বাগেরহাট: বাংলাদেশি গবেষক ইসমত জেরিন ও মুহাম্মদ মইনুল ইসলামের উদ্ভাবিত বিজনেস গ্যাজেট ‘ইন্টারেক্টিভ কিয়স্ক ফর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট’ যুক্তরাজ্যে পেটেন্ট পেয়েছে।
যৌথ আবিষ্কৃত ‘ইন্টারেক্টিভ কিয়স্ক’ একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল ডিভাইস যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্বয়ংক্রিয় পরিষেবা দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
স্বয়ংক্রিয় এ কিয়স্কের সাহায্যে শ্রম খরচ কমার পাশাপাশি ব্যবসার পরিষেবা ও গতি বাড়বে বলে দাবি গবেষকদের।
গবেষক ইসমত জেরিন বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের মেয়ে। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টক্লিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির শিক্ষার্থী। অপর গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের ট্রায়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার পূর্ব মহেশচর গ্রামের ছেলে।
গবেষকরা জানান, গ্যাজেটটি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে সক্ষম। এর মাধ্যমে খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র, কর্পোরেট অফিস কিংবা সেবা কেন্দ্রে স্থাপন করে গ্রাহকদের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রক্ষা করা যাবে।
শপিং মলে বা স্টোরে ঢোকার পর ক্রেতারা এ গ্যাজেটের সাহায্যে সহজেই পণ্যের তালিকা, মূল্য এবং শপিং মল বা সুপারশপে পণ্যটি কোথায় আছে, তা দেখতে পারেন।
দোকানের কর্মচারীদের কাছে গিয়ে বারবার জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে ডিভাইস থেকে এক ক্লিকেই সব তথ্য পাওয়া যাবে। কিয়স্কের মাধ্যমে গ্রাহকরা পছন্দের পণ্য নির্বাচন করে সরাসরি অনলাইনে পেমেন্টও করতে পারেন।
এ পদ্ধতিতে তাদের সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি লেনদেনেও স্বচ্ছতা তৈরি হবে। ডিসকাউন্ট বা বিশেষ অফারের তথ্যও একই জায়গায় পাওয়া যাবে। এছাড়া কোনো পণ্যের বিষয়ে বাড়তি তথ্য প্রয়োজন হলে গ্যাজেটটির ‘প্রশ্ন জিজ্ঞাসা’ অপশনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক উত্তর পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে বিক্রেতাদের জন্য ইন্টারেক্টিভ কিয়স্ক একটি অত্যাধুনিক ব্যবসায়িক সমাধান। কর্মচারীর সংখ্যা কম থাকলেও কিয়স্কের মাধ্যমে গ্রাহকরা নিজেরাই প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরিষেবা পেয়ে যাবেন, ফলে কর্মীদের চাপ অনেকটাই কমে যাবে। কিয়স্কের পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে ক্রেতারা সরাসরি বিল পরিশোধ করতে পারবেন, ফলে লেনদেনের স্বচ্ছতা বাড়বে ও ক্যাশ ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি কমবে।
নতুন পণ্য বা বিশেষ অফার প্রচারণা করা যাবে কিয়স্কে। এছাড়া কিয়স্কের ডেটা বিশ্লেষণ করে বিক্রেতারা জানতে পারবেন কোন পণ্যের চাহিদা বেশি কিংবা কোন সময়ে বিক্রি বেড়ে যায়। অর্থাৎ বিক্রয় সহযোগী গ্যাজেট দিয়েই বিক্রেতা দোকানের পণ্য ও ক্রেতার মনোভবের ওপর গবেষণা করে সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে ব্যবসাকে আরও বড় করতে পারবেন।
যুক্তরাজ্যের ডিজাইন নম্বর ৬৪৩৯৭৬৬-এর অধীনে গবেষক ইসমত জেরিন ও মুহাম্মদ মইনুল ইসলামের এ উদ্ভাবনটি নিবন্ধিত হয়েছে। এর ফলে কোনো তৃতীয় পক্ষ এটি নকল করতে পারবে না। পেটেন্ট পাওয়ার মাধ্যমে গবেষকদ্বয় কেবল নিজেদের উদ্ভাবনী প্রতিভাই প্রদর্শন করেননি, বরং বাংলাদেশের জন্য সুনামও বয়ে এনেছেন।
বিজনেস কিয়স্ক তৈরির বিষয়ে গবেষক ইসমত জেরিন বলেন, দেশের বাইরে আসার পর দেখেছি বড় দোকানগুলো পণ্য ব্যবস্থাপনায় বেশ কাঁচা। ফলে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করতে হয়। এতে খরচ বাড়ে। এছাড়া সুপারশপের কোন সিরিজের পণ্য বেশি সতেজ, কোন সিরিজের পণ্য অপেক্ষাকৃত কম দাম, এগুলো খুঁজতে অনেক বেশি সময় খরচ করেন ক্রেতারা। ফলে এ কিয়স্ক তৈরির আইডিয়া আমার মাথায় আসে। এর মাধ্যমে বিক্রেতা ও ক্রেতা, দুজনেরই সময় বাঁচবে। ক্রেতা সহজেই তার পণ্য সুলভ মূল্যে পাবেন। আবার বিক্রেতাও খুব সহজেই কম কর্মী নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। আমি মনে করি বাংলাদেশের সুপারশপ বাড়ছে, কর্পোরেট হাউজগুলোতে প্রতিনিয়ত কাস্টমার বাড়ছে, সুতরাং এ প্রযুক্তি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও লাভজনক হবে। 
অপর গবেষক মুহাম্মদ মইনুল ইসলাম বলেন, এ উদ্ভাবন বিশ্বব্যাপী নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক হবে। আমাদের কিয়স্ক দিয়ে দরকার হলে সম্পূর্ণ কর্মীবিহীন দোকান বা অফিসও তৈরি করা সম্ভব। কারণ গ্রাহকের যা যা তথ্য প্রয়োজন তা সবই স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া কর্পোরেট সেবাকেন্দ্রগুলোতেও সেবার মান বৃদ্ধি ও কম সময়ে সেবা দেওয়া সম্ভব।
মূলত ব্যবসায় দ্রুত ও সঠিক সেবা দেওয়ার পলিসিকে মাথায় রেখেই এ ডিভাইস উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে জানান এ দুই তরুণ গবেষক। তারা মনে করেন, এ উদ্ভাবনী ডিভাইসটি আধুনিক ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
এসআই
