ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

অস্বস্তিতে বিএনপি!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
অস্বস্তিতে বিএনপি!

ঢাকা: আটঁ-ঘাট বেঁধে পৌরসভা নির্বাচনে নেমে অপ্রত্যাশিত ভরাডুবি এবং নির্বাচনের পরপরই জোটের তৃতীয় বৃহৎ শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোট আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি।
 
দলটির নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে, সেমিনার, আলোচনা সভা প্রেস ব্রিফিংয়ে নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য ক্ষমতাসীনদের ‘কারচুপি’ ও জোট ভাঙার জন্য আওয়ামী লীগের ‘ষড়যন্ত্র’-কে দায়ী করলেও ভেতরে ভেতরে নিজেদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সাংগঠনিক দুর্বলতা খতিয়ে দেখছেন।


 
জোট শরিকদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল নেতাদের ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ বক্তব্য ও ‍অবমূল্যায়নের বিষয়টিও অস্বস্তিতে ফেলেছে বিএনপিকে।
 
দলটির মধ্যম সারির বেশ কয়েকজন সক্রিয় নেতা ও ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
 
সূত্রমতে, জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধের ‘তকমা’ লাগিয়ে রাজনীতিতে বিশেষ সুবিধা পেয়ে আসা বিএনপি পৌরসভা নির্বাচনে জোটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম দল জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় আসতে পারেনি।
 
ফলে ৫০টি পৌরসভায় আলাদা প্রার্থী দিয়ে বিএনপির নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ বদলে দেয় জামায়াত। ইসলামী ঐক্যজোটও বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়া ও নরসিংদীতে আলাদা প্রার্থী দিয়ে জানিয়ে দেয়-তারা আর বিএনপির সঙ্গে নেই।
 
এমন পরিস্থিতিতে ৭ বছর পর নৌকা-ধানের শীষের ভোটযুদ্ধে অভাবনীয় ভরাডুবির পর নির্বাচনী ‘অব্যাবস্থপনা’ ও ‘কারচুপি’র বিষয়টি বার বার সামনে আনার চেষ্টা করলেও শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি ও নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতাও অস্বস্তিতে ফেলেছে বিএনপিকে।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বি এনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, অস্বস্তি কেবল বিএনপিতে না, গণতন্ত্রহীন পরিবেশে গোটা জাতিই আজ অস্বস্তিতে আছে। তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পুরো নির্বাচন ব্যাবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এখন আবার জোট ও জোটে থাকা ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে ভাঙার মিশনে নেমেছে। এটা কারো জন্যই স্বস্তিদায়ক নয়।
 
জানা গেছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পৌরসভা নির্বাচনের ভরাডুবি নিয়ে যখন আত্মমূল্যায়ন ও বিশ্লেষণে ব্যাস্ত ঠিক সেই সময় জোটের তৃতীয় বৃহৎ শরিক দল  ইসলামী ঐক্যজোটের ২০ দল ত্যাগের ঘোষণা বিএনপির অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে দেয়।
 
কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক রাজনৈতিক এ সংগঠনটি সব বিচারেই ২০ দলীয় জোটের তৃতীয় বৃহৎ শক্তি। সারা দেশে হাজার হাজার কওমী মাদ্রাসার লাখ লাখ ছাত্র-শিক্ষক হচ্ছেন এর শক্তির উৎস।
 
বিশ্লেষকদের মতে, ‘‘ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী’’ স্লোগানধারী বিএনপি বরাবরই ইসলামী ঐক্যজোটের কল্যাণে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের ভোট ও সমর্থন পেয়ে থাকে।
 
কিন্তু ২০ দলীয় জোট থেকে ইসলামী ঐক্যজোট বেরিয়ে গিয়ে পরবর্তী নির্বাচনে ৩শ’ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণায় সেই ভোট ও সমর্থন থেকে বঞ্চিত হতে হবে বিএনপিকে।
 
তাদের মতে, এককভাবে ইসলামী ঐক্যজোট একটি আসন না পেলেও বিএনপির ভোট ব্যাংকে হানা দেওয়ার ক্ষমতা তাদের আছে। তাছাড়া  ঢাকা ও ঢাকার বাইরে খালেদা জিয়ার সভা-সমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতির মাধ্যমে জনসভাকে সফল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতো ইসলামী ঐক্যজোট। এখন থেকে সেই সমর্থনটা আর বিএনপি পাবে না।
 
অবশ্য বিষয়টি সেভাবে দেখতে রাজি নয় বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির সঙ্গে না থাকলেও ভোটের হিসাব বদলাবে না। জনগণের ‘বিপুল’ ও ‘ব্যাপক’ সমর্থনও বিএনপির পক্ষে থাকবে।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার মানসিকতা থেকে জোট গঠন করা হয়েছিল। সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ড ও গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠাই ছিল এর লক্ষ্য। কেবল ভোট বা জনসর্মন বাড়ানোর জন্য জোট গঠন হয়নি। তাই ভোট বা জনসমর্থন কমা-বাড়ার হিসাব দিয়ে বিষয়টিকে বিচার করা যাবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
এজেড/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।