ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

একই মাঠে ফুটবলার-ক্রিকেটারের মিলনমেলা

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫
একই মাঠে ফুটবলার-ক্রিকেটারের মিলনমেলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশে ক্রিকেট এখন বিনোদন ও উচ্ছ্বাসের মাধ্যম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্রিকেটকে ঘিরে বর্তমান প্রজন্ম স্বপ্ন দেখে।

যে দেশে বিশ্ব ক্রিকেটের সব ফরমেটের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের জন্ম, যে দেশটি বলে-ক’য়ে হারিয়ে দেয় উপরের সারির দলগুলোকে, সে দেশে ক্রিকেট এগিয়ে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে, আশ্চর্যের কথা হলো বর্তমান ক্রিকেট পাগল দেশে পিছিয়ে নেই ফুটবলও।

আন্তর্জাতিক বা জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে ফুটবলের তুলনা না হলেও ঢাকা শহরের পাড়া-মহল্লায় ক্রিকেটের থেকে এগিয়ে ফুটবল। অলিতে-গলিতে যেসব ফাঁকা মাঠ রয়েছে সেখানে গেলেই বোঝা যায় ফুটবলে নতুন প্রজন্মের টান।

শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) সূর্য ওঠার পরপরই ঢাকার খিলগাঁওয়ে অবস্থিত তিলপাপাড়া জোড়পুকুর মাঠ, খিলগাঁও সরকারি বিদ্যালয়ের মাঠ, খিলগাঁও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের পাশের মাঠ (সরকারি বালুর মাঠ) ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। সেখানে শতশত ক্রিকেটার আর ফুটবলার মেতে উঠেছেন খেলার আনন্দে। প্রতি শুক্রবার ভোর থেকেই মাঠগুলোতে জায়গা নিতে খেলার আগেই প্রতিযোগিতা লেগে যায় স্থানীয় খেলোয়াড়দের। কোনো দলের খেলা শেষ হলেই অপেক্ষায় থাকা আরেকটি দল মাঠ দখলের লড়াইয়ে নামে।

স্বল্প পরিসরে স্বল্প সময়ের জন্য ক্রিকেট খেলতে যাওয়া কিশোর থেকে মধ্যবয়সীরা জায়গা পেলেই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মাঠে নেমে পড়েন। সেখানে চোখে পড়ে বুটজোড়া পায়ে গলিয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে বুড়োদের ফুটবল আনন্দ। একই মাঠে পাশাপাশি হচ্ছে ফুটবল আর ক্রিকেট ম্যাচ।

প্রতি শুক্রবার ভোর থেকেই মাঠে জমায়েত হন স্থানীয় খেলোয়াড়রা। সপ্তাহের এদিনটি তাদের কাছে বিশেষ কিছু। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়াতে আইসিসি ট্রফি জেতার পর ২০০০ সালে টেস্ট খেলার মর্যাদা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ ক্রিকেটাঙ্গনের অন্যতম পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। লাল-সবুজদের প্রতিনিধিরা একের পর এক পৌঁছে যাচ্ছে নতুন নতুন উচ্চতার শিখরে। মাঠগুলোতে ঘুরে দেখা গেল পুরোপুরি পেশাদার ক্রিকেটারদের মতোই ব্যাট-বলের প্রতিযোগিতা।

ব্যাটসম্যান বোলারের মাথার উপর দিয়ে বল সীমানা ছাড়া করলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠছে খেলা দেখতে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকরা। তাদের চিৎকার থামে না যখন বোলার তার প্রতিবেশী বন্ধুর স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন। দেখা যায় টাইগারদের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের নকল করে উইকেটরক্ষকরা ফিল্ডার সাজাচ্ছেন মাঠে। ফিল্ডারদের বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠানোর আগে জোর গলায় বলে উঠছেন ‘কিপার কিপার’ নতুবা ‘বোলার’ ‘বোলার’।

