সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় চান্দিনা উপজেলা পরিষদের সামনে ও সাড়ে ৪টায় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দু’দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
আহতরা চান্দিনা মোহনা মেডিকেল সেন্টার, চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চান্দিনা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক মো. দুলাল হোসেন ও পৌর যুবলীগ সভাপতি আলহাজ্ব মো. মনির খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘শনিবার (২৫ নভেম্বর) প্রাধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উপজেলার নবাবপুরে আনন্দ র্যালি বের করে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় ওই র্যালি বের করা হয়।
এসময় উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মো. গিয়াস উদ্দিন ও যুবলীগ নেতা বাকীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের র্যালিতে হামলা চালিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন ছিড়ে ফেলে দেয়। ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের অনুসারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে চান্দিনা পালকি সিনেমা হল এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি চান্দিনা বাজার হয়ে উপজেলা পরিষদ গেট এলাকায় পৌঁছুলে সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এমপি গ্রুপের নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলা চালায়। ’
স্থানীয়রা জানান- উপজেলা পরিষদ গেট এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠি নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক মো. দুলাল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা মনু মিয়া প্রধান, অমল, ছাত্রলীগ নেতা সোহেল, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অন্তত ১২ জন আহত হন।
সংঘর্ষের পর ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের সমর্থকরা মহাসড়ক অবরোধ করে। এক পর্যায়ে তারা মহাসড়কের উপর কিছুক্ষণ অবস্থান নেয়। এদিকে সংঘর্ষ ও সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের সমর্থকরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভার প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে আলী আশরাফ এমপির সমর্থকরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে ডা. প্রাণ গোপালের সমর্থকদের মারধর করে। এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিরুল খন্দকার রবি, সহ-সভাপতি শরীফুল ইসলাম, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহেদী হাসান, আর.এ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগ আহবায়ক মো. জামিল, পৌর ছাত্রলীগ নেতা আরমান হোসেন, শ্যামলসহ আরও অন্তত ৯ জন গুরুতর আহত হন।
এ বিষয়ে ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, আমি এলাকায় নেই। আমি ঢাকার চেম্বারে। আমি শুনেছি ২৫ নভেম্বর চান্দিনা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উপজেলার নবাবপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দ র্যা লি বের করে। তখন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার হচ্ছিলো। ওই র্যালিটি আলী আশরাফ ভাইয়ের এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলো। তখন আশরাফ ভাইয়ের ভায়রা যুবলীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে ওই র্যালিতে হামলা করে ব্যানার-ফেস্টুন ছিড়ে ফেলে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপজেলা পরিষদ গেট এলাকায় পৌঁছুলে সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এমপির নেতৃত্বে আবার হামলা চালানো হয় । এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভা করতে গেলে সেখানে আলী আশরাফ ভাইয়ের লোকজন আবারো হামলা চালায়। পৌর মেয়র মফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়।
এমপি আলী আশরাফের ছেলে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনতাকিম আশরাফ টিটু জানান, আমি ঢাকায় চেম্বারের বোর্ড মিটিংয়ে ছিলাম। আজকের বিষয়ে কিছু জানি না। তবে আলী আশরাফ সাহেবের (তার বাবা) নেতৃত্বে হামলার বিষয়টি অবান্তর। উনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এমন কিছু ঘটেনি। তার দ্বারা কেউ হয়রানির শিকার হননি। যদি আজ ডাঃ প্রাণ গোপালের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়ে থাকে,তা নিন্দনীয় ঘটনা। আমি নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী মাহমুদ জানান, কয়েকজন পুলিশের উপর ইট পড়েছে, তবে কেউ গুরুতর আহত নন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
বিএস