ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

৪৪ বছর যাবত ইতিকাফ করেন খতিব আল্লামা আবদুল হক

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৭
৪৪ বছর যাবত ইতিকাফ করেন খতিব আল্লামা আবদুল হক ময়মনসিংহ বড় মসজিদ: ছবি- অনিক খান

ময়মনসিংহ: রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতেকাফ। ফজিলতময় এ আমলটি টানা ৪৪ বছর যাবত করে যাচ্ছেন ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বড় মসজিদের খতিব মাওলানা শায়খ আবদুল হক।

এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে প্রায় ২৭ বছর শুধু ময়মনসিংহ বড় মসজিদেই ইতিকাফ করছেন হজরত হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর এই খলিফা।  

শুক্রবার (১৬ জুন) বাদ আসর ময়মসিংহ নগরীর বড় মসজিদে বসে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপ করছিলেন তিনি।

আলাপচারিতায় তিনি বলেন, সেই শৈশব থেকেই পার্থিব সব চিন্তা-ভাবনা ও ব্যস্ততা থেকে মনকে গুটিয়ে এনে আল্লাহতায়ালার দরবারে পড়ে থেকে ইতিকাফ করে চলেছেন।  

তিনি জানান, ময়মনসিংহ বড় মসজিদের আগে ঢাকার যাত্রাবাড়ি মসজিদে ৪ বছর এবং হাফেজ্জি হুজুরের মাদরাসায় ১৩ বছর ইতিকাফ করেন।

ময়মনসিংহের এ শীর্ষ আলেম ২৭ বছর আগে ময়মনসিংহ বড় মসজিদে যোগ দেওয়ার সময় তখন এখানে ইতিকাফকারীর সংখ্যা ছিল নেহায়েত কম। তখন সাকূল্যে ৮ থেকে ১০ জন ইতিকাফ করতেন।  

গত বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৪ শতাধিক মুসল্লি ময়মনসিংহ বড় মসজিদে ইতিকাফ করেছেন। চলতি রমজানে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে।  

ইতিকাফ হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় সুন্নত উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোজা ফরজ হওয়ার পর থেকেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইতিকাফ করতেন। নবী করিম (সা.) একবার রমজান মাসে ইতিকাফ করতে না পারায় শাওয়াল মাসে কাজা ইতিকাফ করেছিলেন।

ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- পবিত্র লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান। এমনটি জানিয়ে ঐতিহ্যবাহী বড় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল হক বলেন, যে ব্যক্তি ইতিকাফ করবে সে লাইলাতুল কদর অবশ্যই পাবে।  

সুন্নত ইতিকাফের নিয়ত করে মসজিদে প্রবেশ করলে সে ঘুমিয়ে থাকলেও তার আমলনামায় সওয়াক লেখা হতে থাকবে। এটাও ইবাদতের শামিল। এমনকি সে লাইলাতুল কদরের ফজিলতও পাবে- বলেন শায়খ আল্লামা আবদুল হক।

কেউ যদি শুধুমাত্র রাতেও মসজিদে ইতিকাফ করে তবে সেও অনেক ফজিলত পাবে। তবে তার সেই ইতিকাফ হবে নফল ইতিকাফ। রমজানে নফল ইবাদত ফরজের সমান- জানিয়ে প্রখ্যাত এ আলেম বলেন, একদিন ইতিকাফ করলে দোজখ তার থেকে এক খন্দক দূরে চলে যায়।

যদি কেউ ১০ দিন ইতিকাফ করে তবে আল্লাহতায়ালা তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন। ইতিকাফ করা অবস্থায় রোজা, নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকিরের আমলগুলো বেশি বেশি করতে হয়।

তিনি বলেন, ইতিকাফ করা ব্যক্তি সব রকমের গোণাহ থেকে বিরত থাকেন। তবে তিনি ইতিকাফ অবস্থায় জানাজার নামাজে শরিক হতে না পারলেও সওয়াব পাবেন। অসুস্থ কোনো রোগী দেখতে যেতে না পারলেও সওয়াব লাভ করবেন। কাজেই প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের উচিৎ ইতিকাফে বসা।  

কোনো পাড়া বা মহল্লার মসজিদে যদি একজন মানুষও ইতিকাফ না করেন তবে ওই পাড়া বা মহল্লার সবাই গোনাহগার হবেন- জানিয়ে ময়মনসিংহ বড় মসজিদের এ পেশ ইমাম বলেন, আর কেউ ইতিকাফ করলে ওই পাড়া বা মহল্লার সবাই গোনাহ থেকে মাফ পেয়ে যায়।

মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় খাবার আনার কেউ না থাকলে বাড়িতে কিংবা হোটেলে গিয়ে খাবার সারতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মসজিদের বাইরে গেলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৭ 
এমএএএম/এমএইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।