ঢাকা, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২, ১০ মে ২০২৫, ১২ জিলকদ ১৪৪৬

বসুন্ধরা শুভসংঘ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬ জনকে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৪৮, মে ১০, ২০২৫
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬ জনকে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ

ঢাকা: সারা দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার অসহায় শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে পড়াশোনার খরচ দিচ্ছে দেশসেরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। দরিদ্র পরিবারে অভাবের সঙ্গে নিত্য যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠা এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে বসুন্ধরা টাকার অভাবে থেমে থাকবে না কারো পড়াশোনাশুভসংঘের মাধ্যমে তাদের পড়াশোনার খরচ দেওয়া হচ্ছে।

এই শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। মেডিক্যালে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন অনেকে।

দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬ জন মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতি মাসে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করছেন। তাঁদের কয়েকজনের অনুভূতি তুলে ধরেছেন জাকারিয়া জামান

প্রতিভা তঞ্চঙ্গা

জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ

আমার মা একজন এনজিওকর্মী ছিলেন। তাঁকে দেখে ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল আমিও মানুষের সেবা করব। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেও বড় কোনো এনজিওতে উচ্চপদে চাকরি করব আর মানুষের পাশে দাঁড়াব।


সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মায়ের চাকরি চলে যাওয়া। সে বছর এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারিনি। কারণ ফরম কেনার সামর্থ্য ছিল না আমার পরিবারের। উপায় না পেয়ে নিজেই একটি এনজিওতে ছোট পদে চাকরি শুরু করি।


২০২৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিই এবং সৌভাগ্যক্রমে আমার চান্স হয়। চাকরি ছেড়ে ঢাকায় কিভাবে পড়ব ভেবেও স্রষ্টার ওপর ভরসা রেখে চলে আসি ঢাকায়। পরিবারের কথা তত দিনে আমার বিভাগের সব শিক্ষক অবগত ছিলেন। একজন শিক্ষক আমাকে বসুন্ধরা শুভসংঘের কথা বলেন। আমি বৃত্তির আবেদন করি।

আমার বৃত্তির ব্যবস্থা হয়। বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে দেওয়া এই বৃত্তি আমার পড়ালেখার জীবন সহজ করে দিয়েছে। এখন বই-খাতা কেনা, খাবারের খরচ—সব প্রয়োজন আমি এই টাকায় মেটাতে পারি। বসুন্ধরা শুভসংঘের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার মতো আর্থিকভাবে অসচ্ছল হাজারো শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

মো. সোয়াইব আহমেদ

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

বাবা মারা গেছেন ২০১৮ সালে। সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর মা প্রতি মাসে ১০ হাজার ৭০০ টাকা পেনশন পান। এই টাকায় সংসার চালানোই যেখানে কঠিন, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া যেন স্বপ্নের বাইরে চলে গিয়েছিল। মা তবু আশা ছাড়েননি। প্রতি মাসে যতটুকু পারেন, দুই হাজার টাকা আমাকে দেন। সেটিও তাঁর সাধ্যের বাইরে গিয়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় বাড়ির আশপাশের অনেকেই বলেছিল, টাকা নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কী হবে পড়াশোনা না করে কিছু কাজ শেখো। কারো কথা গায়ে না মেখে লড়াই চালিয়ে গেছি, কিন্তু ভেতরে ভেতরে জানতাম, একা এই পথ চলা অসম্ভব। আমার এমন কঠিন এবং অন্ধকার ঘনিয়ে আসা সময়ে আলোর পথ দেখায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। তাদের সহযোগিতা শুধু টাকার নয়, সেটি ছিল সাহস, ভালোবাসা আর বিশ্বাসের হাতছানি। যে মানুষগুলো আমাকে চিনত না, তারাই আমার পাশে দাঁড়াল। আজ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী, শুধু নিজের চেষ্টা নয়, মায়ের আত্মত্যাগ আর বসুন্ধরা শুভসংঘের সহানুভূতির কারণেই। বাবার অনুপস্থিতি আর আর্থিক টানাপড়েনের মাঝেও আমি এগিয়ে চলেছি ভবিষ্যতের জন্য, মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। বসুন্ধরা শুভসংঘের মতো করে অসহায় মানুষের পাশে থাকতে চাই সব সময়।

