রমজানের শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদা হিসেবেই মুসলিম দুনিয়ায় পরিচিত। দিনটি রমজান মাসের শেষ দিন ও জুমা বার হওয়ায় মুসলমানদের কাছে এর একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
জুমার তো একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছেই এর মধ্যে রমজানের শেষ জুমা, তাই সর্বস্তরের মুসলমান এই দিনটিকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করে থাকেন। সামনের বছরে, রমজানের কোনো জুমা ভাগ্যে নাও জুটতে পারে সেই বিশ্বাস থেকেই মুসলমান জুমাতুল বিদা বা রমজানের শেষ জুমাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে মাহে রমজানের শেষ শুক্রবারটিকে ‘আল কুদস’ দিবস হিসেবেও পালন করা হয়। ইহুদি জায়নবাদী শক্তির দখল থেকে মুসলমানদের প্রথম কিবলা পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ মুক্ত করার শপথ ব্যক্ত করা হয় এ দিনে। দেশে দেশে মুসলমানরা এদিন জুমার পর প্রতিবাদ র্যালি বের করে থাকেন। ইফতারের আগে বিশেষ আলোচনা ও মোনাজাতও করা হয়। ইরানের আধ্যাত্মিক নেতা মরহুম আয়াতুল্লাহ খোমেনি ‘আল কুদস’ দিবস পালনের প্রথম আহ্বান রেখেছিলেন। পরে প্রতিবাদ ও প্রত্যয়ের এ কর্মসূচিটি ব্যাপকতা লাভ করে মুসলিম দেশে।
আজ সন্ধ্যায় চাঁদ উঠলে মুবারক মাহে রমজানের বিদায় ঘটবে। এর পরই আসবে মহা পুরস্কারপ্রাপ্তির দিন ঈদুল ফিতর। আগামীকাল সকাল হবে ঈদের সকাল। হিজরি সালের শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখকেই বলা হয় ঈদুল ফিতর।
ঈদ আরবি শব্দ, এর অর্থ বারবার প্রত্যাবর্তন করা। যেহেতু প্রতিবছর দু’বার নিয়মিত এই উৎসবটি ঘুরেফিরে আসে তাই একে বলা হয় ঈদ। কোনো কোনো মুহাদ্দিসের অভিমত, এই দিনে আল্লাহর বিশেষ রহমত বান্দার প্রতি প্রত্যাবর্তন করে বা আল্লাহ বান্দার প্রতি রহমতের দৃষ্টি বুলান, তাই এর নামকরণ হয়েছে ঈদ।
‘ফিতর’ শব্দের অর্থ রোজার অবসান। দীর্ঘ এক মাসব্যাপী সিয়াম সাধনায় ক্ষুধা-তৃষ্ণার পর এ দিনটিতে তৃপ্তিপূর্ণ আহারের আনন্দলাভ হয় বলে একে বলা হয় ঈদুল ফিতরের দিন। আর ঈদের এ আনন্দময় আয়োজন যেন শুধু বিত্তবানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, সেজন্য এ দিনে ফিতরা বা সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে ওয়াজিব করে দেওয়া হয়েছে।
কবি বলেন, জীবনে যাদের হর রোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নীদ আধ মরা সেই কৃষকের ঘরে আজ কি এসেছে ঈদ। ঈদের মূল ভাবনা হচ্ছে গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার
মাধ্যমে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের যে প্রশিক্ষণ নিয়েছে সায়েম তা বাস্তব জীবনে প্রতিষ্ঠার প্রথমদিন হলো ঈদুল ফিতর।
আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির নূরে সামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতিকে আলোকিত করার দিন ঈদ। আমির-ফকির আর উঁচু-নীচুর ভেদাভেদ ভুলে মানুষের কাতারে শামিল হওয়ার ডাক দিতে এসেছে ঈদ। এই ডাকে যারা সাড়া দিবে তারাই সফল সায়েম। তাকওয়ার মানুষ। মুত্তাকি।
হে দয়াময় মাবুদ রাব্বানা! মোবারক এ মাসে যেভাবে তোমার ইবাদত-বন্দেগি করার ছিল আমরা
তা করতে পারিনি। তাকওয়া অর্জনের যে সুযোগ তুমি আমাদের দিয়েছিলে আমরা তার যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারিনি। শুধু তোমার রহমতের উসিলায় আমাদের সিয়ামকে কবুল করে নাও!
জীবনের বাকিটা পথ আমাদের তাকওয়ার সঙ্গে ঈমানের পথে চলার তাওফিক দাও।
লেখক: মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
এমএ/