ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

বাংলানিউজকে সিলেট দরগাহ মসজিদের খতিব

শবেকদরে আল্লাহ আসেন প্রথম আকাশে

রমজান/কথোপকথন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
শবেকদরে আল্লাহ আসেন প্রথম আকাশে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হাফেজ মাওলানা হোজায়ফা। বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদ।

দেশের অাধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর দরগাহ মসজিদের ইমাম ও খতিব। বৃহত্তর সিলেটের সামাজিক ও ধর্মীয় অঙ্গনে রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। সম্প্রতি সিলেট দরগাহ মসজিদ সংলগ্ন রুমে তিনি বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কথা বলেছেন পবিত্র রমজান ও শবেকদরের করণীয় এবং ইবাদত-বন্দেগির বিষয়ে। তার সেই কথোপকথনের নির্বাচিত অংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো। কথা বলেছেন বাংলানিউজের ইসলাম পাতার সম্পাদক- মুফতি এনায়েতুল্লাহ

শবেকদর নামকরণের কারণ
ইসলামে স্বীকৃত যেসব দিবস-রজনী বরকতময় ও মহিমান্বিত, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লাইলতুল কদর বা শবেকদর। এ রাতকে লাইলাতুল কদর বলার কারণ হচ্ছে, আমল না করার কারণে এর আগে যার সম্মান ও মূল্য মহিমান্বিত থাকে না, সে এ রাতে তওবা ইস্তেগফার ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মহিমান্বিত হয়ে যায়। এছাড়া এ রাতে আল্লাহতায়ালা যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, সেটা মহিমান্বিত ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব এবং যে নবীর ওপর অবতীর্ণ, তিনিও মহিমান্বিত ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, আর যে উম্মতের জন্য অবতীর্ণ করেছেন, তারা মহিমান্বিত ও সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত।

কদরের আরেক অর্থ তাকদির ও আদেশ। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত তাকদির ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের হায়াত, রিজিক, ইত্যাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাকে লিখে দেওয়া হয়।

শবেকদর কোন রাতে?
এ সম্বন্ধে সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে মতভেদ চলে আসছে। এ প্রসঙ্গে প্রায় ৪০টি বক্তব্য আছে। মুসলিম শরিফে হজরত উবায় ইবনে কাআব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, শবেকদর হলো রমজানের ২৭তম রাত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ও হজরত মুয়াবিয়া (রা.) প্রমুখ সাহাবি থেকেও অনুরূপ বক্তব্য বর্ণিত আছে।

কোরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট বর্ণনাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে শবেকদর রমজান মাসে আসে; কিন্তু এর সঠিক কোনো তারিখ নির্দিষ্ট নেই। সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিম বর্ণিত হাদিসের আলোকে বলা যায়, শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলো শবেকদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

হাদিসের আলোকে আরও জানা যায়, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে যখন এর তারিখ ভুলিয়ে দেওয়া হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, সম্ভবত এতে তোমাদের কল্যাণ নিহিত আছে। অর্থাৎ যদি এ রাত নির্দিষ্ট করে দেয়া হতো তবে অনেক অলস প্রকৃতির মানুষ শুধু এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত হতো। অবশিষ্ট সারা বছর ইবাদত-বন্দেগি না করে আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে বঞ্চিত থাকত। দ্বিতীয়ত, এ রাত নির্দিষ্ট করা হলে কোনো ব্যক্তি ঘটনাক্রমে রাতটিতে ইবাদত করতে না পারলে সে দুঃখ ও আক্ষেপ প্রকাশ করতে করতে অনেক সময় নষ্ট করে দেবে। এতে সে মাহে রমজানের বরকত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে। এ রাত যেহেতু নির্দিষ্ট করা হয়নি, সে জন্য এ রাতের সন্ধানে আল্লাহর সব বান্দা প্রতি রাতে ইবাদত-বন্দেগি করে থাকে এবং প্রত্যেক রাতের জন্য পৃথক পৃথক পুণ্য অর্জন করতে থাকে।

শবেকদর এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য
শবেকদর এ উম্মতের জন্য আল্লাহতায়ালার দান। এটাকে কেবল এ উম্মতেরই বৈশিষ্ট্য। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা শবেকদর আমার উম্মতকেই দান করেছেন; পূর্ববর্তী উম্মতকে নয়। ইমাম মালেক (রহ.) সূত্রে বর্ণিত আছে, যখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহর পক্ষ থেকে সংবাদ দেয়া হলো যে আপনার উম্মতের বয়স অন্যান্য উম্মতের তুলনায় কম হবে, তখন তিনি আল্লাহর সমীপে নিবেদন করলেন, হে আল্লাহ! তাহলে তো পূর্ববর্তী উম্মত দীর্ঘ জীবন পেয়ে ইবাদত ও সত্কর্মের মাধ্যমে যে স্তরে উপনীত হয়েছে, আমার উম্মত সে স্তর লাভ করতে পারবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে লাইলাতুল কদর দান করেন এবং এটাকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে ঘোষণা দেন।

শবেকদরে অাল্লাহ নেমে আসেন প্রথম আকাশে
এ রাতে ইবাদত করলে আল্লাহতায়ালা বান্দার ইবাদতে বরকত দান করেন, রহমত ও বরকত নাজিল করেন এবং বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে দেন। এ রাতে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহতায়ালা প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বান্দাদের উদ্দেশে বলেন, আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী? আমি তাকে রিজিক দান করব। আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দেব। আছে কি কেউ রোগাক্রান্ত? আমি তাকে সুস্থ করে দেব। কার কী অভাব? আমি দূর করে দেব; কার কী প্রয়োজন? আমি তা পূর্ণ করে দেব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।

এ রাতের করণীয় অামলসমূহ
বরকতপূর্ণ এই রাতে অধিক পরিমাণে তওবা-ইস্তেগফার, দোয়া ও জিকির-আজকার করা, নফল নামাজ ও তাসবিহ-তাহলিল পড়া দরকার। আল্লাহর কাছে পার্থিব ও পরকালীন সুখ-শান্তি চাওয়া এবং সার্বিক সফলতার জন্য কান্নাকাটির মাধ্যমে রাত কাটানো শ্রেয়। এ ছাড়া আছে নফল নামাজ যেমন- আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ, তওবার নামাজ ও অন্যান্য নফল নামাজ পড়া; নামাজে কেরাত ও রুকু-সিজদা দীর্ঘ করা; কোরআন শরিফ তেওয়াত করা; দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; কবর জিয়ারত করা; নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মুমিন-মুসলমানের জন্য দোয়া করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘন্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
এমএ/

** লাইলাতুল কদর চেনার ১৩টি আলামত
** আজ আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের অপূর্ব সুযোগ
** শবেকদরের বর্জনীয় ও করণীয় বিষয়সমূহ
** শবেকদর : মর্যাদা ও মাসাইল
** হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত আপনি যেভাবে চিনবেন
** শবেকদরের বিশেষ দোয়া
** শবেকদর আসলে কোন তারিখে?
** পবিত্র শবেকদরে যেসব ইবাদত করতে পারেন
** পবিত্র শবেকদরের বৈশিষ্ট্যসমূহ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।