ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

রমজানের সুসংবাদ ছড়িয়ে দিতেন রাসূলুল্লাহ সা.

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
রমজানের সুসংবাদ ছড়িয়ে দিতেন রাসূলুল্লাহ সা. রমজানের আগমনে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) খুশি হতেন এবং তিনি সাহাবিদের মাঝে সুসংবাদ ছড়িয়ে দিতেন

আল্লাহতায়ালা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানুষের জন্য সুসংবাদ দানকারী হিসেবে প্রেরণ করেন। তিনি মানুষকে পার্থিব ও পরকালীন জীবনের মুক্তি ও সাফল্যের সুসংবাদ দিয়েছেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পছন্দ করতেন মানুষকে সুসংবাদ দিতে। হাদিস বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা সহজ হও, কঠোর হয়ো না।

মানুষকে সুসংবাদ দাও। বিতৃষ্ণা ছড়িও না। ’ -সহিহ বুখারি ও মুসলিম

রমজানের আগমনে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) খুশি হতেন এবং তিনি সাহাবিদের মাঝে সুসংবাদ ছড়িয়ে দিতেন। তিনি অভিনন্দন জানাতেন তার পরিবার, সহচর ও সমাজের সাধারণ মানুষকে। তিনি তাদেরকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাদের মাঝে পুণ্যের প্রতিযোগিতা সৃষ্টির চেষ্টা করতেন।  

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের নিকট বরকতময় রমজান আগমন করেছে। আল্লাহতায়ালা তার রোজাকে তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখা হয় এবং তাতে রয়েছে আল্লাহর জন্য এমন রাত যা হাজার রাত থেকে উত্তম। যে এ মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো- সে প্রকৃতার্থেই বঞ্চিত হলো। ’ -সুনানে নাসায়ি

অন্য হাদিসে এসেছে, রমজানের প্রথম রাতে শয়তান ও দুষ্টু জিনদের বন্দী করে রাখা হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া এবং তার কোনো দরজা খোলা থাকে না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং তা আর বন্ধ করা হয় না। একজন আহবানকারী আহবান করে, হে কল্যাণ প্রয়াসী অগ্রগামী হও এবং হে অকল্যাণের অনুগামী নিবৃত্ত হও। (প্রতি রাতে) আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শুধু সুসংবাদই দিতেন না, তিনি সতর্কও করতেন। যেনো কেউ রমজানের মহিমা ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয়ে না যায়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই যে মাস তোমাদের নিকট আগমন করেছে, তাতে রয়েছে এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত। যে তা থেকে বঞ্চিত হবে সে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। আর হতভাগ্য ব্যক্তিই তার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। ’ -সুনানে ইবনে মাজাহ

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) রমজানের আগমনে পরস্পরকে অভিনন্দন ও সুসংবাদ প্রদানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জান্নাতের দরজা খোলার সুসংবাদ কেন মুমিন মানুষকে দেবে না, পাপী কেন জাহান্নামের দরজা বন্ধের সুসংবাদ দেবে না। জ্ঞানী ব্যক্তি কেন শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করার সুসংবাদ দেবে না। এ সময়ের সঙ্গে কোনো সময়ের তুলনা চলে? -লাতায়িফুল মাআরিফ
ইসলামি স্কলাররা রমজানের আগমনে অভিনন্দন জানানোকে মুস্তাহাব বলেছেন। তাদের মতে, মুসলমান মুসলমানকে রমজানের আগমনে অভিনন্দন জানাবে মৌখিকভাবে, টেলিফোনে বা শুভেচ্ছা কার্ড প্রেরণ করে। এ জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান, আয়োজন বা গণজমায়েত অনুচিৎ।  

আল্লামা মুহাম্মদ আমিন শানকিতি রমজানের আগমনে অভিনন্দন জানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, কোনো শব্দ নির্ধারণ না করে এভাবে বলবে- ‘আল্লাহ যেনো এ মাস তার আনুগত্যের জন্য সহায়ক করেন, বা আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে রমজানের রোজা ও ইবাদতসমূহ পালনের তওফিক দিন। ’ -আদাবুল ইস্তিজান

তাই আসুন! সমাজের রমজান আগমনের সুসংবাদ ছড়িয়ে দেই। পারস্পারিক কল্যাণ কামনার মাধ্যমে অভিনন্দন জানাই অপর মুসলিমকে। হয়তো আপনার ও আমার অভিনন্দন কারও জন্য ভালো কাজের অনুপ্রেরণা হবে। রমজানের পবিত্রতার ব্যাপারে সমাজের বোধোদয় হবে।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।