উম্মে হামিদা

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ

কৃতজ্ঞতা জানাই বসুন্ধরা গ্রুপকে। কিভাবে বিনা স্বার্থে অন্যের পাশে দাঁড়ানো যায়, তা আমি শিখেছি বসুন্ধরা গ্রুপের নানা উদ্যোগ দেখে। চার ভাই-বোনের মধ্যে আমি বড়। পরিবারের সব খরচ মিটিয়ে আমাদের পড়ালেখা চালানো আমার বাবার জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। তাই নিজের খরচ নিজে চালিয়ে আমি পড়াশোনা করি। ইন্টার লাইফ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় ভর্তিযুদ্ধ। পড়াশোনার পাশাপাশি আমাকে যুদ্ধ করে এক্সাম দিতে হয়। সারা দিন টিউশনি করে ক্লান্ত হয়ে যেতাম, পড়াশোনায় মন বসত না। সময়ও পেতাম না। সব সময় মনে হতো, আরেকটু সময় পেলে আমি আরো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারতাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই। ভর্তি হওয়ার পর যখন গ্রাম থেকে নতুন শহরে আসি, তখন নিজের ভেতরে অনেক দুশ্চিন্তা কাজ করতে থাকে। কিভাবে এখানে থাকব, নিজের খরচ কিভাবে চালাব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। নিজের ছোট বোনের টিউশনির টাকা নিতে হতো খরচের জন্য, যা আমার জন্য খুব লজ্জার ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বছর আমার খুব কষ্টে কেটেছে। কোনো টিউশনিও পাচ্ছিলাম না, যা দিয়ে খরচ চালাতে পারতাম। পরীক্ষার ফি ও অন্যান্য খরচ কিভাবে দেব, তা-ও বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। আল্লাহর রহমতে বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে আমার বৃত্তির ব্যবস্থা হয়ে যায়। পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি যে দুশ্চিন্তাগুলো ছিল, সেগুলো দূর করতে পেরেছি শুধু বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য। মাসে মাসে যে পরিমাণ বৃত্তি পাই, তা দিয়ে আমার খরচ মিটে যায়। দোয়া করবেন, আমিও যেন বড় হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের মতো মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। সবার পাশে নিঃস্বার্থভাবে থাকতে পারি। আমরা সবাই যেন আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি, আমাদের মা-বাবার ইচ্ছা যেন পূরণ করে তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি। আবারও ধন্যবাদ বসুন্ধরা গ্রুপকে।

মো. স্বাধীন হোসেন

তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট

অন্য সবার মতো আমার শিক্ষাজীবনের শুরুটা এতটা মসৃণ ছিল না। শৈশবেই ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে আমার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। পরিবার আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়। পরে মা গ্রামের এক দূরসম্পর্কের মামার কাছ থেকে জানতে পারেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য খুলনায় একটি সরকারি বিদ্যালয় আছে, যেখানে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া শেখানো হয়। মা আমাকে সেখানে ভর্তি করিয়ে দেন। মায়ের স্বপ্ন ছিল আমাকে সমাজের বোঝা না বানিয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা।

২০২১ সালে মাধ্যমিক স্তর শেষ করি। নড়াইল সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের সরকারি হোস্টেলে আবাসিক থেকে আশার আলো মহাবিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করি। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করি। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাবার আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসংক্রান্ত খরচ আমার নিকট আত্মীয়রা সম্মিলিতভাবে বহন করে। কারণ আমার বাবা একজন দিনমজুর। আমি ও আমার পরিবার মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়ি। কারণ আশঙ্কা ছিল শুধু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণেই হয়তো আমার পড়ালেখা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারব না, ঠিক তখনই মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমার পাশে এসে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। তাদের সহযোগিতায় এখন আমি নির্বিঘ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছি। অন্তরের অন্তস্তল থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ ও বসুন্ধরা শুভসংঘের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

