ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নদীর উপর সাঁকো তৈরি করলো ছাত্রলীগ

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৯
নদীর উপর সাঁকো তৈরি করলো ছাত্রলীগ

যশোর: যশোরের কেশবপুর উপজেলা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের একটি নিভৃত গ্রাম কাশিমপুর। এ গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ভদ্রা (বুড়িভদ্রা) নদীর ওপারে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রাম। ফলে উভয় জেলার সীমান্ত গ্রাম হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন কোনো ছোঁয়া পড়েনি গ্রামটিতে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, দেশ স্বাধীনের পর থেকেই যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অবহেলিত থেকে গেছে গ্রামটি।  

কাশিমপুর গ্রামবাসীকে নিজ উপজেলা কেশবপুর শহরে আসতে হলে পাড়ি দিতে হয় ২২ কিলোমিটার।

অথচ দুই টাকার বিনিময়ে নৌকায় ৬০ মিটার প্রস্থের ভদ্রা নদী পার হয়ে আট কিলোমিটার দূরেই খুলনার ডুমুরিয়া। ফলে প্রতিদিনই এ গ্রামের লোকজন বহু কষ্ট শিকার করে ভদ্রা নদী পার হয়ে ডুমুরিয়া হয়ে যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া-আসা করেন। তবে, ভদ্রা নদী পার হয়ে স্কুল-কলেজে যাওয়া শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে কষ্টের মুখে পড়ে।  

যুগ যুগ ধরে ৬০ মিটারের ভদ্রা নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও কখনো তাদের দাবি সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি। সম্প্রতি এ দুর্ভোগের চিত্র স্থানীয়রা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরলে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

এতে দৃষ্টিগোচর হয় যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খান মুকুলসহ ছাত্রলীগ নেতাদের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রওশন ইকবাল শাহীর নির্দেশে কেশবপুরের ছাত্রলীগ নেতারা কাশিমপুর গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে ভদ্রা নদীর উপর সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সম্প্রতি ভদ্রা নদীর উপর সাঁকো নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জেলা নেতাদের নির্দেশে এতে হাবিবুর রহমান মুকুল আর্থিক সাহায্য করেছেন।

রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা, ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান খান মুকুল, রায়হান কবীর, মো. নাসিমসহ অন্য নেতারা সাঁকো পরিদর্শন এবং সহায়তার টাকা দিতে কাশিমপুর গ্রামে পৌঁছালে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এমনকি নতুন সাঁকো পেয়ে শিক্ষার্থীরা অন্যরকম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।

উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বাংলানিউজকে বলেন, সবসময় বহু কষ্টে নদী পাড়ি দিয়ে স্কুলে গেছি, কোনো কোনো দিন পড়ে গিয়ে ভিজে গেছি। স্কুলে না যেতে পেরে বাড়ি ফিরেছি, আবার গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস-পরীক্ষা থাকলে ভেজা কাপড়েই স্কুলে গেছি। এমতাবস্থায় এ সাঁকো আমাদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। তবে বাঁশ-কাঠের তৈরি সাঁকো দুই-চার বছরের মধ্যে নষ্টের আশঙ্কা প্রকাশ করে অবিলম্বে এখানে স্থায়ীভাবে ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান তারা।  

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোরের কেশবপুর উপজেলার নয় নম্বর গৌরিঘোনা ইউনিয়নের নয়টি গ্রামে প্রায় ২৬ হাজার মানুষের বসবাস। উচ্চ বিদ্যালয় চারটি, মাদ্রাসা তিনটি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৩টি। ২০০১ সালের শিক্ষা জরিপ অনুযায়ী, শিক্ষার হার শতকরা ৯৪ ভাগ। চারটি হাট-বাজার ও ৫৭টি ধর্মীয় উপাসানালয় রয়েছে। তবে ইউনিয়নের মধ্যে অবহেলিত এক জনপদের নাম কাশিমপুর। কাশিমপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ভদ্রা ও হরিহর নদী। এ ভদ্রা নদী পার হলেই খুলনা জেলার শুরু।  

স্থানীয়রা বাংলানিউজকে বলেন, নদী পারাপারের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকা এক প্রকার জিম্মি দশায় অচল হওয়ার উপক্রম। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ অসুস্থ হলে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে যথাসময়ে চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত এ গ্রামের মানুষরা। এমনকি গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চা প্রসব বেদনা ওঠলে, সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিতে পারবে কি-না সেটা নিয়েও চিন্তায় থাকেন ভুক্তভোগীরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৬
ইউজি/আরবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।