দেশটির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘বেশ কতগুলো ঘটনা ছিলো যেটা এখন বিস্তারিত বলবো না। যেমন আমাদের একেবারেই প্রতিবেশী, একটা পর্যায়ে এমন একটা ভাব দেখালো যেন আমাদের সঙ্গে যুদ্ধই বেঁধে যাবে।
জাতিসংঘ অধিবেশন যোগদান উপলক্ষে তিন সপ্তাহের সফর শেষে শনিবার (০৭ অক্টোবর) সকালে দেশে ফিরলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক গণসংবর্ধণায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনাল ও সড়কে হাজার হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধণায় অংশ নেন।
সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি আমাদের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশ সবাইকে সর্তক করলাম- কোনো ভাবেই যাতে তারা কোনো রকম উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়। যতক্ষণ আমি নির্দেশ না দেবো, ততোক্ষণ…। ’
‘এ রকম একটা ঘটনা ঘটাতে চাইবে, অনেকে আছে এখানে নানা রকমের উস্কানি দিবে, এমন একটা অবস্থা তৈরি করতে চাইবে যেটা হয়তো তখন অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরাবে। সেদিকে আমরা খুবই সর্তক ছিলাম। ’
সেনাবাহিনী, বডার গার্ড, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, দলের নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে সর্তক করার পাশাপাশি আগাম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ওখানে (আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য) ছিলাম। কিন্তু প্রতিনিয়তই যোগাযোগ ছিল। বিদেশে থেকে অফিসের কাজও বাদ দিইনি। এখন তো ডিজিটাল দেশ, অনলাইনে ফাইল চলে যেতো সে কাজ করতাম। ’
আরও পড়ুন>>
** ওবায়দুল কাদের ছবি পাঠালো, তা দেখে দুই বোন কেঁদেছি
সর্বশেষ ২৪ আগস্ট মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর থেকে দেশটির নাগরিকরা (রোহিঙ্গা) স্রোতের মতো বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। জাতিসংঘের হিসেবে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে ৭ লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
২৪ আগস্টে দেশটির রাখাইন রাজ্যে তল্লাশি চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার পর ২৫ আগস্ট থেকে সেখানে দমন অভিযান চালায় মিয়ানমার বাহিনী। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় মগরা।
বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড, লুট, ধর্ষণ ও হত্যার পর সর্বস্ব হারিয়ে ওইদিন থেকেই পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার মিয়ানমারের বিমান বাহিনী বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘণ করে করে।
তবে এ উস্কানিতে না জড়িয়ে কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে ও সবার দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে রোহিঙ্গাদের আরও বেশি হত্যা এবং নিপীড়ন করতে মিয়ানমার উস্কানি দিয়ে থাকতে পারে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের আরও শক্তি যোগায়।
আর্ন্তজাতিক চাপের পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কট ধীরে ধীরে সমাধান করা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য, মানবতার জন্য। বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যে কোনো মানুষের দায়িত্ব। ’
‘বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে চ্যালেঞ্জটা নিয়েছে। আমি বলেছিলাম প্রয়োজনে আমরা এক বেলা খাবো আর এক বেলার খাবার ওদের (রোহিঙ্গা) ভাগ করে দেবো। ’
শেখ হাসিনা বলেন, এটার শুরু ১৯৭৮ সাল থেকেই। কিন্তু এবার প্রথমে ২০১৬ সালে, আবার ২০১৭ তেও! সত্যি কথা বলতে কি প্রথমে আমরা একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। এতো মানুষ স্রোতের মতো চলে আসছে।
বিশ্বজুড়ে শরণার্থী সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর বহু দেশে এ ধরনের সঙ্কট ঘটছে। আমরা দেখেছি বহু দেশ দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। পাশে দাঁড়িয়েছে। ’
এ সময় একাত্তরে হানাদারদের নির্যাতন ও প্রায় ১ কোটি মানুষের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। স্মৃতিচারণ করেন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বেঁচে যাওয়া দুই বোনের দেশের বাইরে উদ্বাস্তুর মতো জীবন-যাপনের কথা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৭
এমইউএম/এমএ