ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

আজ পাঠ পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়-স্বজন, গরিব-মিসকিন এবং অভিবাসী প্রসঙ্গে

মুফতি মাহফুযূল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
আজ পাঠ পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়-স্বজন, গরিব-মিসকিন এবং অভিবাসী প্রসঙ্গে

আজ অনুষ্ঠিত হবে ১২তম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে ১৫তম পারা তেলাওয়াত করা হবে।

তেলাওয়াতে পূর্ণ বনি ইসরাইল সূরা তেলাওয়াতের পর সূরায়ে কাহাফের ৭৪নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে।

সূরা বনি ইসরাইল
সূরা বনি ইসরাইল কোরআনে কারিমের ১৭তম সূরা। এ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ১১১টি। সূরা বনি ইসরাইলের উল্লেখযোগ্য বিষয়াবলী হলো-

১নং আয়াতে মেরাজের ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বন্ধু নবী মুহাম্মদ (সা.)কে স্বশরীরে বাইতুল্লাহ শরিফ থেকে আল্লাহর আরশে নিয়ে যান। আবার আরশ থেকে মক্কায় পৌঁছে দেন। এর মাঝের সময় জান্নাত, জাহান্নামসহ আল্লাহর কুদরতের অনেক কিছুই তাকে চাক্ষুস দেখানো হয়। এ আসমানি সফর ইসলামে মেরাজ নামে পরিচিত। এ সৌভাগ্য মানবজাতির মাঝে শুধুমাত্র নবী করিম (সা.)-এর ভাগ্যে জোটেছিল।

মেরাজের সফরের দু’টি ধাপ। প্রথম ধাপ মক্কার বাইতুল্লাহ শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বাইতুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে আরশ পর্যন্ত। পবিত্র কোরআনে কারিমের এ আয়াতে সফরের প্রথম ধাপের কথা স্পষ্ট করে আর সফরের দ্বিতীয় ধাপের কথা ইঙ্গিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

৪-৮নং আয়াতের বর্ণনা মতে বনি ইসরাইলরা পৃথিবীতে দু’বার জোর-জুলুম করবে। শাস্তি হিসেবে প্রত্যেকবার শত্রুকে তাদের ওপর বিজয়ী করা হবে। শত্রুরা তাদের জনপদ ধ্বংস করবে, তাদের মসজিদ ধ্বংস করবে। শত্রুর শোষণে তারা যখন কিছুটা ভদ্র ও নীতিবান হবে তখন আবার তাদের বিজয়ী করা হবে।

অনেক মুফাসসিরের মতে তাদের দুই মহা দুর্যোগ দ্বারা উদ্দেশ্য ইতিহাসের দু’টি ধ্বংস লীলা। প্রথমটি সংঘটিত হয়েছিল মসজিদে আকসা প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪১৫ বছর পর। তখন তাদের নবী ছিলেন হজরত আরমিয়া (আ.)। বাবেল রাজা বুখতে নসর আগুন দিয়ে গোটা শহর ও মসজিদ ধ্বংস করে। অগণিত ইহুদি নিহত হয়, তাদের সকল সহায় সম্পদ লুণ্ঠন করা হয়। দ্বিতীয় ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল হজরত ঈসা (আ.)-এর আকাশে আরোহণের প্রায় ৪০ বছর পর। রোমান রাজা তাইতাস তাদের গোটা শহর ও মসজিদকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে।

আবার অনেক মুফাসসিরে মতে দু’বার দ্বারা নির্দিষ্ট দু’টি ঘটনা উদ্দেশ্য না। দু’বার জোর-জুলুম দ্বারা উদ্দেশ্য দু’টি শরিয়তের অবাধ্যতা। হজরত ঈসা (আ.)-এর শরিয়ত এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শরিয়তের অবাধ্যতা। প্রত্যেক শরিয়তের আমলে যখনই তারা সীমালংঘন করবে তখন শত্রুকে তাদের ওপর বিজয়ী করা হবে। তারা পৃথিবীতে ধিকৃত ও লাঞ্ছিত অবস্থায় থাকবে।

১৪নং আয়াতে আছে, (কিয়ামতের দিন বান্দাকে বলা হবে,) তোমার আমলনামা তুমি নিজেই পড়। আজ তোমার হিসাবের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট।

১৮-১৯নং আয়াতে আছে, যারা শুধুই দুনিয়া চায় আমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা যতটুকু ইচ্ছা দুনিয়া দিব। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রাখব জাহান্নাম। সে দুর্দশাগ্রস্থ ও বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে উপনীত হবে। আর যে সকল মুমিন আখেরাত প্রার্থনা করবে এবং আখেরাতের সুখের জন্য চেষ্টা করবে আমি তাদের চেষ্টাকে স্বার্থক করব।

