ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

অবস্থার পরিবর্তন নেই বাম দলগুলোর

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫
অবস্থার পরিবর্তন নেই বাম দলগুলোর

ঢাকা: গতানুগতি ধারায়ই চলছে দেশের বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো। ইস্যুভিত্তিক কিছু কর্মসূচি ছাড়া গণমানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো কর্মসূচি নেই এ দলগুলোর।

কোনো কোনো দল দায় সাড়াভাবে কিছু কর্মসূচির মাধ্যমে তৎপর থাকার চেষ্টা করছে। আবার কোনো কোনো দল সরকারের অংশ হওয়ায় জাতীয় ইস্যুতে কোনো কর্মসূচি দিতে পারছে না।

দেশে বর্তমানে দৃশ্যমান বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (খালেকুজ্জামান), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (মোজাফ্ফার), সাম্যবাদী দল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটি। দলগুলোর মধ্যে কয়েকটি বর্তমানে সরকার ও ক্ষমতাসীন জোটে রয়েছে। তবে সরকারের ভেতরে বা বাইরে থাকলেও কোনো দলের অবস্থারই মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসেনি।

মূলধারার বাম রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত সিপিবি ২০০৫ সালে গঠিত ১৪ দলীয় জোটে না গিয়ে স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে যায়। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে এ জোটে না গেলেও গত এক দশকে দলটির দৃশ্যমান তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে চলার রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে থাকলেও দলটি গণমুখী হতে পারেনি। এটা পার্টির এক ধরণের ব্যর্থতা বলে কর্মীদের অভিযোগ।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে নিজস্ব কর্মসূচির পাশাপাশি গত কয়েক বছর বাসদের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি। পার্টির নিজস্ব কর্মসূচি কেন্দ্রীয়ভাবে পালন করা হলেও অধিকাংশ জেলায় তা পালিত হয় না বলে জানা গেছে। এর জন্য কেন্দ্রের জোরালো তত্ত্বাবধান নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় পার্টির কমিটি রয়েছে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ। এছাড়া অধিকাংশ উপজেলায়ই দলটির কমিটি, পার্টি সংগঠন ও গণসংগঠন রয়েছে।

সিপিবির সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দ আবু জাফর আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পার্টির অগ্রগতি নেই এটা বলা যাবে না। গত ৫/৬ মাস আমরা পার্টি গোছানোর কাজ করেছি। নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছি। কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সফর করছেন। পার্টির গণসংগঠনগুলোও আন্দোন কর্মসূচির মধ্যে আছে। আমরা আত্মসন্তুষ্টিতে নেই। তবে এক জায়গায় দাঁড়িয়েও নেই।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। ক্ষমতাসীন জোটে থেকেও এ দলটির সাংগঠনিক অগ্রগতি নেই বলে পার্টির নেতাকর্মীরা মনে করেন। বরং ১৪ দলের থাকা, না থাকার বিতর্কে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিন দফায় নেতাকর্মীরা দল ছেড়েছেন। মাঝেমধ্যে জোটগতভাবে গতানুগতিক কিছু কর্মসূচি ছাড়া দলটির নিজস্ব তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। সরকারের কোনো কোনো বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত থাকলেও সরকারে থাকায় ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিও দিতে পারছে না তারা। পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সরকারের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

৬৪ জেলার মধ্যে ৫২টিতে ওয়ার্কার্স পার্টির কমিটি রয়েছে বলে পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক জানান। তবে এর মধ্যে ৭/৮টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই বলে জানা গেছে। পার্টির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবেই দলীয় কর্মকাণ্ড সেভাবে হচ্ছে না। তবে আমরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলছি না, কর্মসূচি পালন করছি না, তা নয়। পার্টির অগ্রগতি যেটুকু হওয়ার কথা ছিলো, নানা বিভ্রান্তির কারণে সেটা হয়নি।

একই অবস্থা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদেরও। এ দলটিও ক্ষমতাসীন জোটে রয়েছে। দলটিরও নিজস্ব তেমন কোনো তৎপরতা বা কর্মসূচি নেই। গত ১০ বছরে দলের তেমন কোনো অগ্রগতিও হয়নি বলে পার্টি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। জাতীয় ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির দেওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকলেও সরকারে থাকায় সেটা করতে পারছে। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সরকারের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি এ দলটি কয়েকটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য জাসদকে দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগের দুই সিনিয়র নেতা। এছাড়া দলের ভেতরেও আদর্শ এবং দলের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে খোদ সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে। এসব বিষয় নিয়ে দলে অস্বস্তিকর অবস্থা চলছে।

