ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

যে মসজিদের পরিচিতি দেশে-বিদেশে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২০
যে মসজিদের পরিচিতি দেশে-বিদেশে

চট্টগ্রাম: সাগর, নদী, পাহাড়ঘেরা চট্টগ্রামের অনেক ঐতিহ্যের ভিড়ে উজ্জ্বল প্রাচীন একটি মসজিদ। অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর কারণে এ মসজিদের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। তাই দেশি-বিদেশি পর্যটকরা চট্টগ্রাম এলে একনজর দেখতে আসেন এটি।

মসজিদের সুউচ্চ মিনার, দেয়াল, দরজা-জানালা থেকে শুরু করে সব কিছুতে দৃষ্টিনন্দন সূক্ষ্ম কারুকাজ। প্রাকৃতিক আলোর খেলায় বর্ণিল রঙে রঙিন এসব কারুকাজ মুগ্ধ করে সবাইকে।

তারা বিস্মিত হন নির্মাণশৈলী দেখে। মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মসজিদের সবচেয়ে বড় গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে ১৩ মণ রুপা আর পিতলে।

গম্বুজের চারপাশে আহলে বায়তে রাসূলসহ দুনিয়ায় জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবির নাম লেখা।  
ইসলামের প্রবেশদ্বার খ্যাত চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার ওয়ার্ডের সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কের চন্দনপুরার হামিদিয়া তাজ মসজিদের চিত্র এটি। এর আরও অনেক নাম আছে। এর মধ্যে মসজিদই সিরাজ-উদ-দৌলা, চন্দনপুরা বড় মসজিদ, তারা মসজিদ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

হামিদিয়া তাজ মসজিদস্থানীয় লোকজন জানান, এটি শতবর্ষী মসজিদ। চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ মসজিদ। চট্টগ্রামের পর্যটন সম্পর্কিত প্রকাশনাগুলোতে এ মসজিদের ছবি থাকায় বিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটকও আসেন এখানে। স্বাভাবিক সময়ে দোতলা এ মসজিদ ও উত্তর পাশের গলি, সিরাজ-উদ-দৌলা সড়ক মিলে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি এখানে জুমার নামাজ আদায় করেন। এখন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সীমিত সংখ্যক ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমদের নিয়ে জামাত হচ্ছে।  

১৯৫০ সালে এ মসজিদ পুনর্নির্মাণ হয়। এ মসজিদে রুপা-পিতলের প্রাচীন অনেক কারুকাজ ছিল। বৈরী আবহাওয়ায় এসব জিনিস যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনি সংস্কারের সময়ও অনেক কিছু হারিয়ে গেছে।

আবু সৈয়দ দোভাষ একই নকশায় নগরের কোতোয়ালির মোড় এলাকায় শ্বশুরবাড়িতেও একটি মসজিদ তৈরি করেছিলেন। তবে সেটি এই মসজিদ থেকে আকারে ছোট ছিল।

মসজিদের মোতাওয়াল্লি জানান, তাদের পূর্বপুরুষ আবদুল হামিদ মাস্টার যখন এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন তখন এটি ছিল মাটির ঘরের ওপর টিনের ছাউনির। তখনো এটি নকশা ও স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য ছিল। এরপর ওনার ছেলে আবু সাইয়্যিদ দোভাষ ১৯৪৬ সালে এটি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কলকাতা থেকে কারিগর এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে নির্মাণসামগ্রী ও নকশাসহ বিভিন্ন উপকরণ আনা হয়েছিল। কাজ শেষ হয় পঞ্চাশের দশকে।

এ মসজিদের বড় গম্বুজটি ছিল চাঁদি (রুপা) ও পিতলের তৈরি। কালের বিবর্তনে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এগুলো বিবর্ণ হয়ে পড়ে। তখন সবুজ, গোলাপি ও হলুদ রং করে দেওয়া হয়। প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ এ মসজিদ দেখতে আসেন। অনেকে নামাজ পড়ার নিয়ত করে আসেন। অবাক বিস্ময়ে চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখেন। খুব ভালো লাগে।

যখন মাইকের ব্যবহার ছিল না তখন চার তলা সমান উঁচু মিনারে উঠে আজান দেওয়া হতো। এ রকম দুইটি মিনার এখনো আছে।  

মহল্লার বাসিন্দা সোলায়মান আলম বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছি জাপানের একটি ভ্রমণ সাময়িকীর প্রচ্ছদ ছাপা হয়েছিল এ মসজিদের ছবি দিয়ে। এ মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে দেশি-বিদেশি মানুষ আসেন। তারা অনেক কিছু জানতে চান। কিন্তু পর্যটকদের সুবিধা, তথ্য জানানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ এটি হতে পারতো দেশের অন্যতম একটি প্রধান পর্যটনকেন্দ্র।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২০
এআর/এসি/টিসি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।