ঢাকা, বুধবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২১ মে ২০২৫, ২৩ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

কুড়িগ্রাম শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা, জনভোগান্তি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩৩, মে ২০, ২০২৫
কুড়িগ্রাম শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা, জনভোগান্তি পানিতে ডুবে আছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কুড়িগ্রাম শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটসহ নানা স্থাপনা ডুবে গেছে। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, জেলা দায়রা জজ আদালত ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ডুবে আছে এক হাঁটুর নিচে।

এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১০২.৮ মিলিমিটার।

কুড়িগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টা অতিভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় শহর ও গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় সরকারি বিভিন্ন অফিস, আদালত ও আবাসিক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজারো মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার রাত ৯টার সময় কুড়িগ্রাম জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়ে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। টানা বৃষ্টির কারণে জেলার সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

রাজারহাট কৃষি ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম জেলায় ১০২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কোনো এলাকায় যদি ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় সেটিকে হালকা বৃষ্টি বলা হয়। ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার হলে তা মাঝারি বৃষ্টি এবং ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বলা হয়। আর ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটারের বৃষ্টিকে ভারী বৃষ্টি হিসাবে ধরা হয়। আর বৃষ্টি ৮৮ মিলিমিটারের বেশি হলে তা অতি ভারী বৃষ্টি হিসেবে ধরা হয়।

সরেজমিনে আজ মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল থেকে ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামের জজকোর্ট মোড় এলাকা থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুড়িগ্রাম পৌর বাজার থেকে হাসপাতালপাড়া সড়ক, ফায়ার সার্ভিস, হাটিরপাড়, ভকেশনাল মোড় এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জমে থাকা হাঁটুপানির মধ্য দিয়ে চলাচল করছে মানুষ। এ ছাড়া রাস্তায় পানি জমে থাকায় অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসনের কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, পুলিশ লাইন্স, জজকোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কার্যালয় মাঠে পানি জমেছে। অন্যদিকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু তার ফেসবুকে জেলা প্রশাসন ও জজকোর্ট এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘জলজটে কুড়িগ্রাম গোটা পৌরসভা। পানি নিষ্কাশনের যুগোপযোগী ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানিতে অফিস আদালত রাস্তাঘাট ও বাড়িতে জমেছে হাঁটু পানি। ডিসি অফিস, এসপি অফিস, জজকোর্ট, ফায়ার সার্ভিস অফিসে এখন থইথই পানি। ফলে বেড়েছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। ’

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা খুশি জানান, একটানা বৃষ্টিতে শহর গ্রাম একাকার হয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। শহরের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ড্রেনের নোংরা পানি এসে রাস্তায় উঠেছে। এই শহরের নগর ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক রাজ্য জ্যোতি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সাঁতার শিখতে ডিসি অফিসের সামনে যাচ্ছি। ’

কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা কবির হোসেন  বলেন, ‘বৃষ্টিতে স্টেশনের ভেতরে হাঁটুপানি। রান্নার চুলা ডুবে গেছে। সকালে রান্না হয়নি। সবাই বাইরের হোটেলের খাবার খেয়ে আছি। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সরিয়ে নিয়েছি। চরম দুর্ভোগে আছি। ’

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম জেলায় অতি ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই তিনদিন কুড়িগ্রাম জেলার আবহাওয়া এরকমই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে জেলার সবগুলো নদ–নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ ড্রেনেজ ব্যবস্থা নতুনভাবে পরিকল্পনা করে নতুন মডিউলে স্থাপনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এটি হলে আশা করি জলাবদ্ধতা দূর হবে। '

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।