ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

রাজনৈতিক নেতাদের বর্ষবরণ

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৭
রাজনৈতিক নেতাদের বর্ষবরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

ঢাকা: রাজনীতি তো মানুষের জন্যই। তাই নির্দিষ্ট একটি ভূ-খণ্ডের বেশিরভাগ মানুষ যে কৃষ্টি, সংস্কৃতি, নীতি, আদর্শ ও সংস্কারে বিশ্বাস করে রাজনৈতিক নেতাদেরও সেগুলো বিশ্বাস করতে হয়; মেনে নিতে হয়; মনেও নিতে হয়।

সঙ্গত কারণেই ডান, বাম, মধ্য-সবপন্থার রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকরা আবাহমান বাংলার সব চেয়ে বড় উৎসব বাংলা নববর্ষকে মেনেও নিয়েছেন। বোধ করি মনেও নিয়েছেন।

এই মেনে নেওয়া ও মনে নেওয়ার বিষয়টি উৎসবে তাদের অংশগ্রহণ থেকেই বোঝা যায়!
 
প্রথম ধরে নেওয়া যাক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদযাপনের বিষয়টি। গণতন্ত্র উদ্ধারে আশির দশকে এই দুই নেত্রী এক সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন। তখন তাদের দু’জনেরই প্রতিপক্ষ ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এখন তারা নিজেরাই একে অপরের কঠিন প্রতিপক্ষ।
 
কিন্তু নববর্ষ এলেই দুই নেত্রী বেমালুম ভুলে যান রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। মনে হয় খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা কার্ডটি সবার আগে যায় শেখ হাসিনার কাছে। শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা কার্ড সবারে আগে আসে খালেদা জিয়ার কাছে। গ্রহণ বা বর্জন এখানে ‍মুখ্য নয়, দু’জন যে দু’জনকে হৃদয় মোথিতভাবে শুভচ্ছোয় সিক্ত করছেন সেটাই বড় কথা।
 
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনার পক্ষে জনতার কাতারে মিশে গিয়ে বৈশাখ পালন এখন দুরুহ ব্যাপার। তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং প্রোটোকল দিতে গিয়ে হয়তো লাখ লাখ লোকের বৈশাখী আনন্দে ভাটার টান পড়বে। সে কারণে উন্মুক্ত আয়োজন শরিক হতে পারেন না শেখ হাসিনা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
তবে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনের দরজা পহেলা বৈশাখের দিন সবার জন্যই থাকে উন্মুক্ত। সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। বাংলা খাবারে সবাইকে আপ্যায়ন করেন। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। কারণ, এ কথা তো সবারই জানা- বাঙালির কৃষ্টি, সংস্কৃতি, নীতি, আদর্শ ও সংস্কার শতভাগ ধারণ করেই তিনি আজ ‘শেখ হাসিনা হয়েছেন। ’ বাঙালি সংস্কৃতিকে তার চেয়ে বেশি ধারণ করে কে?
 
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একটু রাশভারি। পোশাকে-আশাকে, আচার-আচরণে, চলা-ফেরায় সব সময় রিজার্ভ থাকার চেষ্টা করেন। ধরে রাখেন আভিজাত্য! বাঙালিয়ানা তাকে খুব একটা স্পর্শ করে না-এমন ধারণা সব মহলে।
 
কিন্তু গত কয়েক বছর কঠিন বাস্তবতার মধ্যে থেকে পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে তিনিও প্রমাণ করেছেন, ‘আমি তোমাদেরই লোক’। আমিও পারি সবার সঙ্গে মিলে-মিশে একাকার হয়ে থাকতে!’
 হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, হেফাজতকাণ্ড, গণজাগরণ মঞ্চ, জাতীয় নির্বাচন-সব কিছু মিলে ২০১৩ সালে যখন দেশের টাল-মাটাল অবস্থা। প্রতিটা রাজনৈতিক দল যখন অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেই রকমক পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁতে বোনা পাটের রঙিন শাড়ি পরে জাসাসের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
 
প্রমাণ করেছিলেন বাঙালি সংস্কৃতিকে ধারণ করেই তিনি হয়ে উঠেছেন কোটি বাঙালির নেত্রী। এবারও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাসাস আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হাজির হচ্ছেন খালেদা জিয়া।
 
বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতিতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নি:সন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। রাজনৈতিক সত্ত্বার বাইরে আরেকটি আলাদা সত্ত্বা তিনি ধারণ করেন-সেটি তাঁর কবি সত্ত্বা। বৈশাখ এলে বর্ষীয়াণ এই রাজনীতিক পোশাকে, আশাকে, মন ও মননে শতভাগ বাঙালি হয়ে ওঠেন। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের উৎসব আয়োজনে তাকে কবিতাও পড়তে হয়!
 
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা আছেন, যাদের পোশাক-আশাক, কথা-বার্তা ও জীবনযাপনে বৈশাখী ছোঁয়া লেগেই থাকে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এদের অন্যতম।
 
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসেছেন সাংস্কৃতিক বলয় থেকে। এক সময় ভালো আবৃত্তি করতেন! থিয়েটারের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিলো। সঙ্গত কারণেই বাঙালিয়ানা তাঁর রক্তে মিশে গেছে। তাই যে কোনো ধরনের পালা-পার্বণ, উৎসব আয়োজন তাঁকে একটু বেশিই ছুঁয়ে যায়। নয়াপল্টনে জাসাসের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার সঙ্গী তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৭
এজেড/ওএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।