ঢাকা, শনিবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জুন ২০২৫, ১০ জিলহজ ১৪৪৬

খেলা

সিঙ্গাপুরের দলের আদ্যোপান্ত 

আহমেদ শায়েক, ফুটবল ম্যানেজমেন্ট অ্যানালিস্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:৫১, জুন ৫, ২০২৫
সিঙ্গাপুরের দলের আদ্যোপান্ত 

বাংলাদেশ ফুটবলে দীর্ঘদিন ধরেই একটি প্রচলিত অজুহাত হচ্ছে, আমরা শারীরিকভাবে দুর্বল ও খাটো—এই কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি না। তবে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এই অজুহাত আর খাটবে না।

সম্প্রতি হংকংয়ের বিপক্ষে সিঙ্গাপুর জাতীয় দলের ম্যাচে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের গড় উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি—যেটি ভারত বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একাদশের গড় উচ্চতার সমান। এমনকি গড় বয়সের দিক থেকেও বাংলাদেশ এগিয়ে। বাংলাদেশের গড় বয়স ২৪, যেখানে সিঙ্গাপুরের ২৮। অর্থাৎ, শারীরিক গঠনে বাংলাদেশ এবার পিছিয়ে নেই।

সিঙ্গাপুরের একাদশ কেমন হতে পারে?

কোনো সন্দেহ নেই, সিঙ্গাপুরের মাঠের কৌশল অনেকটাই নির্ভর করছে কে খেলছেন মধ্যমাঠে—কিওগি নাকামুরা না হারিস হারুন, নাকি দুজনই। জাপানি বংশোদ্ভূত নাকামুরা বর্তমানে সিঙ্গাপুর জাতীয় দলে অন্যতম প্রতিভাবান খেলোয়াড়। দারুণ ড্রিবলার, দুর্দান্ত পাসে প্রতিপক্ষ রক্ষণ ভেদ করতে পারেন, এবং যেকোনো সময় ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। অন্যদিকে, হারিস হারুন সিঙ্গাপুর দলের অধিনায়ক এবং একইসাথে দেশটির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি। অভিজ্ঞ এই মিডফিল্ডার শান্ত ও সংগঠিত ফুটবল খেলেন, এবং সঠিক পাসিংয়ের মাধ্যমে খেলা নিয়ন্ত্রণ করেন।

যদি কেবল নাকামুরা ম্যাচ শুরু করেন, তাহলে বুঝতে হবে সিঙ্গাপুর আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়। আর কেবল হারিস শুরু করলে, বুঝতে হবে তারা রক্ষণভাগ সামলে পরিস্থিতি বুঝে আক্রমণে যাবে। উভয়েই খেললে বুঝতে হবে খুব সতর্কতার সাথে অ্যাটাক করবে। যাই হোক না কেন সাথে থাকবেন শাহ শাহিরান—যিনি বল বিতরণে দক্ষ এবং মাঝমাঠে ভারসাম্য তৈরি করেন। এমন পরিস্থিতিতে হামী স্যাহিনকে বেঞ্চে রাখা হবে।

সিঙ্গাপুরের কৌশল ও সম্ভাব্য ফর্মেশন

কাগজে-কলমে কোচ সুতোমু ওগুরা ৪-৩-৩ অথবা ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে খেলালেও বাস্তবে তিনি ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে দল সাজান। এতে হারিস ও শাহিরান মাঝমাঠে বল ঘোরানোর কাজে পিভট হিসেবে থাকেন। উইং থেকে আক্রমণে যাবে গ্লেন ক্বেহ ও হারিস স্টুয়ার্ট, যারা দু’পাশের উইঙ্গেই বদলাবদলী করে খেলেন। গ্লেন বাম পায়ে দ্রুতগতির খেলোয়াড়, যিনি  ক্রমাগত আগেভাগে ক্রস দিতে থাকেন। হারিস ছোট ছোট পাস ও ড্রিবল দিয়ে প্রতিপক্ষ উইংব্যাককে চাপে রাখেন।