৬৪ জেলার মধ্যে ৫০টি জেলায় জাসদের কমিটি আছে বলে দলের সাধারণ সম্পাদক শরিফ নুরুল আম্বিয়া জানান। এর মধ্যে বেশ কিছু জেলায় রয়েছে আহ্বায়ক কমিটি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ১৪ দলের পাশাপাশি আমরা মাঝেমধ্যে আমাদের পার্টির নিজস্ব কিছু কর্মসূচিও পালন করছি।

বাসদ’র (খালেকুজ্জামান) অবস্থাও ভালো নেই। বাসদও ১৪ দলের বাইরে রয়েছে। গতানুগতিক কিছু কর্মসূচির মধ্য দিয়েই চলছে এ দলটি। গত কয়েক বছর ধরে সিপিবি’র সঙ্গে জাতীয় ইস্যুভিত্তিক যৌথ কর্মসূচি পালন করে আসছে। দেড়-দুই বছর আগে দলটি আরেক দফা ভাঙনের শিকার হয়। বাসদ ভেঙে বাসদ (মার্কসবাদী) নামে আরেক দলের জন্ম হয়েছে। ৬৪ জেলার মধ্যে ৪০টি জেলায় বাসদের কমিটি আছে বলে দলটির আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান ভুঁইয়া জানান।

বাসদের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পার্টির নিজস্ব কর্মসূচি আছে। আবার সিপিবির সঙ্গে যৌথ কর্মসূচিও পালন করছি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি যে সব জেলায় আমাদের পার্টি ও গণসংগঠন আছে, সে সব জেলায় কর্মসূচি পালন করা হয়। আমাদের দেশে বাম রাজনীতি বিভিন্ন সময় অগ্রসর হয়েছে, আবার বিভিন্ন সময় হোঁচট খেয়েছে। এখন বলতে গেলে বাম রাজনীতির পুনর্গঠনের কাজ চলছে। আগামী ৪/৫ বছরের মধ্যে বাম রাজনীতি দৃশ্যমান ও জনগণের আস্থায় আসবে।

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ’র (মোজাফ্ফার) সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ জেলায় ন্যাপের সংগঠন নিষ্ক্রীয় বলে জানা গেছে। দলটির তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। কেন্দ্রীয়ভাবেও দলটি অনেকটাই নিষ্ক্রীয়। ন্যাপও ১৪ দলে রয়েছে।

সাম্যবাদী দলের ৩/৪টি জেলায় কমিটি রয়েছে বলে জানা গেছে। নিজস্ব কোনো কর্মকাণ্ড নেই। ১৪ দলে আছে এ দলটিও। মহাজোট সরকারে এ দলের সাধারণ সম্পাদক দিলিপ বড়ুয়া মন্ত্রীও ছিলেন।

১৪ দলের আরেক শরিক কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসিত বরণ রায় জানান, দু’টি জেলায় তাদের পার্টির কমিটি আছে।

এদিকে ছোট ছোট কয়েকটি বামপন্থি দলের সমন্বয়ে বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা নামে একটি জোট আছে। এ মোর্চায় দল রয়েছে ৮টি। এ দলগুলো হলো- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, শ্রমিক-কৃষক সমাজবাদী দল, বাসদ (মাহাবুব) সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণসংহতি আন্দোলন। এদের অর্ধিকাংশই নাম সর্বস্ব। ঢাকার বাইরে জোটের কোনো অস্তিত্ব নেই। ঢাকায় জোট কেন্দ্রিক কিছু তৎপরতা ছাড়া কোনো জেলায় এদের নিজস্ব সংগঠন বা তৎপরতা নেই। ঢাকায়ও এ দলগুলোর আলাদাভাবে নিজস্ব কোনো কর্মসূচি নেই বললেই চলে। দু’য়েকটি দল মাঝেমধ্যে কিছু কর্মসূচি পালন করে থাকে। তাছাড়া জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিবৃতি এবং প্রেসক্লাবভিত্তিক (সামনের রাস্তায়) কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ এ জোটের তৎপরতা।

গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার প্রধান শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, তাদের পার্টির ৩২টি জেলা কমিটি আছে। দলের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, জাতীয় বড় বড় ইস্যুগুলোতে আমরা জোটগতভাবে কর্মসূচি পালন করি। তাছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের পার্টি ও গণসংগঠনের নিজস্ব কর্মসূচি থাকে। যে সব জেলায় আমাদের সংগঠন আছে সে সব জেলায়ও কর্মসূচি পালিত হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫
এসকে/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।