মেহেরীন আফরিন মিতু

আইন ও বিচার বিভাগ

মা-বাবা ও তিন ভাই-বোন নিয়ে আমার পরিবার। খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় আমার বেড়ে ওঠা। প্রত্যন্ত এলাকা, যেখানে একজন ভালো টিচার পাওয়া কষ্টসাধ্য, সেখানে একটি ভালো পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ার স্বপ্ন অনেকটাই বিলাসিতা ছিল। আর আমি সেই স্বপ্ন বিলাসী। আল্লাহর রহমতে নিজের চেষ্টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও বিচার বিভাগে পড়ার সুযোগ পাই। কিন্তু যেখানে কষ্টের শেষ ভেবেছিলাম, সেখান থেকেই যেন নতুন করে কষ্টের সঙ্গে আবার সাক্ষাৎ হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা। তাঁর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন। ভালো করে চোখেও দেখতে পান না।

নিজের চিকিৎসা খরচসহ ছোট ভাই-বোনগুলোর পড়াশোনা এবং পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। মাসের খরচ চাইতে বিবেকে বাধত। টিউশনি করেও খুব একটা লাভ হয়নি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলাম দিন দিন। তবে আল্লাহ আমাকে নিরাশ করেননি। এই বিপদের সময় আমি পাশে পেয়েছি বসুন্ধরা শুভসংঘকে।

প্রতি মাসে তাদের দেওয়া আর্থিক অনুদান আমার চিন্তার ভার কতখানি লাঘব করেছে বলে বোঝানো যাবে না। বসুন্ধরা শুভসংঘের এই নিঃস্বার্থ অবদান আমিসহ অনেক শিক্ষার্থীকেই তাদের স্বপ্নের পথে হাঁটতে সাহায্য করছে। বসুন্ধরা শুভসংঘ ও বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা, যাদের কারণে আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বেঁচে আছে আজও।

মো. সিয়াম আলী

নৃবিজ্ঞান বিভাগ

জীবনের কঠিনতম মুহূর্তে পাশে পেয়েছি বসুন্ধরা শুভসংঘকে। অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা বসুন্ধরা গ্রুপ ও বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি। তাদের দেওয়া শিক্ষাবৃত্তি আমার পড়াশোনার জার্নিকে সহজ করেছে। বর্তমানে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। গত দুই বছর আমার কোনো সহায়তার প্রয়োজন হয়নি। কারণ আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। আমার মেজো ভাই শাহরিয়ার শুভ ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এবং তাঁর ইনকাম ভালো ছিল। আমাকেসহ পুরো পরিবারকে সাপোর্ট করতেন তিনি। কিন্তু গত জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বর থেকে গুলিবিদ্ধ হন আমার ভাই। আইসিইউয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। পরিবারের এবং আমার আর্থিক সংকট দেখা দিল। সেই সময়ে আমি বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে স্কলারশিপ চেয়ে আবেদন করি এবং আল্লাহর রহমতে পেয়েও যাই। আলহামদুলিল্লাহ এখন প্রতি মাসে এই টাকা দিয়ে আমার স্বপ্নপূরণের পথ প্রশস্ত হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা অসহায় শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এর বিনিময় হয়তো কখনোই দিতে পারব না, তাঁদের জন্য অনেক দোয়া রইল। আমিও নিজেকে সব সময় মানুষের সেবায় নিয়োজিত রাখব, ইনশাআল্লাহ।