২৩-২৪নং আয়াতে পিতা-মাতার আনুগত্য করা ও তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করাকে ফরজ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত কয়েকটি আবশ্যকীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যথা- তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে, তারা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের আচরণে বা কথায় কোনো বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না। এমনকি উহ্ শব্দটিও বলা যাবে না। তাদের ধমক দেয়া যাবে না। তাদের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলতে হবে। তাদের সঙ্গে ভক্তি ও বিনয়পূর্ণ আচরণ করতে হবে। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। দোয়ার একটি ভাষা আল্লাহতায়ালা নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন। সেটা হলো- ‘রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা। ’ হে প্রভু! আপনি তাদের প্রতি সদয় হোন- যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন করেছে।

এ আয়াতে সন্তানকে আদেশ করা হয়েছে পিতা-মাতার জন্য নিজে দোয়া করতে। কিন্তু আমাদের সমাজের অনেক সন্তান পিতা-মাতার জন্য নিজে দোয়া না করে দোয়া ভাড়া করে। অপরকে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে দোয়া করায়। এটা ইসলামের বিধান ও নিয়ম নয়। বরং মনগড়া প্রথা বা সামাজিক কুসংস্কার।

২৬-২৯নং আয়াতে কয়েকটি বিধান দেয়া হয়েছে। যথা- আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করা। গরিব-মিসকিনের হক আদায় করা। অভিবাসীদের হক আদায় করা। অপচয় না করা ও মিতব্যয়ী হওয়া। প্রার্থীকে দেয়ার মতো কিছু না থাকলে সদয়ভাবে তার সঙ্গে কথা বলা ও কৃপণতা না করা। ‍

৩১নং আয়াতে অভাবের ভয়ে সন্তান হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। ৩২নং আয়াতে এমন সব কিছু হারাম করা হয়েছে যা বিবাহবহির্ভূত যৌনাচারকে উসকে দেয়। ৩৩নং আয়াতে এমন প্রাণ হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে যা, আল্লাহতায়ালা হারাম করেছেন। ‍

৩৪নং আয়াতে এতিমের মাল ব্যয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং অঙ্গীকার রক্ষা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। ৩৫নং আয়াতে মাপ সঠিক করতে আদেশ করা হয়েছে। ৩৬নং আয়াতে বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত জ্ঞান ব্যতীত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করতে নিষেধ করা হয়েছে। ৩৭নং আয়াতে অহংকারকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

৫৩নং আয়াতে মুসলিমদের আদেশ করা হয়েছে, কাফেরদের সঙ্গে কথা বলার সময় চরিত্রবান মানুষের মতো কথা বলতে। গালিগালাজ, কটূবাক্য, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কথা বলা যাবে না। এগুলো কোনো সুফল তো আনেই না বরং এগুলো দ্বারা শয়তান ঝগড়া সৃষ্টি করে।

৬১-৬৫নং আয়াতে হজরত আদম (আ.) এবং ইবলিশের ইতিবৃত্ত বর্ণনা করা হয়েছে। ৮৮নং আয়াতে কোরআনের অলৌকিকতা প্রমাণের জন্য প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সকল মানুষ ও জিন একত্রিত হয়েও কোরআনের মতো একটি গ্রন্থ রচনা করতে পারবে না।

সূরা কাহাফ
সূরা কাহাফ পবিত্র কোরআনে কারিমের ১৮তম সূরা। সূরা কাহাফ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ১১০টি।

সূরা কাহাফে ঈমান বিধ্বংসী নষ্ট সমাজের চাপ থেকে নিজেদের মূল্যবান ঈমান হেফাজতের জন্য অতীতকালের কয়েক জন্য সাহসী তরুণ সমাজের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিদায় জানায়। তারা স্বেচ্ছায় লোক সমাজের বাইরে চলে যায়। পর্বত গুহায় বসবাস শুরু করে। ৩০৯ বছর সে গুহায় ঘুমিয়ে থাকার পর তারা জীবিত হয়। এই ঘটনাটি এ সূরায় সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হয়েছে এ সূরার ৯-২৬নং আয়াতে। ‍

৩২-৪৪নং আয়াতে একটি উপমা দিয়ে দুনিয়ার সম্পদের নিকৃষ্টতা ও নেক আমলের শ্রেষ্ঠত্ব বুঝানো হয়েছে।

৪৫-৪৯নং আয়াতে একটি উপমা দিয়ে দুনিয়ার জীবন আর আখেরাতের জীবন তুলনা করে বুঝানো হয়েছে।

৬০-৭৪নং আয়াতে হজরত খিজির (আ.)-এর সঙ্গে হজরত মূসা (আ.)-এর সাক্ষাতের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘন্টা, জুন ২৯, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।