বিএবিবিএফ জাতীয় বডি বিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে গত শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) ঘটেছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
শুভর এই আচরণ মোটেও ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশ বডি বিল্ডিং ফেডারেশন। তাদের মতে, শুভর যদি এই ফলাফল পছন্দ না হতো তাহলে শুভ ফেডারেশনকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন। এরপর ফেডারেশন এর ব্যাখ্যা দিত। এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিষয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমকে শুভ বলেন, ‘আপনি ভিডিও দেখে থাকলে দেখবেন আমাকে যখন দ্বিতীয় পুরস্কার দেয়া হয় তখনই আমি স্টেজে মাইক চাই আমাকে মাইক দেয়া হয়নি। আমাকে মাইক দেয়া হলে আমি বিষয়ে প্রশ্ন করতাম। আমি জানতে চাইতাম ম্যান ফিজিক্স নিয়ে। ’
‘আমাকে তো কথা বলার জন্য মাইক দেওয়াই হল না। উল্টো দূর দূর করে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেয়া হল। বিষয়টা তাদের আগে থেকেই ফিক্সিং করা, তাই তারা আমাকে বেশি সময় মঞ্চে রাখবেন না। এটা তো জানা কথা। স্টেজ থেকে নামার পর আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমি একজন অ্যাথলেট। অনেক পরিশ্রম করে, নিজের লাখ লাখ টাকা খরচ করে আমি এখানে আসছি। স্টেজ থেকে নামার পর আমি আমার মেজাজ ধরে রাখতে পারি নাই। তাই এমন আচরণ করেছি। ’
এই পর্যন্ত আসতে নিজের কষ্টের কথা জানিয়েছেন শুভ। বডি বিল্ডিংয়ের জন্য কোনও স্পন্সর থাকে না। নিজের টাকা খরচ করেই এখানে এসেছেন বলে জানান তিনি। শুভ বলেন, ‘একটা গেমের জন্য প্রস্তুত হতে নিজের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়। এখানে তো কোনও স্পন্সর নাই। নিজের জমানো টাকা। বাবার টাকা খরচ করে যদি চুরির শিকার হই তাহলে তো নিজেকে ধরে রাখা যায় না। এখানে তো কোনও প্রাইজমানি নেই। সম্মানের জন্য খেলা। সেই সম্মানটাই তো পেলাম না। ’
‘ফেডারেশন যাকে প্রথম ঘোষণা করলো তার সাইড অবলিগস নাই। সিক্স প্যাক নাই। মোটা বডি। আমিও তো ভাত, পানি খেলে এমন মোটা বডি বানাতে পারতাম। তিন চার দিন পানি না খেয়ে নিজের বডি ঠিক রেখে গেমে নামতে হয়। শরীরকে অমানবিক কষ্ট দিয়ে গেমে যেতে হয়। ’
ফেডারেশনের কাছ থেকে ন্যায়বিচার না পেলে মানববন্ধন করার কথা জানিয়েছেন শুভ। তিনি বলেন, ‘একটা ছেলের ক্যারিয়ার নিয়ে ফেডারেশন খেলতে পারে না। একটা ছেলের লাইফ নিয়ে তারা খেলতে পারে না। আমি প্রয়োজনে মানববন্ধন করবো। আমি ন্যায় চাই। টাকা পয়সা কিছু চাই না। আমি আমার প্রতি ন্যায়বিচার চাই। ’
শুভর মতের সমান্তরালে অবস্থান ফেডারেশনের। তাদের মতে, শুভর এই দাবি অযৌক্তিক। ফেডারেশনের মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম খান নাঈম বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের একটা সমস্যা একবার চ্যাম্পিয়ন হলে তারা ধরেই নেয় পরের বারও তারা চ্যাম্পিয়ন হবে। সে এর আগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, তার আগেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। সে ধরেই নিয়েছিল এবারও সে চ্যাম্পিয়ন হবে। জাজমেন্ট তো আর একজন দেয় না। গেমে ১১ জন বিচারক ছিলেন। তারা তাদের রায় দিয়েছেন এরপর চিফ জাজ ছিলেন পুরো প্যানেল মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ নেই। বডি বিল্ডিংয়ের জাজমেন্ট দক্ষ না হলে বুঝতে পারবেন না। এখানে অনেক বিষয়ের উপর মার্কিং করা হয়। ছয়টি পোজ আছে তার উপরও মার্কিং হয়। এটা আসলে সকলকে বোঝানো সম্ভব না। ’
‘যে প্রথম হয় তার কোনও অভিযোগ থাকে না। যারা দ্বিতীয় তৃতীয় হয় সব অভিযোগ তাদের। যেমন ধরেন ফুটবলে রেফারির সিদ্ধান্তই ঠিক থাকে। সবাই সেটা মেনে নেয়। এখানে শুভ যে কাজটা করেছেন তা ন্যক্কারজনক। ’
শুভর প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে নাঈম বলেন, ‘সে আমাদের কাছে আসতে পারতো। জানতে চাইতে পারতো যে কোনও তাকে দ্বিতীয় ঘোষণা করা হল। সে নিজে কিংবা তার পক্ষের লোক নিয়ে আসতে পারতো ফেডারেশনের কাছে। আমরা জবাব দিতাম। জবাবদিহিতার জায়গাটা তো ছিল। এখন তো এমন কিছু থাকলো না। ’
আগামী সভায় শুভর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বল জানিয়েছেন নাঈম। তিনি বলেন, ‘সে যখন স্টেজের সামনে এমন একটা ঘটনা ঘটালও তখনই আমরা তাকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতাম। কিন্তু আমাদের সব সিদ্ধান্ত সভায় গৃহীত হয়। তাই এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেইনি আমরা। সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে আমরা সকলকে জানাবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
এআর