ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা বেহেশতে প্রবেশের পূর্বশর্ত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা বেহেশতে প্রবেশের পূর্বশর্ত

আজ অনুষ্ঠিত হবে ১০ম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনে কারিমের তেলাওয়াতকৃত অংশের বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে আত্মীয়তার বন্ধন ও সম্পর্ক রক্ষা করার গুরুত্ব বিষয়ে।

এ প্রসঙ্গে সূরা রাদের ২০-২২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আদেশ করেছেন, যারা তা অক্ষুন্ন রাখে ... তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম। ’

আলোচিত বিষয়ে পবিত্র কোরআনে কারিমের আরও কয়েক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন- ‘আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা করে থাক এবং আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। ’ –সূরা আন নিসা: ১

‘যারা আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক (প্রাপ্য অধিকার) দিবে (আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল)। ’ –সূরা বনি ইসরাইল: ২৬

‘অতএব, আত্মীয়কে দিও তার অধিকার এবং অভাবগ্রস্থ ও মুসাফিরকেও। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে তাদের জন্য এটাই শ্রেয়। তারা সফলকাম। ’ –সূরা আর রুম: ৩৮

যারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে ও আত্মীয়তার বন্ধন চ্ছিন্ন করে সূরা মুহাম্মদের ২২ ও ২৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।

আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার গুরুত্ব অনেক হাদিসেও আছে। যেমন, আল্লাহ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব। আর যে ব্যক্তি নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করব। ’ –সহিহ বোখারি: ৫৯৮৭

‘যে ব্যক্তি নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধ রাখে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ –সহিহ বোখারি: ৫৯৮৪

‘নিকটাত্মীয়রা সুসম্পর্ক রাখায় যে ব্যক্তি তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে সে প্রকৃতপক্ষে সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়। বরং নিকটাত্মীয়রা সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার পরেও যে ব্যক্তি তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখে সে-ই প্রকৃতপক্ষে সম্পর্ক রক্ষাকারী। ’ –সহিহ বোখারি: ৫৯৯১

‘সাধারণ গরিবকে দান করার দ্বারা শুধু দানের সওয়াব পাওয়া যাবে। কিন্তু গরিব আত্মীয়কে দান করার দ্বারা দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যাবে। দান করার সওয়াব আবার আত্মীয়তার সম্পর্ক চর্চা করার সওয়াব। ’ -ইবনে মাজাহ: ১৮৪৪

নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করার অর্থ হলো, তাদের বাড়িতে যাতায়াত করা, দাওয়াত করে তাদের বেড়াতে নিয়ে আসা, তাদের খাওয়ানো, তাদের দেয়া খাবার খাওয়া, বিভিন্ন উৎসব-পর্ব উপলক্ষ্যে সাধ্যমতো তাদের উপহার দেওয়া, তারা উপহার দিলে তা সানন্দে গ্রহণ করে নিজের খুশি প্রকাশ করা, বিপদের সময় সাধ্যমতো তাদের সাহায্য করা, সুখে-দুঃখে শরিক হওয়া ইত্যাদি। এভাবে নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে গেলে যে সময় ও অর্থ ব্যয় হবে মহান আল্লাহ ভিন্নভাবে তা পূরণ করে দিবেন। শুধু পূরণ করেই দিবেন না বরং আরও বৃদ্ধি দান করবেন।

নিকটাত্মীয়দের থেকে অসদাচরণ পেয়ে, অসম্মান পেয়ে, বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ পেয়ে বা তাদের থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে অনেকেই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধ করে দেয়। অথচ এ সব কারণেও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধ করা যাবে না। বরং জান্নাতে প্রবেশের আগ্রহ থাকলে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের পাশাপাশি নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা নিজের পক্ষ থেকেই করে যেতে হবে।

আমাদের সমাজের অনেক দানবীর ও ধনীদের দেখা যায়, তারা নিকটাত্মীয়দের দান করার চেয়ে দূরে দান করতে অধিক স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। আবার অনেকেই নিকটাত্মীয়দের কষ্টদায়ক আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে দান-খয়রাত, সাহায্য-সহযোগিতা সবকিছু পর মানুষকে করে থাকে। কিন্তু ইসলামের শিক্ষা হলো দান-খয়রাত আগে করতে হবে নিজের কাছের আত্মীয়দের। যে যত বেশি কাছের, যে যত বেশি আপন সে দান পাওয়ার ততো বেশি হকদার।

ইহকালীন ও পরকালীন সুখ-শান্তির জন্য আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে। এটা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মানবিক শিক্ষা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬,
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।