ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

টরন্টোয় সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রতারণার ফাঁদে শতাধিক বাংলাদেশি

ckXck ckXdXতৌহিদ নোমান, অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১২
টরন্টোয় সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রতারণার ফাঁদে শতাধিক বাংলাদেশি

টরন্টো: দেশে টাকা পাঠাতে গিয়ে আবারো প্রতারণার শিকার হয়েছেন টরন্টোর শতাধিক বাংলাদেশি। প্রতারিতদের অভিযোগ, প্রাপকের কাছে টাকা না পাঠিয়ে প্রায় ১০ লাখ ডলার আত্মসাৎ করেছে দৌলত এন্টারপ্রাইজ নামক কথিত মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি।



এদিকে, ইতিমধ্যে কোম্পানির মালিক দৌলত খান নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন। প্রাপকদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে। প্রথম ধাপে ২৪ জনের কাছে পাঠানো উল্লিখিত চিঠিতে চার লাখ ৯৮ হাজার ৩৬৯ ডলারের দেনা দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে প্রায় একই অংকের দেনা এবং তালিকার বাইরেও অনেকের বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

টরন্টোর ভিক্টোরিয়া পার্ক ও ড্যানফোর্থের কর্নার এলাকায় দৌলত এন্টারপ্রাইজের দরজায় এখন তালা ঝুলছে। পাওনাদারদের অনেকে প্রতিদিন এখানে এসে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, গত এক বছর ধরে দৌলত খান টাকা প্রেরণকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন।

এ বিষয়ে দৌলত খান বলেন, ‘দেশে একব্যক্তি তার বিরাট অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ কারণে তিনি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা ছাড়া তার আর পথ ছিল না। ’

এদিকে, পাওনাদাররা বলছেন অন্য কথা। তারা বলেন, ‘প্রথম থেকেই দৌলত খান দুই নম্বরি ব্যবসা চালু করেন। তিনি প্রথমে সোনালী ব্যাংকের শাখা হিসেবে ব্যাংকের লোগো ব্যবহার করে নিজেকে একজন বৈধ এজেন্সি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

জানাজানি হয়ে গেলে তিনি ওই ইনবোর্ড সরিয়ে “সোনালী এক্সচেঞ্জ” নামে নয়া সাইবোর্ড লাগান। সাধারণ প্রবাসীদের বোকা বানানোর ওই অপচেষ্টায় তিনি সফল হন। মূলত এ সাইনবোর্ডের আড়ালে তিনি হুন্ডি ব্যবসা করতেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের কুখ্যাত সব চোরাকারবারীদের। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাওনাদার বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি মহাধুমধামের সঙ্গে তার ছেলের বিয়ে দেন। ’

গত এক বছর ধরে দৌলত খান প্রতারণা করে আসছেন তারপরও লোকজন তার মাধ্যমে টাকা পাঠাতে গেলো কেন এ প্রশ্ন করলে টাকা প্রেরণকারীদের একেকজন একেক ধরনের উত্তর দেন।

কেউ বলেন, তারা জানতেন না এরই মধ্যে যে দৌলত মানুষের টাকা মেরে দিচ্ছেন। কেউ বলেন, একবার প্রচার হলো দৌলত টাকা মেরে দিয়েছেন। কিন্তু তারপর তিনি যখন হজ করে ফিরে এলেন এবং কিছু মানুষের টাকা ফেরতও দিলেন তখন তার ওপর প্রবাসীদের বিশ্বাস আরও বেড়ে যায়।

জানা গেছে, প্রতারণার শিকার অনেকে অজানা ভয়ে মুখ খুলতে চান না, এদের অধিকাংশই নারী। তাদের কেউ কেউ স্বামীর অজান্তে টাকা পাঠিয়েছেন। আবার অনেকে ট্যাক্স এজেন্সির ভয়েও মুখ খুলতে চান না।

সর্বশেষ কিছু পাওনাদার পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছেন। টরন্টো নগরীর ৫৪ ডিভিশনের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ম্যাককোনাচি বিষয়টি তদারকি করছেন।

দোলতের প্রতারণার শেষ এখ‍ানেই  নয়। জানা গেছে, সোনালী মানি এক্সচেঞ্জটি বন্ধ হওয়ার কয়েক মাস আগে থেকে দৌলত খান তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বসতেন না। তার বদলে মঞ্জুরে এলাহী নামে একজনকে তিনি নিয়োগ দেন। বেশ কিছু পাওনাদার অভিযোগ করেন যে, তারা মঞ্জুরে এলাহীর কাছে টাকা দিয়েছেন। মঞ্জুর এলাহী ওই টাকা না পাঠিয়ে মেরে দিয়েছেন। কারো আংশিক, কারো পুরোটা। এ বিষয়ে মঞ্জুরে এলাহীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি স্বীকার করেন, প্রায় ৩০ হাজার ডলার তিনি মানুষের কাছ থেকে নিয়েছেন এবং এ অর্থ দৌলত খানকে তিনি দিয়েছেন। মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের টাকা পাঠানো হচ্ছে না জেনেও কেন তিনি টাকা নিতে গেলেন এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি একজন কর্মচারী মাত্র, আমার বস আমাকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আমি সেভাবেই কাজ করেছি। ’


এ প্রসঙ্গে দৌলত খানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমার বিজনেসটা বিক্রি করার জন্য এটা খোলা রাখার প্রয়োজন ছিল। সে কারণে আমি মঞ্জুরকে ওখানে বসিয়েছিলাম। বিক্রি হলে তার একটা স্থায়ী চাকরি হতো। সে ছিল সম্পূর্ণ অবৈতনিক। আমি কারো কাছ থেকে টাকা না নেওয়ার জন্য বারবার তাকে সাবধান করি। যে কারণে কোম্পনির লেটার হেড, সিল, সব বাসায় নিয়ে আসি এবং কম্পিউটারের প্রোগ্রামটা পর্যন্ত লক করে দিই। মঞ্জুর নতুন সিল বানিয়ে এবং কম্পিউটার আনলক করে অবৈধ ব্যবসা শুরু করে এবং মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়। এখন যে সব অভিযোগ আসছে তার কারণেই। তার কাছে যারা টাকা দিয়েছেন আমি তার কোনো দায়-দায়িত্ব নিতে পারি না। ’ তিনি ইতিমধ্যে মঞ্জুরের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন বলেও জানালেন।

এদিকে মঞ্জুর বলেন, ‘দৌলত খান নিজেই আমাকে বলেছেন টাকা নেওয়ার জন্য। এ টাকা দিয়ে অফিস ভাড়া, ফোন বিল দেওয়া হতো। ’

উল্লেখ্য, কানাডায় কয়েক বছর আগে জনতা এক্সচেঞ্জ এবং তারও আগে প্লাসিড নামে আরেকটি মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি বন্ধ করে মালিকরা গা ঢাকা দেয়। সে সময়ও কোম্পানি দুটোর বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল।  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।