ঢাকা: কেন্দ্র থেকে বেঁধে দেওয়া সময়ের (৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫) মধ্যে বিএনপির তৃণমূল কমিটিগুলো পুনর্গঠন হচ্ছে না। দলের গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা ইউনিটে কাউন্সিল করে জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠনের জন্য আরো সময় চায় তৃণমূল।
বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্তত ৪০টি জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে গত ১০ আগস্ট খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহম্মদ শাহজাহান তৃণমূল কমিটিগুলোর কাছে চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে বলা হয়, অযোগ্য, নিষ্ক্রিয় ও ব্যর্থ লোকদের সরিয়ে যোগ্য লোকদের সমন্বয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন করে কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে কেন্দ্র থেকে পাঠানো ওই চিঠি দূরবর্তী জেলাগুলোতে পৌঁছুতেই ৪/৫ দিন সময় পার হয়ে যায়। চিঠি হাতে পাওয়ার পর তৃণমূল নেতাদের হাতে সময় অবশিষ্ট থাকে ৪৫ দিনের মত।
এই ৪৫ দিনের মধ্যে সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভায় কাউন্সিল করে কমিটি পুনর্গঠন এবং জেলায় সম্মেলন করে জেলা ইউনিট পুনর্গঠন তৃণমূলের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রের চাপে তড়িঘড়ি কমিটি পুনর্গঠন করতে গেলে পকেট কমিটি করতে হবে তৃণমূলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের।
তাছাড়া ‘নাশকতা নির্ভর আন্দোলন’র পর তৃণমূল বিএনপির অনেক নেতা এখনো কারাগারে আছেন। পুলিশের ভয়ে অনেকেই আছেন আত্মগোপনে। বার কাউন্সিল নির্বাচনের কারণে তৃণমূল বিএনপির অনেক আইনজীবী নেতাকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত থাকতে হয়েছে ব্যস্ত।
অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেও কোনো কোনো জেলায় কাজই শুরু করতে পারছেন না তৃণমূল নেতারা। আবার নাশকতার মামলায় আসামি হওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজ নিজ এলাকায় যেতে পারছেন না। কোথাও কোথাও পুলিশি বাধায় পণ্ড হচ্ছে তৃণমূল বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব জেলায় অনধিক ৫টি উপজেলা এবং ২/৩টি করে পৌরসভা রয়েছে সে সব জায়গায় নির্ধারিত সময় ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর জেলা বিএনপি সভাপতি আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ৩ উপজেলা ও ২ পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত মেহেরপুর জেলা বিএনপি পুনর্গঠন ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্ভব। এরই মধ্যে ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নগুলোর কাজ শেষ করে ফেলেছি। কেন্দ্র থেকে তারিখ নির্ধারণ করে দিলে জেলা সম্মেলনটাও করে ফেলতে পারব ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই।
৭ উপজেলা ও ১ পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি পুনর্গঠনও মোটামুটি এগিয়ে চলছে। আগে থেকেই কিছু কাজ এগিয়ে রাখায় নির্ধারিত সময় ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব এ জেলায়।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি সভাপতি এম নাছের রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আগে-ভাগেই কিছু কাজ এগিয়ে রাখায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কমিটি পুনর্গঠন করে ফেলতে পারব। আশা করছি বাড়তি সময় প্রয়োজন হবে না।
সূত্রমতে, বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিট’র দিক থেকে মেহেরপুর এবং মৌলভীবাজারের মত ছোট জেলার সংখ্যা খুবই কম। ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্তত ৬০টি জেলায় উপজেলা ও পৌরসভা মিলে ১৫টির উপরে সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। এসব ইউনিটে কাউন্সিল করে জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠন বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। অনেক ছোট জেলাতেও এ ধরনের সমস্যা রয়ে গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটে এখনো কাজই শুরু করতে পারেনি তৃণমূল। এ জেলায় ৫টি উপজেলা এবং ২টি পৌরসভায় বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। কিন্তু ২৮ আগস্ট পর্যন্ত এ জেলায় বিএনপির পুনর্গঠন কাজ শুরু হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বাংলানিউজকে বলেন, কাউন্সিলের তারিখ ঠিক করার জন্য খুব শিগগিরই আমরা বৈঠকে বসব। আমাদের জেলায় যেহেতু মাত্র ৫টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভা, সেহেতু ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব।
এদিকে যেসব জেলায় ১০/১২টি করে উপজেলা ও ৮/৯টি করে পৌরসভা রয়েছে, সেসব জেলায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের কথা চিন্তাও করতে পারছেন না তৃণমূল বিএনপির নেতারা।
সিরাজগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোকসেদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলা ও ৬টি পৌরসভার মধ্যে এখন পর্যন্ত একটির কাজও সম্পন্ন হয়নি। সুতরাং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো অবস্থাতেই কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব নয়।
নাটোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল হকের বক্তব্যও একই রকম। বাংলানিউজকে তিনি জানান, নাটোর জেলার ৮ উপজেলা ও ৭টি পৌরসভায় বিএনপির আলাদা কমিটি রয়েছে। এগুলো কাজ তারা শুরু করেছেন। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব না।
পাবনা জেলা বিএনপি সভাপতি খন্দকার সুলতান মাহমুদের অভিমতও অভিন্ন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সব নিয়ম কানুন মেনে কোনোমতেই ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব না। কেন্দ্র থেকে খুব বেশি চাপাচাপি করলে ঘরে বসে পকেট কমিটি তৈরি করে পাঠাতে হবে।
রাঙামাটি জেলা বিএনপি সভাপতি দীপেন দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা ও পৌরসভা মিলে রাঙ্গামাটিতে মোট ১২টি ইউনিট রয়েছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করা কঠিন হবে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে নিজ জেলা নোয়াখালী সফর করে ঢাকায় ফিরে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ায় কথা বলতে পারেননি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান।
তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, এখনো তো ৩১ দিনের মত সময় বাকি আছে। এর মধ্যে কোনো জেলা কাজ শেষ করতে না পারলে তাদের জন্য সময় বাড়ানো যায় কি না, তা ভেবে দেখা হবে। তবে আপাতত বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার নির্দেশ বলবত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৫
এজেড/জেডএম