তাসনোভা ফারিন তিসা

ইংরেজি বিভাগ

বসুন্ধরা গ্রুপ যে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে দেশের মেধাবী অথচ আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা অনেক প্রশংসনীয় ও কার্যকর উদ্যোগ। অসহায় শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের দেওয়া এই শিক্ষাবৃত্তি প্রমাণ করে, করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব কেবল একটি শব্দ নয়, বরং সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। সংকটময় মুহূর্তে এই শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে আমি অনুভব করেছি, সমাজে এখনো এমন অনেক প্রতিষ্ঠান ও মানুষ আছে, যারা তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নপূরণে বিশ্বাস রাখে। তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে সহযাত্রী হতে চায়। আমাকে ভবিষ্যতে দায়িত্বশীল, মানবিক ও সেবামূলক মানসিকতাসম্পন্ন একজন নাগরিক হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা দিয়েছে তাদের এই দায়িত্ববোধ। বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি অর্জন আমার জীবনের এক অনন্য প্রাপ্তি, যা আমাকে আনন্দ, গর্ব ও গভীর কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত করেছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে এই বৃত্তি কেবল আর্থিক সহযোগিতা নয়, বরং আমার শিক্ষাজীবনের প্রতি সমাজের আস্থা ও স্বীকৃতির প্রতীক। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতের পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি আমাকে স্বপ্ন দেখতে এবং তা বাস্তবায়নের পথে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে।

মো. সজিব ইসলাম

আইন ও বিচার বিভাগ

দরিদ্র পরিবারে জন্ম আমার। মা-বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। যমুনা নদীর ভাঙনে বাপ-দাদার ভিটা হারিয়ে নানার বাড়িতে এসে বসবাস শুরু করি। বাবার নিজের বলতে কোনো জমি ছিল না। বর্গাজমি চাষ এবং দিনমজুরি করে আমাদের পরিবারের খরচ বহন করতেন বাবা। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেও টাকার অভাবে শহরের ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারিনি। টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোনো কোচিং করতে পারিনি। আল্লাহর রহমতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। পারছিলাম না টাকার অভাবে এখানকার পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে। ভালো পোশাকের ব্যবস্থা করতে, প্রয়োজনীয় বই কিনতে পারিনি। কোনোমতে দুই বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিংয়ের খাবার খেয়ে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছিলাম। এমন সময় পাশে দাঁড়াল বসুন্ধরা শুভসংঘ। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আমার বই, পোশাক এবং খাবার কেনায় সাহায্য করছে। প্রতি মাসে আমাকে খরচের টাকা দিচ্ছে তারা। আশা করি, বসুন্ধরা শুভসংঘ শিক্ষাজীবনের বাকি সময়টুকু এভাবেই পাশে থেকে সাহায্য করে যাবে।

আছিয়া খাতুন

লোকপ্রশাসন বিভাগ

কৃষক বাবা ও গৃহিণী মায়ের দ্বিতীয় সন্তান আমি। আমরা তিন ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচ। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একমাত্র আব্বু। দরিদ্রতায় শৈশব-কৈশোর কাটলেও পড়ালেখায় আর্থিক সমস্যা অনুভূত হয়নি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার কারণে। আমরা তিন ভাই-বোনই শিক্ষার্থী। এসএসসির পর জেলা শহরে সরকারি কলেজে ভর্তি হলেও আর্থিক সমস্যা ও অসুস্থতায় ছেড়ে আসতে হয়। পরে এলাকার কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। তিন ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ চালানো আব্বুর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। বড় আপুর পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়। আমি এলাকার এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিই এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই। কষ্ট করে লেখাপড়া চালাচ্ছিলাম। হঠাৎই আব্বু অসুস্থ হয়ে যান। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন তিনি। সংসারে অভাব নেমে আসে চরমভাবে। পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। অনেক টিউশনি খোঁজ করলেও পাইনি। ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম পড়ালেখা ছেড়ে দেব, ঠিক তখনই বসুন্ধরা শুভসংঘের স্কলারশিপ আমার জীবনে যেন মুক্তির দূত হয়ে এলো। এটি প্রাপ্তির আমার অনুভূতি প্রকাশ করে বোঝানোর মতো না। ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি, আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আমাদের মতো অসহায়দের স্বপ্নপূরণে অবদান রেখে আপনারা প্রমাণ করেছেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময়ই কাজ করছে।
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বসুন্ধরা শুভসংঘ এর সর্বশেষ