পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দুর্গম ও সীমান্তবর্তী বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক, নার্স ও জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত।
৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র দু’জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।
জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে ১০ শয্যাবিশিষ্ট বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যাত্রা শুরু করে। প্রথমে ভবনটি ছিল টিনশেড। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যায় উন্নতি করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে নতুন তিনতলা ভবন নির্মাণের পর হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়েছে।
চার ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় ৩০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা হচ্ছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অথচ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি চিকিৎসক, জনবল সংকট ও অন্য অনেক সমস্যার কারণে এখন নিজেই অসুস্থ।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বিলাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল কাঠামো অনুযায়ী কনসালট্যান্ট, গাইনি, মেডিসিন, সার্জারি, অবেদনবিদসহ ৯টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়েছেন একজন।
বর্তমানে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছেন দু’জন চিকিৎসক। তাদের মধ্যে একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট অন্যজন ডেন্টিস্ট। ২৭জন নার্সের মধ্যে কর্মরত রয়েছে মাত্র চারজন। আটজন ল্যাব টেকনিশিয়ানদের মধ্যে মাত্র একজন কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া হিসাবরক্ষক, পরিসংখ্যাবিদ, আয়া, পরিষ্কার-পরিছন্নতাকর্মী, স্টোরকিপারের পদ শূন্য রয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক অবকাঠামো গড়ে উঠলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও লোকবল না থাকায় চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী। তারা পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও লোকবল নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলার পুরিহলা মোনের বাসিন্দা শশধর চাকমা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স, টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যান্য জনবল নেই। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় আমাদের রাঙামাটি–চট্টগ্রামে দৌড়াতে হয়। এলাকার সাধারণ রোগীরা শহরে চিকিৎসা করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিষ্কার-পরিছন্নতাকর্মী রত্না তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, হাসপাতালে ওয়ার্ডবয়, পরিষ্কার-পরিছন্নতাকর্মী, আয়াসহ ১৫জন জনবল থাকার কথা। বর্তমানে পরিষ্কার-পরিছন্নতাকর্মী আছেন মাত্র দু’জন। অন্যপদগুলো খালি রয়েছে। সব কাজ আমাদের করতে হচ্ছে।
সিনিয়র নার্স মুক্তি বড়ুয়া বলেন, প্রতিদিন ৭০-৮০ জন রোগী ভর্তি থাকে। আমাদের দিন-রাত ডিউটিতে থাকতে হয়।
টেকনিশিয়ান মো. ইউনুস বলেন, হাসপাতালের ভবন খুব সুন্দর। তবে লোকবল সংকটে এটি নিজেই অসুস্থ। আগে একজন টেকনিশিয়ান দেওয়া হলেও নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টেকনেশিয়ান না থাকায় সেখানেই থাকে পদায়ন করা হয়েছে।
বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ডা. উম্মে সাইকা বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। মাত্র দু’জন মেডিকেল অফিসার এবং একজন দন্ত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক নেই। দু’জন চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, রাঙামাটি জেলায় এমনিতে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়া বিলাইছড়িতে মাত্র দু’জন চিকিৎসক রয়েছে। পাশাপাশি নার্সের সংকটও রয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
আরএ