ঢাকা, বুধবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

দুই পদে চারজন শিক্ষকের যোগদানে লেখাপড়া বিঘ্নিত গাংনীর এক বিদ্যালয়ে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৫৬, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
দুই পদে চারজন শিক্ষকের যোগদানে লেখাপড়া বিঘ্নিত গাংনীর এক বিদ্যালয়ে

মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের শূন্য দুটি পদে অধিদপ্তর থেকে চারজনকে যোগদান করানোয় নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে চারজন শিক্ষকই প্রতিযোগী হয়ে ক্লাশ নিচ্ছেন বিদ্যালয়টিতে।

 

কেউ বলছেন অনলাইনে আবেদন করে যোগদানপত্র পেয়েছেন, আবার কেউ বলছেন সরাসরি অফলাইনে যোগাযোগ করে আদেশপত্র নিয়েছেন। চার শিক্ষকই হয়ে উঠেছেন বিদ্যালয়ের একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী।

যোগদান করা শিক্ষকরা সকলেই বৈধতা দাবি করলেও বিদ্যালয়ে দুটি শূন্যপদে যোগদান করবেন মাত্র দুজন শিক্ষক। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়টিতে একদিকে যেমন লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে, অন্যদিকে বদলি জটিলতায় বিপাকে পড়েছেন প্রধান শিক্ষক।

দাপ্তরিক আদেশে তিনি সকলেরই যোগদানপত্র নিয়েছেন। তবে প্রতিযোগিতায় চারজনই থাকতে চান একই বিদ্যালয়ে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রথমে নিয়োগপ্রাপ্তরাই সঠিক পন্থায় যোগদান করেছেন, বাকীরা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন বলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন অবসরে যান গত ১৫ নভেম্বর ২০২৪ এবং ফেরদোসী আরা অবসরে যান ২ জানুয়ারি ২০২৫।  

অবসরজনিত কারণে শূন্য দুটি পদে যোগদানের জন্য অনলাইনে আবেদন করেন আকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুমাইয়া নাসরিন, ষানঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিউলি খাতুন, ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লিলুফা ইয়াসমিন, বড়গাংনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিউলিসহ মোট ৩১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা।

আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে আকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুমাইয়া নাসরিন (স্বারক নং-১২০(২১) এবং ষানঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিউলি খাতুনকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি আদেশে গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।  

সে মোতাবেক সুমাইয়া নাসরিন ১৬-০২-২০২৫ বিদ্যালয়ের ০১ নম্বর শূন্যপদে যোগদান করেন। অপর একটি আদেশে শিউলি খাতুনও যোগদান করেন, তবে তথ্য গোপনের অভিযোগে তাকে স্থগিত করা হয়।

এদিকে, ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লিলুফা ইয়াসমিন প্রথমে অনলাইনে আবেদন করলেও আদেশ না পেয়ে অফলাইনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে যোগদানপত্র নিয়ে আসেন। একইভাবে বড়গাংনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা  শিউলিকেও দেওয়া হয় উক্ত পদে নিয়োগ। ফলে, একে একে চারজন শিক্ষিকা একই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

সুমাইয়া নাসরিন বলেন, ‘আমি অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে নিয়মনীতি ও সকল শর্ত পূরণ করে যোগদান করেছি। কিন্তু অজানা এক ক্ষমতার বলে আমাকে আগের স্থলে যেতে বলা হচ্ছে। আমি যেহেতু সর্বপ্রথম এখানে অনলাইনে যোগদান করেছি, সেহেতু এখানেই থাকতে চাই। আমাকে সরানোর জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাপ সৃষ্টি করছেন। শুধু তাই নয়, আমার বিরুদ্ধে ভুল তথ্যও সরবরাহ করা হয়েছে। ’

অপরদিকে লিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি অনলাইনে আবেদন করলেও ত্রুটির কারণে বাতিল হয়ে যায়। পরে অফলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে আদেশ করে নিয়ে আসি। অফলাইনে যোগাযোগের ব্যাপারে বলতে চাই না-আমার একটি মাধ্যম আছে, যা বলা যাবে না, বুঝে নিতে হবে। ’

শিক্ষিকা শিউলি খাতুন বলেন, ‘আমি ষানঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ বছর চাকরি করেছি। বয়স ও দূরত্বের বিষয় বিবেচনায় আমাকে অধিদপ্তর থেকে গাংনী থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। আমি যোগদান করেছি, কিন্তু শুনছি একই পদে চারজনকে বদলি করা হয়েছে। এটি উপজেলা ও জেলা কর্মকর্তাদের ভুলের কারণেই ঘটেছে। ’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান কাজল বলেন, ‘২০২৪ ও ২০২৫ সালে দুটি শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসারকে জানালে কয়েকদিন পর শাম্মিয়ারা দিপ্তিকে ডেপুটেশনে দেওয়া হয়। এরপর অনলাইনের আবেদনের ভিত্তিতে ১৬-০২-২০২৫ যোগদান করেন সুমাইয়া নাসরিন। তার কিছুদিন পর লিলুফা ম্যাডামও অধিদপ্তর থেকে ডেপুটেশনে আসেন। পরে তিনি অফলাইনে যোগাযোগ করে বদলির আদেশ নিয়ে আসেন। এভাবে মোট চারজনকে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেন না বলে এড়িয়ে যান।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নুর মোহাম্মদ সামসুদ্দিন বলেন, ‘যারা অনলাইনে আগে আবেদন করে যোগদান করেছে তারাই সঠিক। যারা পরে আবেদন করেছেন তারা বৈধ হবেন না। ’

এসএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।