মরক্কোর তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হতে রীতিমতো লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। নিজেকে এগিয়ে রাখার একটা প্রতিযোগিতা চলে সবার মাঝে।
এই প্রতিযোগিতার বাজারে অনেকে টিকে থাকতে না পেরে নিজের মতো কর্মসংস্থান তৈরি করে নেন। তারা প্রচলিত পেশার বাইরে ঝুঁকে পড়েন অন্য পেশার দিকে। নানা ধরনের সৃজনশীল ও চ্যালেঞ্জিং পেশাও বেছে নিচ্ছেন অনেকে।
তবে পবিত্র রমজান মাস মরক্কোর বেকারদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে আসে। রমজানকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি এ মাসে।
রমজান মাসে মরক্কোর নির্দিষ্ট কিছু পেশার লোকেরা বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন। এর অন্যতম হলো- মিষ্টি বিক্রেতা, ইফতার বিক্রেতা, মাছ বিক্রেতা ও দর্জিরা।
রমজান মাসে এসব পেশার লোকদের কদর বাড়ে। মোটা অংকের অর্থ উপার্জনের সুযোগ পান তারা। কোমর বেঁধে উপার্জনে নামেন এ মাসে। আবার কিছু কিছু পেশার লোকদের জন্য রমজান মাস বেকায়দার মাস।
যারা সারা রমজান দরজা বন্ধ রেখে ঈদ পণ্য উৎপাদনে ব্যস্ত থাকেন তারা উপার্জনে তেমন সুবিধা করতে পারেন না।
মরক্কোবাসীদের রমজানের প্রিয় খাবার হলো- শাবাকিয়া নামের বিশেষ ধরনের পিঠা। ময়দা, মধু ও তিলের দানায় তৈরি এসব পিঠা বেশ জনপ্রিয় দেশটিতে। নারীরা সাধারণত এগুলো বিক্রি থাকে। সমাজের দরিদ্র ও তালাকপ্রাপ্ত নারীদের জন্য রমজানে শুধু পিঠা বিক্রি করেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হয়। সেই সঙ্গে বেকার যুবকরা এসব পেশায় আসে। এর মাধ্যমে অন্তত ৩০ দিনের জন্য হলেও তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়। মরোক্কোতে পিঠা বিক্রি ‘কর্মহীনদের পেশা’ নামে খ্যাত।
ত্রিশোর্ধ আবদুল্লাহ মুনজিল। মৌসুমি পেশা ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই তার। তিনি ‘আল আরাবি আল জাদিদ’কে বলেন, ‘অর্থ আয়ের জন্য আমি পবিত্র রমজানে হালুয়া বিক্রয় ও শাবাকিয়া বিক্রয় করি। কারণ এতে প্রচুর গ্রাহক পাওয়া যায়। ’
তিনি বলেন, শাবাকিয়া ও হালুয়া বিক্রয় করেই তিনি দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ দেরহাম (১৬ থেকে ২০ মার্কিন ডলার) আয় করেন।
মরক্কোতে রমজান মাসে ইফতার বিক্রিও লাভজনক পেশা। এই পেশাতেও স্বাধারণত নারীরাই আসেন। দেশটির অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা তাদেরকে এ ধরনের পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে।
সাদিয়া বানাশি চল্লিশোর্ধ এক বিধবা নারী। তিনি রমজান ছাড়া অন্য মাসে পুদিনা পাতা বিক্রয় করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি রমজান মাসে ব্যবসা পরিবর্তন করি। বাড়িতে নিজ হাতে ইফতার বানাই। পরে তা আমার মহল্লার রাস্তার মাথায় তা বিক্রি করি।
তিনি বলেন, ‘আমি এটি করতে বাধ্য। কারণ আমি বেকার থাকতে চাই না। কারণ আমার দু’টো শিশু সন্তান আছে। ’ তিনি আরও বলেন, আমার সংসারে উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি নেই। আমি ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বদাই কাজ করতে বাধ্য।
বানাশি আরও বলেন, রমজানে ইফতার, পিঠা, বাগরির ও মালাবি বিক্রি করা আমাকে সংসার চালাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি কিছু ঋণও পরিশোধ করতে পারি।
জীবিকা উপার্জনের জন্য মরোক্কোতে আরেকটি জনপ্রিয় পেশা হলো- সেলাই কাজ। কারণ রমজানের পরেই আসে ঈদ। ঈদকে কেন্দ্র করে সেখান নারী-পুরুষের মাঝে পোশাক তৈরির ধুম পড়ে যায়।
-আল আরাবি আল জাদিদ অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৭
এমএইউ/