ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আবারও সংকটের মুখে জাসদ!

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৫
আবারও সংকটের মুখে জাসদ!

ঢাকা: আবারও সংকটের মুখে পড়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু)। এ সংকট তৈরি হয়েছে দলের ভেতরে এবং বাইরে।

দলের ভেতর থেকে প্রস্তাব উঠেছে, জাসদের নাম এবং আদর্শ ও লক্ষ্য পরিবর্তনের।

এরই পেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জাসদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

জাসদের একাধিক সূত্র জানায়, গত ৩০ ও ৩১ জুলাই জাসদের জাতীয় কমিটির সভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া জাসদের নাম পরিবর্তনসহ ৬ দফা প্রস্তাব সম্বলিত একটি লিখিত বক্তব্যের কপি নেতাদের হাতে পৌঁছে দেন। তবে শরীফ নুরুল আম্বিয়া তার এ প্রস্তাব জাসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নয়, ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে দিয়েছেন বলে নেতাকর্মীদের জানান।

এ প্রস্তাবে তিনি জাসদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মূলনীতি ‘আমাদের লক্ষ্য বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ বাদ দেওয়ারও প্রস্তাব করেন।

‘জাসদের রাজনীতি ও আদর্শগত বিষয়’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে শরীফ আম্বিয়া বলেন, দেশ ও সমাজে বিরাজমান অবস্থা, বিশ্ব পরিস্থিতি ও দলের দীর্ঘ সংগ্রামের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে দলের আদর্শ ও লক্ষ্য পর্যালোচনার দাবি রাখে।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হবে উন্নত, সমৃদ্ধ জীবন সম্বলিত অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করা।

তিনি উল্লেখ করেন, ছাত্রলীগকে আমাদের লক্ষ্য ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ ঘোষণা থেকে সরে এসে ‘অসাম্প্রদায়িক সমাজ নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হতে হবে। দলের ফ্রন্টগুলোকে কর্মীভিত্তিক সংগঠনের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক সংগঠনে পরিণত করা, দলে উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করা এবং জাতীয় ঐক্যের কর্মসূচি ঘোষণা ও জাসদের নাম পরিবর্তনের বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।

সূত্রগুলো জানায়, এর আগে জাসদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শরীফ নুরুল আম্বিয়া এই প্রস্তাবটি তোলেন। সেখানে স্থায়ী কমিটির আরো দুই সদস্য প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেন। তার এই প্রস্তাবের পক্ষে দলের বেশ কয়েজন কেন্দ্রীয় নেতাও রয়েছেন। তবে এ সময় দলের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রস্তাবটির বিপক্ষে মত দিয়েছেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতারসহ আরো কয়েকজন নেতাও এ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন।

আগামী মাস তিনেক পর জাসদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবের পক্ষে দলের মধ্যে জনমত গঠনের জন্য সারাদেশের নেতাকর্মীদের কাছে এটি পাঠানো হয়েছে। যারা এই প্রস্তাবের পক্ষে আছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে তৎপর বলেও জানা গেছে।

এ সব প্রস্তাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এটি অন্য কোনো বিষয় নয়। দলকে বড় করা, সম্প্রসারিত করার জন্যই আমি কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে আমি সংবাদমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করবো না।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল বাংলানিউজকে বলেন, জাসদ একটি অ্যাক্টিভিস্ট পার্টি। এখানে নানা প্রস্তাব আসতেই পারে। অতীতেও এসেছে। সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় যে সিদ্ধান্ত আসে, আসবে। জাসদের নাম পরিবর্তনের তো কোনো প্রয়োজন নেই।

এ বিষয়ে জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার বাংলানিউজকে বলেন, জাসদ যে নীতি-আদর্শে চলছে, সেই নীতি-আদর্শেই চলবে। একজন লোক একটা প্রস্তাব দিয়েছেন; সেটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ ছিল জাসদ। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদের জন্ম হয়।   ছাত্রলীগের মধ্যে যে অংশটি সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শে বিশ্বাসী, আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে তারাই মূলত জাসদ গঠন করে।

তবে ১৯৮০ সালে বিভিন্ন বিতর্ককে কেন্দ্র করে প্রথম জাসদ ভাঙনের কবলে পড়ে এবং জাসদ থেকে বেরিয়ে একদল নেতা বাসদ গড়ে তোলেন।
 
এরপর ৮৪ সালে জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেজর (অব.) আব্দুল জলিল পদত্যাগ করেন।
 
১৯৮৬ সালে কাজী আরিফ ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাসদ পুনর্গঠন কেন্দ্র গড়ে ওঠে, যা পরে জাসদ (ইনু) হিসেবে পরিচিতি পায়।

১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারির উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে জাসদ আবার ভেঙে সাত ভাগে বিভক্ত হয় এবং মীর্জা সুলতান রাজা ও শাহজাহান সিরাজ ঐক্য জাসদ গড়ে তোলেন।

পরবর্তীতে ২০০৮ সালে মহাজোট গঠিত হলে জাসদ (ইনু) মহাজোটের শরিক হয়।

এই পেক্ষাপটে হঠাৎ করেই জোট শরিক আওয়ামী লীগ নেতাদের আক্রমণের শিকার হয় জাসদ। বিএনপি নেতারাও এ বিষয়টি নিয়ে একই ধরনের কথা বলেছেন। এর বিরুদ্ধে পাল্টা বক্তব্য দিলেও অস্বস্তিতে রয়েছে জাসদ নেতৃত্ব।

গত ২৩ আগস্ট জাতীয় শোকদিবসের এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা কখনো বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারতো না, যদি গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে, বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করতো।

এরপর ২৫ আগস্ট মাহাবুব-উল আলম হানিফ ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে বলেন, জাসদ ও ন্যাপসসহ যারা বাম রাজনীতি করতেন ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত, তারা বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের ঔদ্ধত্য এমন পর্যায়ে ছিল যে, একটা সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য যা যা করণীয়, তারা তা করেছেন। তারাই এ সময় তৈরি করেছিল জাতির পিতাকে হত্যার প্রেক্ষাপট।

হানিফ একাধিকবার এ বিষয়ে কথা বলেন।

ঠিক একই সময়ে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত জাসদের ভূমিকার তদন্ত দাবি করেন।
 
এরপর জাসদ নেতারাও পাল্টা জবাব দিয়েছেন। এ বিষয়ে এক বিবৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের অভিন্ন বক্তব্যের কারণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বুধবার (২৬ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জাসদের বিরুদ্ধে একই সুরে যারা কথা বলছেন, আমি তাদের সঙ্গে কোনো বাকযুদ্ধে লিপ্ত হতে চাচ্ছি না। আমি শুধু বলবো, হঠাৎ করে জাসদকে নিয়ে তারা ঘাটাঘাটি কেন শুরু করলেন, আমি জানি না!

বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার একই ভাষায় একই ধরনের সমালোচনার যোগসূত্র কী এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের বক্তব্য জোটের ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ০০, ২০১৫
এসকে/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।