প্রতিটি মাঠেই দেখা যায় ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলাররা ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। বাংলাদেশে একসময় ছিল ফুটবলের স্বর্ণযুগ। ফুটবলের নেশায় পুরো দেশ মত্ত ছিল। মোনেম মুন্না-কায়সার হামিদ-শেখ মোহাম্মদ আসলামরা ছিলেন এদেশের ফুটবলের দেবদূত। সে দেশে এখন ফুটবলের সাফল্য বলতে বিশ্বকাপের বাছাইকেন্দ্রিক সাফল্যকে ধরা হয়। তারপরও খিলগাঁওয়ের এ মাঠগুলোতে ফুটবলের আগ্রহে ভাটা পড়েনি। নিজ নিজ দায়িত্বে রঙিন জার্সি গায়ে, পায়ে বুটজোড়া গলিয়ে স্থানীয়রা নেমে পড়েন মাঠে। নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে খেলেন সব বয়সের ফুটবলাররা। ক্রিকেটের থেকে জনপ্রিয়তায় কোনো অংশেই কম নয় সেখানকার ফুটবল।

স্থানীয় কিছু ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বড় ফুটবলার হওয়াকে ধ্যান-জ্ঞান করে বসেননি তারা। সবাই মিলে প্রতি শুক্রবার ফুটবলের টানে মাঠে আসেন। এর জন্য আগের দিনই (বৃহস্পতিবার) প্রস্তুতিপর্ব সেরে রাখেন তারা। কখন আসবেন, কখন খেলা শুরু করবেন, মাঠের কোন দিকটায় খেলবেন, কখন শেষ করবেন তা আগের দিনই আলোচনা করে রাখেন তারা।

এমিলি, জাহিদ, মামুনুলরা একদিন মেসি, নেইমার, রোনালদোকে টেক্কা দিয়ে বিশ্বকাপের মাঠ মাতাবেন এই ‘দিবাস্বপ্ন’ দেখেন না খিলগাঁওয়ের স্থানীয় ফুটবলাররা। তাদের ইচ্ছা মাঠের পরিবেশ ঠিক রেখে, যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে শুক্রবার ভোর থেকে ফুটবল খেলতে। কোনো ক্লাবের হয়ে খেলতে ইচ্ছে হয় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকেই জানালেন ‘সুযোগ হলে অবশ্যই ক্লাব পর্যায়ে ফুটবল খেলব’।

বাংলাদেশে প্রতিভার অভাব আছে বললে ভুল বলা হবে। খিলগাঁও সরকারি বিদ্যালয়ের মাঠে দেখা মেলে একদল ক্ষুদে ফুটবলারের। তাদের বয়স খুব বেশি হলে ১১-১২ বছর হবে। তাদের কথা বলার সময় নেই। আপন মনে গোল হয়ে নিজেদের মধ্যে ফুটবল অনুশীলনে ব্যস্ত তারা। ছোট ছোট এসব ছেলেদের আনাড়ি পায়ের ঝলক দেখে বুঝতেই পারবেন না যে, তারা শখের বসে পায়ে বুট গলিয়েছে। ডেকে একজনের স্বল্প সময় পাওয়া গেল। নাম জানানোর সময়ও পেল না! জানালো ‘ফুটবল খেলতে গেলে আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে সবসময়। এজন্য মাঝে মাঝে অভিভাবকরা মাঠে আসতে দিতে চান না। তারপরও আমরা সবাই মিলে শুক্রবার এখানে চলে আসি। ’

খিলগাঁও বালুর মাঠে দেখা যায়, স্থানীয় ‘জাগরণী ক্রিকেট একাডেমি’র ক্ষুদে ক্রিকেটারদের। সকাল নয়টার কিছু পরেই তারা মাঠে নেমে পড়ে। স্থানীয় ফুটবলার আর ক্রিকেটাররা যখন নিজেদের খেলা শেষে ঘরমুখী তখনই ফাঁকা মাঠে নেমে পড়েন ক্রিকেট শিখতে আসা ক্ষুদে ক্রিকেটাররা।

যতই দিন যাচ্ছে, ততই সাধারণ মানুষের ক্রিকেটের প্রতি টান বাড়ছে। এর বড় একটা কারণ, সাকিব-মুশফিক-নাসির-সাব্বির-তামিমদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হওয়া। এত ফুটবল-বৈরী পরিবেশের মধ্যে কীভাবে ফুটবলের জাগরণ ঘটানো সম্ভব, তা সত্যি ভাবনার বিষয়। তবে, ভাবিয়ে তুলছে না খিলগাঁওয়ের স্থানীয় ফুটবলারদের। তাদের মতে, এতসব ভেবে কাজ কী!

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫
এমআর/এমজেএফ/

** সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্রিকেট উত্তাপ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।