ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু নেতা-কর্মীর কর্মকাণ্ডে বার বার সমালোচনার মুখে পড়ছে সরকার। কোনো কোনো ঘটনায় সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হচ্ছে।
দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বাংলানিউজকে জানান, সরকার অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ-বিদেশে প্রশংসিতও হচ্ছে। কিন্তু দল ও সহযোগী সংগঠনের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীর অভ্যন্তরীণ কোন্দল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে- যা দলের জন্য বিব্রতকর। গত আগস্টেও এ ধরনের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
মানবাধিককার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের (আসক) এক পর্যালোচনা রিপোর্টে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬ বছর ৭ মাসে দলে ১ হাজার ২৭৮টির মতো অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১৯৩ জন ও আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৯১ জন।
দলের নীতি-নির্ধারকদের মতে, গত সাড়ে ৬ বছরে সরকার অনেক উন্নয়ন কাজ করেছে। অনেক উন্নয়ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে যেগুলো বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আর এই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মানুষ সুফল পাচ্ছে। বাংলাদেশকে অনেকে উন্নয়নের রোল মডেল বলছে। কিন্তু দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীর অপকাণ্ডে সুদূরপ্রসারি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
আইন ও শালিস কেন্দ্রের ওই রিপোর্ট পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মাসে গড়ে ১৬টি সহিংস ঘটনা ঘটছে। এতে নিহত হচ্ছেন দুই থেকে তিনজন এবং আহত হচ্ছেন গড়ে ২শ’ জন। চলতি বছর আগস্ট মাসেও আওয়ামী লীগ ও এর সহেযাগী সংগঠনগুলোর মধ্যে ১০টি অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।
এসব অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মূল কারণ হলো- দলের কোনো কোনো এমপি, নেতা ও সহযোগী সংগঠনের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। রয়েছে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনাও। একটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি ঘটনা ঘটছে। অভ্যন্তরীণ ঘটনা ছাড়াও বড় বড় অপকর্মেও দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মী জড়িয়ে পড়ছেন।
গত বছর নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা সরকার ও আওয়ামী লীগকে তুমুল সমালোচনায় ফেলে দেয়। আরেক সমালোচনার জন্ম হয় সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি পিনু খানের ছেলে রাজধানীতে দুই শ্রমিককে গুলি করে হত্যার পর। এই হত্যাকাণ্ডে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল।
দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলনিউজকে বলেন, যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের কাছে জনগণের প্রত্যাশা বেশি থাকে। দলের কেউ অন্যায় করলে সরকার সমালোচিত হয়। এগুলো আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। তবে অপরাধীকে সরকার ছাড় দিচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, দল টানা দুই বার ক্ষমতায় আছে। এতে অনেকেই প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। আবার অনুপ্রবেশকারীরাও ঢুকে পড়েছে দলে। এরা নানা ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে। এতে অনেক সময় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ইতোমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঢালাওভাবে কাউকে দলে না নেওয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫
এসকে/এমজেএফ/জেডএম