরতালের মত বড় ধরনের কর্মসূচি নাও আসতে পারে।
জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বাংলানিউজকে বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির মত জনস্বার্থবিরোধী ইস্যুতে ২০ দলীয় জোট অবশ্যই কর্মসূচি দেবে। তবে হরতালের মতো কর্মসূচি আসার সম্ভাবনা কম। তারপরও কর্মসূচির ব্যাপারে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার জোট নেতা খালেদা জিয়াকে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালের ১ মার্চ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় ৫ শতাংশ। ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাইকারি পর্যায়ে ১১ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ; ২০১১ সালের ১ আগস্ট পাইকারি পর্যায়ে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ; ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর পাইকারি পর্যায়ে ১৬ দশমিক ৭৯ ও গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয় বিদ্যুতের।
এর পর ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করে ১৪ দশমিক ৩৭ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাইকারি পর্যায়ে ১৬ দশমিক ৯২ ও খুচরা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ২০১৪ সালের মার্চে গড়ে ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ওই সময়গুলোতে সরকার বিরোধী বড় ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি চলতে থাকায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আলাদা কোনো কর্মসূচি দেওয়ার সুযোগ পায়নি। তবে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশব্যাপী হরতাল পালন করে ২০ দল।
সর্বশেষ গত ২৬ আগস্ট পুন:রায় গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই দিন বিকেলে গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০ দলের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
দাম বাড়ানোর ঘোষণার ৪ দিন পর আজ রোববার বসছে ২০ দলীয় জোটের সেই বৈঠক। এই বৈঠক থেকেই চূড়ান্ত হবে কর্মসূচি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
এজেড/জেডএম