ঢাকা: গত কয়েক বছরে গুম-খুনের শিকার হওয়া মানুষগুলোকে খুঁজে বের করতে জাতিসংঘের অধীনে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহবান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিশ্ব গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে রোববার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যায় গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের গুম হওয়া নেতা-কর্মীর স্বজনদের সহমর্মিতা জানাতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আহবান জানান।
“অনন্ত অপেক্ষা... বাংলাদেশে গুম ২০০৯-২০১৫” গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনের প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সহমর্মিতা” শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুমের শিকার ২৬ পরিবার ও তাদের ৬০/৬৫ জন স্বজন।
অনুষ্ঠানে শুরুতে বড় পর্দায় গুম-খুনের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এ সময় গুম-খুনের শিকার নেতা-কর্মীদের স্বজনরা উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকেন। খালেদা জিয়াকেও বার বার চোখ মুছতে দেখা যায়।
প্রামাণ্যচিত্র দেখানোর সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা, নেয়াখালীর হাজীরপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুকের স্ত্রী পারভিন আক্তার, লাকসাম পৌর বিএনপি সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার ও তার ছোট ভাই গোলাম ফারুক, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের মা খাদিজা বেগম, তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া যুবদলের সভাপতি সাজিদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন ও বোন ফেরদৌসি, মো. ইয়াকুব আলীর ভাই মো. আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মুন্নার মা ময়ূরী বেগম ও বাবা মো. শামসুদ্দিন, আব্দুল কাদের মাসুমের মা আয়শা আলী, আদনান চৌধুরীর মা কানিজ ফাতেমা, কাওসারের মা কমলা খাতুন, বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনের স্ত্রী ফারজানা, গুলশান থানা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সাইফুর রহমান সজিবের বাবা শফিকুর রহমান ও সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহেনা বানু।
এর পর একেক করে স্বজনহারাদের কথা শোনেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় স্বজনহারাদের কান্নায় অনুষ্ঠানস্থল ভারী ওয়ে ওঠে। সব শেষে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া।
সরকার ও রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও গুম-খুন হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবস পালন করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালন করেনি। কারণ তারা এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাই এ দিবসটি পালন করতে তাদের লজ্জা ও ভয় হয়।
খালেদা জিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক গুম দিবসে স্বজনহারারা এই ‘অবৈধ’ সরকারের কাছে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি, এ ‘অবৈধ’ সরকার স্বজনহারা মানুষগুলোর কথা শুনবে না। তাই দেশের নিরপেক্ষ লোক দিয়ে জাতিসংঘের অধীনে গুম-খুনের আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছি। যাতে স্বজনহারা মানুষগুলো তাদের স্বজনদের ফিরে পায়।
আওয়ামী লীগ-ই বাংলাদেশে গুম-খুন চালু করেছে অভিযোগ করে স্বজনহারাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের কথাগুলো শুনলাম। কিন্তু আমাদেরও করার কিছু নেই। আমরাও গুম-খুনের শিকার হব না, এমন গ্যারান্টি দিতে পারব না। তবে কোনো দিন যদি সুযোগ পাই, তাহলে সব গুম-খুনের বিচার হবে। আপনারা জানতে পারবেন, কীভাবে এবং কেন আপনাদের স্বজনদের গুম করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস শুধু দিবস পালনের জন্য নয়। এই দিবসে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো ও তাদেরকে সজাগ করতে হবে। সরকারকেও সজাগ করতে হবে, গুম-খুনের মত ন্যাক্কারজনক কাজ যারা করে তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, সেলিমা রহমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমান, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫/আপডেট ২১৩৬ ঘণ্টা
এজেড/বিএস/জেডএম