ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

বেইলি রোডের বাহারি ইফতার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
বেইলি রোডের বাহারি ইফতার

ঢাকা: রাজধানীর পুরান ঢাকা এবং বেইলি রোড ঐতিহ্যবাহী ও বাহারি ইফতারের জন্য পরিচিত। প্রতি বছর মাহে রমজান উপলক্ষে বেইলি রোডে বসে জমজমাট ইফতারের আয়োজন।

নগরীর নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন বেইলি রোডের অভিজাত ইফতারসামগ্রী কেনার জন্য। বিগত বছরগুলোতে করোনার প্রকোপ থাকায় ইফতার আয়োজন কিছুটা ম্লান হয়ে গেলেও এবার তা ফিরে এসেছে আগের রূপে।

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য খ্যাত রাজধানীর বেইলি রোড। নাট্যকর্মীদের কারণে এলাকাটি নাটকপাড়া বলে পরিচিত। এর বাইরেও এলাকাটি আরেকটি পরিচয় পায় রোজার সময়ে। পবিত্র রমজান মাসজুড়ে বেইলি রোড পরিণত হয় ইফতার বাজারে। এই অভিজাত ইফতার বাজারের পরিধি এখন বেইলি রোড ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশেও।

শনিবার (২৫ মার্চ) বিকেলে বেইলি রোড ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ইফতারসামগ্রী কিনতে আসছেন। ছোলা-পেঁয়াজু থেকে শুরু করে মাংস-পরোটা সবই মেলে এখানে। ইফতার কিনতে মানুষজন ভিড় জমিয়েছেন বাহারি সব ইফতারের দোকানগুলোতে।



বেইলি রোডের দোকানগুলোতে বছরের অন্যান্য সময় ফাস্টফুড, পিঠা ইত্যাদি বিক্রি হলেও রমজান মাসে সাধারণত সেসব দোকানে ইফতারসামগ্রী বিক্রি হয়ে থাকে। বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় ইফতার বিকিকিনি। হরেক রকমের বাহারি সব আইটেম নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে দোকানগুলো। জাগেরি রেস্টুরেন্ট, ক্যাপিটাল ইফতার বাজার বা নবাবী ভোজের ইফতারি থাকে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে।

বেইলি রোডের ইফতার সামগ্রীর মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের চপ, কাবাব ও মাংসের নানা ধরনের খাবার। মগজ ভুনা, খাসির হালিম, খাসির গ্রিল চাপ, গরুর চাপ, লুচি, কাচ্চি বিরিয়ানি (খাসি), ফিরনি, খাসির লেগ রোস্ট, বোরহানি, চিকেন রোস্ট (আস্ত), চিকেন ফ্রাই, চিকেন সমুচা, চিকেন ললি, জালি কাবাব, শিক কাবাব, ভেজিটেবল রোল, স্প্রিং রোল, কিমার চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, বেসন চপ, ছোলা, বাসমতির জর্দা, চাটনি, পনির সমুচা, নিমক পোড়া, বুন্দিয়া, হালিম, দইবড়া, সুতি কাবাব, রেশমি কাবাব ও কিমা পরোটা এখানে খুবই জনপ্রিয়। ফাস্টফুড আইটেমের মধ্যে বার্গার, হটডগ, স্যান্ডউইচ, সমুচা, চিজ বল, চিকেন সাসলিক, পেস্ট্রি, চিকেন ফ্রাই, পিৎজা ও আইসক্রিমও মিলছে।

ক্যাপিটাল ইফতার বাজারের বিক্রয়কর্মী আরিফ মাহমুদ বলেন, আমরা প্রতিবছরই নানারকম ইফতার আইটেম বিক্রি করে থাকি। ক্রেতাদের চাহিদা বজায় রেখে এবারও ইফতারের আয়োজন করেছি। এবার আশানুরূপ ক্রেতা সমাগমও হচ্ছে।