স্ট্রাইকিং এ প্রথম পছন্দ শাওয়াল আনোয়ার চোটে পড়ায় ইলহান ফান্ডি অথবা ইকসান ফান্ডি জায়গা নিতে পারেন। তারা দু’জনই ছ’ফুট লম্বা এবং সেট-পিসে বড় হুমকি।

রক্ষণ ও গোলরক্ষক

সেন্টারব্যাক পজিশনে নির্ভরযোগ্য লিওনেল ট্যান ও সাফুয়ান বাহারুদ্দিন যে খেলবেন তা ধরেই নেয়া যায়। সাফুয়ান মালয়সিয়ান সুপার লীগের সেরা দল সেলাঙ্গর এফসি-তে কালেভদ্রে মাঝমাঠেও খেলেন। এর জন্য সে বল বানানোতে বেশ পারদর্শী। তাকে বল বানাতে না দিলে সিঙ্গাপুরের আক্রমণ অনেকটাই স্লো হবে। লিওনেল তুলনামূলকভাবে পাওয়ারফুল, হেডিং এ ভালো কিন্তু ধীরগতির, তাই তাকে গতিতে হারানো সম্ভব।

ডানদিকে আছেন আকরাম আজমান কিংবা ইরফান নাজিব। আকরাম আধুনিক ফুলব্যাক, যিনি ফুলব্যাক থেকে উইং বা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে গিয়েও সাপোর্ট দিবেন। পেপ গুর্ডিওলা যেভাবে ফুলব্যাক খেলান। আর ইরফান রক্ষণে বেশি জোর দেন। যদি নাকামুরা শুরু করেন, তাহলে ইরফানকে রেখে ডিফেসিভ সাপোর্ট দেয়া হবে যাতে ডিফেন্স শক্ত থাকে। বামদিকে রয়েছে নির্ভরযোগ্য আমিরুল আদলি, যিনি জানেন লেফট সেন্টরব্যাক সাফুয়ান ভালো পাস দিবে এবং সামনে গ্লেন অনেক পেস নিয়ে খেলে তাই সে পুরা সময়ই মাঝ মাঠ ও উইং থেকে আক্রমণে এটাক করার চেষ্টায় থাকবেন।

গোলপোস্টে থাকবেন অভিজ্ঞ ইজওয়ান মাহবুদ। তিনি তেমন লম্বা নন। তবে আক্রমণ প্রতিহত করা এবং সাথে সাথে লং পাসে দক্ষ। বাংলাদেশের আক্রমণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার কাছ থেকে গ্লেন ও স্ট্রাইকারের দিকে লম্বা পাস আসবে, যা বিপদের কারণ হতে পারে।

কিছু অনন্য দিক

বাংলাদেশ দলের দুই ভাই সাদ এবং তাজ এর মতো সিঙ্গাপুর দলে রয়েছে দুই ভাই—ইলহান ও ইকসান ফান্ডি, হারিস ও রাইয়ান স্টুয়ার্ট। হ্যারিস-রাইয়ানদের পিতা ওয়েলশের হলেও তারা সিঙ্গাপুরের হয়েই খেলছেন। উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরের প্রতিটি পুরুষ নাগরিকে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস'-এর অংশ হিসেবে মিলিটারি ট্রেনিং এ অংশ নেন। গ্লেন এবং ইলহান এই ট্রেনিং নিয়েছেন। উল্লেখ্য বাংলাদেশের তারিক কাজিও সদ্য ফিনল্যান্ড থেকে মিলিটারি ট্রেনিং করে ফিরেছেন।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরিকল্পনা

হাভিয়ের ক্যাবরেরার পরিকল্পনায় মোরসালিন-ইমন-রাকিব ত্রয়ী আক্রমণে থাকা উচিত—তাদের গতি ও প্রেসিংয়ের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরকে চাপ দেওয়া সম্ভব। মাঝমাঠে হামজা-শমিত-হৃদয়কে রেখে নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে রাখা যেতে পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে, লেফটব্যাক-রাইটব্যাক এ কাকে খেলানো হবে? সাদ থাকবে কোনও এক পজিশন তা কনফার্ম, কিন্তু আরেক উইংব্যাক কে খেলবে এতেই ম্যাচ এর ভাগ্য অনেকটুকুই নির্ভর করছে।

এআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।