ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

এক পায়ে দাঁড়িয়েই তারাবির নামাজ আদায় করেন বাবু!

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২১
এক পায়ে দাঁড়িয়েই তারাবির নামাজ আদায় করেন বাবু! এক পায়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছেন বাবু। ছবি: বাংলানিউজ

নীলফামারী: এক পা হারিয়েও থেমে নেই অদম্য ধৈর্যশীল বাবু আত্তারী (৩২)। প্রতিদিন ক্র্যাচে ভর করে মসজিদে যান তিনি।

নামাজ পড়েন এক পায়ে দাঁড়িয়ে। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ই নয় তিনি ২০ রাকাত তারাবির নামাজও আদায় করেন দাঁড়িয়ে।

পুরো রমজান মাসে একদিনও কাজা হয়নি তার তারাবি নামাজ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও হার মেনেছে তার প্রবল ধৈর্য্য আর ইচ্ছা শক্তির কাছে।

পায়ে ব্যথা বা শরীর একটু খারাপ হলে অনেকেই চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করেন। যদিও বাসা থেকে পায়ে হেঁটেই মসজিদে যান তারা। এজন্যই মসজিদে দীর্ঘ হচ্ছে চেয়ারের সংখ্যা। কিন্তু ব্যতিক্রম বাবু। এক পা নেই, চাইলেই চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করেতে পারেন। কিন্তু না; বছরের পর বছর এক পায়ে দাঁড়িয়েই নামাজ আদায় করে আসছেন তিনি।  

নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগ মহল্লায় থাকেন বাবু আত্তারী। ২০০৯ সালে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে কাটা পড়ে বাবুর একটি পা। আগে থেকে নামাজপ্রেমী বাবু। পা হারানোর পরও বিন্দুমাত্র মনোবোল হারাননি তিনি। এখনো এক পায়ে দাঁড়িয়েই পাঁচ ওয়াক্তসহ তারাবি নামাজ আদায় করেন তিনি।  

এক সময় কাপড়ের হকারি করে দিনমজুর বাবাকে সংসার চালাতে সহায়তা করতেন বাবু। চার ভাই এক বোনের মধ্যে বাবু ৩য়। বাবা এখন জীবিত নেই। মারা গেছেন অনেক আগে। বাবুও এক পা হারিয়ে আগের মত আর কাপড়ের হকারি করতে পারেন না। তবুও এক পা নিয়েই টুকটাক কাজ করে সংসারে সহায়তা করে থাকেন, করোনার অতিমারিতে সেটাও বন্ধ। কিন্তু বন্ধ নেই নামাজ, রোজা, তারাবি।

সৈয়দপুর চিনি মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ শাহিদ রেজভী জানান, আমি যখন থেকে এই মসজিদে এসেছি তখন থেকে বাবুকে দেখে আসছি। কোনো ওয়াক্তেরই নামাজ তার কাজা হয় না। বিগত কয়েক বছর থেকে তিনি এক পায়ে ভর করে দীর্ঘ তারাবির নামাজ আদায় করে আসছেন।  

বাবু আত্তারীর বন্ধু ও একই মসজিদের মুসল্লি হায়দার এমাদী বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে খেলাধুলা করে আসছি। খুবই বিনয়ী আর অতিভদ্র বাবু। তার একটি পা নেই তবুও সে এক পায়েই সব নামাজ আদায় করে আসছে।

বাবু আত্তারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, নামাজের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা কথা। স্বপ্নে প্রিয় নবীজির দিদার পাওয়ার জন্য আজও প্রতি নামাজে সিজদায় কাঁদেন তিনি। এক পায়ে ভর করে দীর্ঘ নামাজে কষ্ট হলেও মনে প্রশান্তি পান। কারণ তার চেয়ে সুস্থ মানুষ চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করেন অথচ তিনি এক পায়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছেন।

সুস্থ সবল হয়েও আজ অনেকে উদাসিন নামাজের প্রতি। ২০ রাকাত তারাবির নামাজ তো দূরের কথা শুক্রবার দুই রাকাত জুমার ফরজ পড়েই চলে যান অনেকেই। কিন্তু এর মধ্যে ব্যতিক্রম বাবু আত্তারী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।