ঢাকা: বাংলাদেশের ফুটবলে যেন অশুভ শক্তির ছায়া লেগে আছে। কোনো তান্ত্রিক বা জাদুকরের কালা জাদুতে দিনদিন যেন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে লাল-সবুজের ফুটবল।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে একে একে হারের হতাশার পর এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত সাফ ফুটবলের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৪-০ গোলের পরাজয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও মালদ্বীপের কাছে ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত হয় মামুনুলরা। ভুটানের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে মাঠে নামার আগেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পরে বাংলাদেশ। ভারতের কেরালায় সাফের চলতি আসরে মামুনুলদের প্রত্যাশা ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার, সেখানে খেলা হল না সেমিফাইনালেও!
কেন এমন হলো? জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খোলোয়াড় শফিকুল ইসলাম মানিকের কাছে। উত্তরে তিনি জানালেন, সাফে খেলতে একটি দলের যতটুকু পরিণত হওয়া দরকার আমাদের দল ততটা পরিণত নয়। আমাদের খেলোয়াড়দের সীমাবদ্ধতা অনেক। শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা যেমন পিছিয়ে তেমন টেকনিক্যাল দিকেও। প্রতিটি দলেরই নিজস্ব কিছু টেকনিক থাকে যা দিয়ে তারা খেলা চলাকালের কঠিন সময় থেকে দলকে বের করে আনতে পারে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমাদের এই দলটির সেই সক্ষমতা নেই। দু’চার জন যারা আছেন, তাদের দিয়ে তো আর সব সম্ভব না।
প্রথম ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি কোচ মারুফুলের শিষ্যরা। উড়ে গেছে ৪-০ গোলের ব্যবধানে। তবে, পরের ম্যাচে প্রথমার্ধে ১-০ তে এগিয়ে থাকা মালদ্বীপের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধের ৮৬ মিনিটে হেমন্ত বিশ্বাসের গোলে ১-১ এ সমতায় ফিরলেও শেষ ১০ মিনিটের মধ্যে মালদ্বীপের আরও ২টি গোল হজম করে মারুফুল হকের দল। তবে, ম্যাচের শেষ ১০ মিনিটে বাংলাদেশ যদি একটু কৌশলী হয়ে খেলতো তাহলে হয়তো সেমিফাইনালের লড়াইয়ে টিকে থাকার সম্ভবনা থাকতো বলেও মনে করেন মানিক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই ম্যাচে ড্র করতে পারতো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রক্ষণভাগ অরক্ষিত রেখে আক্রমণে গিয়েই ৩-১ এ হারতে হয়েছে। আসলে এই ম্যাচে আমরা কৌশলী হয়ে খেলতে পারিনি। একটু কৌশলী হলেই আমরা সাফের সেমিফাইনালে খেলতে পারতাম।
শুধুই কি মাঠের কৌশল বা প্লেয়ারদের শারীরিক-মানসিক অদক্ষতার অভাবেই বাংলাদেশ দলের এই অবস্থা নাকি আরও কোনো বিষয় আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই সাবেক ফুটবল তারকা বলেন, আসলে আমরা ইতিবাচকভাবে ভাবতে পারি না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি ম্যাচে মাঠে যত ইতিবাচক থাকা যায় তত ভালো। এতে করে দলীয় পারফরম্যান্সও ইতিবাচক হয়। তাছাড়া কথায় কথায় কোচ পরিবর্তনও দলের সার্বিক পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কারণ, এতে করে কোচেরর সঙ্গে খেলোয়াড়দের সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয়। আর কোচের সঙ্গে খেলোয়াড়দের সমন্বয় না থাকলে দলীয় ফলাফল কখনও ভালো হবে না সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের দলে গেল তিন মাসে তিন তিন জন কোচ পরিবর্তন হয়েছে, যা দিন শেষে দলের জন্য খারাপই হয়েছে।
এর বাইরেও সাফে বাংলাদেশ দলের এমন শোচনীয় হারের পেছনে ভাগ্যকে দায়ী করে শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, প্লেয়ারদের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ম্যাচ জিততে ভাগ্যও লাগে। এমনও অনেক ম্যাচ আছে যেখানে শেষ মিনিটের গোলে একটি দল জিতে যায়। মালদ্বীপের বিপক্ষেও হয়েছে তাই। দলটির সঙ্গে ৮৬ মিনিটে সমতা আনা বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো হলে খেলার শেষ মুহূর্তের গোলে জিততে পারতো। কিন্তু হলো উল্টো।
কীভাবে ফুটবলের এই সংকট থেকে বের হয়ে আসা যায়? উত্তরে মানিক জানান, বাংলাদেশের ফুটবল দলকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ফুটবলে নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে হবে, যারা শারিরীক, মানসিক ও টেকনিক্যালি দক্ষ হবে। যাদের মধ্যে গোল করার প্রবণতা থাকবে। বেশি বেশি ফুটবল একাডেমি তৈরি করে পর্যাপ্তসংখ্যক খেলোয়াড় বের করে আনতে হবে। এর ফলে যেমন বর্তমানের মতো দু’তিন খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে তেমনি দলও হবে দুর্দান্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এমজেএফ/