এবার রাজধানীর বেইলি রোডের ইফতারির বাজার প্রথম রমজান থেকেই জমে উঠেছে। প্রতিদিনকার ইফতারিতে অনেকের হালিম চাই-ই চাই। রোজাদারদের কাছে বেইলি রোডের ইফতারির দোকানের হালিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া ইফতারির নানা পদের সঙ্গে জিলাপির উপস্থিতি যেন অনিবার্য। বেইলি রোডের একাধিক ইফতারির দোকানে এখন জিলাপি প্রস্তুত ও বিক্রি চলছে। ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেইলি রোডের এসব ইফতারির ক্রেতা হচ্ছেন উচ্চ ও মধ্যম আয়ের মানুষ।

এখানকার ইফতারি কিনতে পেরে ক্রেতারাও খুশি। ইফতার কিনতে আসা আরিফ হাসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে ভিকারুন নিসা স্কুল এলাকায় থাকি। এখানকার ইফতার আমার পরিবারের সদস্যদের খুবই পছন্দের। কারণ বেশির ভাগ দোকানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার তৈরি ও বিক্রি হয়। মানও ভালো। পদ অনেক থাকায় ইফতারে বৈচিত্র্যও থাকে।

তিনি বলেন, দাম আগের থেকে বেড়েছে। তব বাজারেও সবকিছুর দাম বেড়েছে। তাদেরও কিছু করার নেই।

বেইলি রোডের ইফতারের অন্যতম আকর্ষণ হলো পিঠা ঘরের পিঠা। এখানে পাটিসাপটা, তেলের পিঠা, চিতই পিঠা, পান পিঠা, পাক্কান পিঠা, ভেজানো পিঠাসহ ৪০ রকমের পিঠা মেলে। এগুলো মিলবে ৪৫ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।

ইফতারে ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি কেনেন ক্রেতারা। সুইস, স্কাইলার্ক, বারবিকিউ, নবাবী ভোজ, জলি-বি, হ্যালভেশিয়া, হকের মতো দোকানগুলো ক্রেতাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। এসব দোকানে তাই ভিড়ও থাকে বেশি। আর এই সব ইফতারগুলো আইটেমভেদে বেইলি রোডে মিলবে ৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

তবে বেইলি রোডের ইফতারির দাম নিয়ে অভিযোগও রয়েছে ক্রেতাদের। দাম কিছুটা কম রাখা হলে সবাই কিনতে পারতো বলে মনে করেন অনেকে। বেইলি রোডের ফখরুদ্দীন বিরিয়ানি থেকে ইফতার ও রাতের খাবার কিনেছেন রাসেল উদ্দিন। তিনি বলেন, ইফতারির জন্য হালিম আর রাতে খাওয়ার জন্য গরুর কাচ্চি কিনেছি। তবে দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি।



নবাব ভোজের বিক্রয় কর্মী আব্দুল হালিম জানান, ইফতারির মূল্য তালিকা তৈরি করে তারা বিভিন্ন খাবার বিক্রি করেন। মূল্য তালিকায় দেখা যায়, শাহী ছোলা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০০ টাকা দামে, পেয়াজু, বেগুনি, সবজি পাকুড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিচ ১৫ টাকা দামে। সুইট লাচ্ছি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা দামে, পেস্তা বাদামের শরবত বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দামে।

চিন চিন চাইনিজ ইফতার বাজারের স্বত্বাধিকারী ব্যরিস্টার খালেদ এরশাদ বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়াতে আমরা বাধ্য হয়েও দাম কম রাখতে পারি না। তবে আমরা চেষ্টা করছি ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার।

দুপুরের পর থেকেই বিক্রি শুরু হয়ে যায় বেইলি রোডের ইফতারের। চলে ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। পাশাপাশি বড় বড় ইফতার মাহফিলের জন্য প্যাকেট ইফতারও এসব দোকান থেকে সংগ্রহ করা হয়। অনেক তরুণও এখানকার ফুটপাথে বসে ইফতার করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।