ঢাকা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদরের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন (১৮ অক্টোবর)। ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শেখ রাসেল।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট দেশাদ্রোহী বর্বর ঘাতক চক্রের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারাতে হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার আদরের ছোট ছেলে ইউনিভারসিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শিশু শেখ রাসেলকেও। কিন্তু এই নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়েই যেন মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে উঠেছেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারের কালিমায় হারিয়ে যাচ্ছে ঘাতকের কালো ছায়া, আর ক্রমেই যেন দেদীপ্যমান হয়ে উঠছে শেখ রাসেলের সেই হাসিমাখা মিষ্টি মুখ। জানতে ইচ্ছে করে, আজ পরিণত বয়সে কেমন হতেন রাসেল, কেমন হতেন দেখতে!
শনিবার(১৭ অক্টোবর) রাতে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ওয়েবটিম আয়োজিত ওয়েবিনারে নিজের ছাত্রের মেধা ও কোমল মনের অকৃত্রিম প্রশংসা এভাবেই প্রকাশ করেছেন তার গৃহশিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা।
তিনি বলেছেন, 'শেখ রাসেলকে একবার যেটা শিখিয়েছি, তা সে কোনোদিন ভোলে নাই। ' একবার শেখ রাসেল অংক করাতে যে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি, সে প্রসঙ্গে গীতালি দাশগুপ্তা জানান, যখন রাসেলকে বলা হয়েছে অংকগুলো না করলে তারা(অংকগুলো) কষ্ট পাবে, তখন অংকগুলো যাতে কষ্ট না পায় তাই ঝটপট অংক করেছিল রাসেল। ' তিনি মনে করেন, একইসঙ্গে মেধা ও মননের অপূর্ব সমাহার ছিল শিশু রাসেলের কচি মনে।
শেখ রাসেলকে পড়ানোর প্রসঙ্গে গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, আমার সামনে পরীক্ষা থাকায় শেখ রাসেলকে পড়াবো না বলে আমি জানিয়ে দেই। এই কথা শুনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বললেন- ৩০ মিনিট? আমি বললাম, তাও সম্ভব না। তিনি আবার বললেন- ২০ মিনিট? আমি চুপ করে রইলাম, মানে ২০ মিনিটও সম্ভব না। তারপর তিনি আবারও বললেন- ১৫ মিনিট? তখন আমার কাছে মনে হলো, একজন মা তার ছেলের জন্য মাত্র ১৫ মিনিট সময় চাইছেন, এই সময়টুকু তো আমার দেওয়া উচিত। আমি চেঞ্জ হয়ে গেলাম।
তারপর আমি কাকিমার (বঙ্গমাতার) দিকে তাকিয়ে বললাম, এই রাস্তায় কি বাস চলে? নইলে আমি যাতায়াত করবো কীভাবে? আমার তখনো এই বোধটুকু নেই যে, আমি কাকে যাতায়াতের কথা বলছি। তখন বঙ্গমাতা বললেন- আপনি পড়াবেন? তাহলে যাতায়াতের ব্যবস্থাটুকু আমিই করবো। '
গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, শেখ রাসেল একবার বলে- আমি আর অংক করবো না! আমি প্রশ্ন করলে বলে- আমার ইচ্ছে করে না। এরপর আমি চিন্তা করলাম, কীভাবে শেখানো যায়। বললাম যে, তুমি স্কুলে চকলেট নিয়ে যাও? সে বললো- হ্যাঁ, আমি বললাম, একা একা খাও তাই না?, রাসেল বললো- নাহ, একা খাই না, বন্ধুদের দিয়ে খাই। তখন বললাম, এই যে তুমি দুইটা অংক রেখে দিলে, তারা কষ্ট পাবে না? রাসেল বললো- কেন কষ্ট পাবে? ওরা কী কথা বলতে পারে? খুব অবাক ও! আমি বললাম, এই যে আমাদের বাংলাদেশ আছে, তেমনই একটা অংকের দেশ আছে। তারা নিজেরা নিজেরা কথা বলতে পারে। কষ্ট পেয়ে যাবে। এরপর রাসেল দুটো অংক করে বলে- এখন তো আর ওরা রাগ করবে না। এখন তো আর অংকের দুঃখ নাই। '
কথাসাহিত্যিক ও শিশু একাডেমির সাবেক চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন বলেন, 'আমি তাকে স্বাধীনতার স্বপ্নের প্রতীকী শিশু হিসেবে দেখি। রাসেলের হাতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে একটি ছবি আছে, তা দেখলে আমার কাছে প্রতীকী অর্থে সে বড় হয়ে যায়। ছোট বেলা থেকেই দেশাত্ববোধ ছিল তার মাঝে। একেবারে পরিবার থেকে পাওয়া।
আরও বক্তব্য রাখেন, অভিনেতা ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহবায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ ৷
বাংলাদেশ সময় ০১১০ ঘন্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২০
এসকে/এসআইএস