ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন ইভেন্টে প্রথম স্থান করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ছাত্রী হামিদা আক্তার জেবা। ১৭টি দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার তত্ত্বাবধানে ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও এশিয়ান অ্যাথলেটিক ফেডারেশন।
প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করে উচ্ছ্বসিত জেবা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সাফল্যের গল্প।
নিজের বেড়ে ওঠা নিয়ে জেবা বলেন, আমার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া হলেও পড়াশোনা করেছি ঢাকায়। স্কুল ছিল ভাষানটেক উচ্চ বিদ্যালয় আর কলেজ ছিল আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। ছোটবেলা থেকে আমার ক্রীড়ার প্রতি আকর্ষণ ছিল। কিন্তু খেলার মাঠের সুবিধা ছিল না। বাসার গলিতে ভাইয়ারা ক্রিকেট খেলতেন। আমিও যোগ দিতাম। ফুটবল, হ্যান্ডবল সব খেলায় অংশগ্রহণ করতাম। স্কুল লাইফে হ্যান্ডবল খেললেও কলেজে গিয়ে চ্যাম্পিয়ান হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ক্রীড়াচর্চার গল্প তুলে ধরে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দুই বছর পর্যন্ত আমি জানতাম না বিশ্ববিদ্যালয়েও খেলার সুযোগ আছে। পরে যখন হলে আসলাম এখানে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মেয়েরা খেলে। আমিও নিয়মিত যাতায়াত করি। শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক শাহজাহান আলী আমাকে সহযোগিতা করে। নিয়মিত অনুশীলনের ফলে হলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আমি চ্যাম্পিয়ান হই।
ম্যারথন প্রতিযোগিতার নিজেকে প্রস্তুত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, হ্যান্ডবল-ফুটবলসহ বিভিন্ন ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করলেও ২০১৮ সালে ম্যারাথন অনুশীলন করি। যখন প্রথমবারের মতো এই ইভেন্ট খোলা হলো, আমি অনলাইনে আবেদন করি। করোনা ভাইরাসের কারণে মাত্র ২০০ জনকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। এর কারণে আমাদের বাছাইটা কঠিন ছিল। পরে আমি চেষ্টা করলাম এবং সফল হলাম।
এমন সাফল্যের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জেবা বলেন, প্রথম হওয়ার পর অনেকেই অভিনন্দন ও শুভাকামনা জানাচ্ছেন। অনেকে মেয়ে আমার থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। দেখা করতে আসছেন। অন্যরকম সম্মান করতেছেন। সবমিলিয়ে আমি খুবই উপভোগ করছি। দীর্ঘপথচলায় প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ঢাবির এ শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সমাজ এখনো মেয়েরা খেলাধুলা করবে তা সহজে নিতে পারে না। পরিবারও নিরুৎসাহিত করে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস ছিল আমি পারব। এজন্য আমি নিজে নিজে চেষ্টা করেছি। মেয়েদেরকে নিরাপত্তা সমস্য সবসময় মোকাবিলা করতে হয়। আর মেয়েরা দৌড়ালে রাস্তায় লোকজন বাজেভাবে তাকাতো এটা খারাপ লাগতো। এছাড়া আর্থিকভাবেও প্রতিবন্ধকতা ছিল। রেজিস্ট্রেশন খরচ আর ক্রীড়ায় যুক্তদের আলাদাভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে হয় নিজের ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য। আলাদা রুটিন ছিল। এর কারণে আর্থিকভাবে একটু হিমশিম খেতে হয়েছে। অনেক কিছু নিজেকে ম্যানেজ করতে হয়েছে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পড়াশোনা শেষ দিকে। এখন এমবিএ চলছে। খেলাধুলার ওপর আরো উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার স্বপ্ন আছে। পাশাপাশি আমি ভালো কোথাও জয়েন করতে চাই। তবে প্রথম পছন্দ ক্রীড়া সেক্টরে যে কোন জব। আমি খেলাধুলাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। এ সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী। বিশেষ করে মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে চাই। তাদেরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে চাই একইসঙ্গে নিজের চর্চাটাও অব্যাহত রাখতে পারবো। এজন্য তিনি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সেক্টরের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
ক্রীড়াচর্চা করতে ইচ্ছুক নারী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের নারীদের অনেক প্রতিভা রয়েছে। কিন্তু তারা সেই প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায় না। তাদেরকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা হলে অলিম্পিকেও খেলার মতো যোগ্য হয়ে ওঠবে। প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২১
এসকেবি/এএটি