ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

সুন্দরবনের আদলে হবে ‘চিত্রা ইকো পার্ক’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
সুন্দরবনের আদলে হবে ‘চিত্রা ইকো পার্ক’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাগেরহাট: বাগেরহাটের চিত্রা নদীর চরে ‘মিনি সুন্দরবন’ বা ‘চিত্রা সুন্দরী বন’ নামে পরিচিত জলা বনকে সুরক্ষার মাধ্যমে ‘চিত্র ইকো পার্ক’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

পলি জমে ভরাট হওয়া নদীর দু’তীরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের বিভিন্ন বৃক্ষরাজী সুরক্ষার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

সুন্দরবনের মূল ভূ-খণ্ড থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তরে বাগেরহাট সদর, ফকিরহাট ও চিতলমারী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা নদীর জেগে ওঠা চরে গত দুই দশকে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন গাছপালা। শান্ত নদী চিত্রার দু’পাড়ে তৈরি হয়েছে সুন্দরবনের আবহ।

প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা নয়নাভিরাম এ দৃশ্য নিয়ে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলানিউজে প্রকাশিত হয় ‘মিনি সুন্দরবন’ নামে একটি প্রতিবেদন। টেলিভিশন, সংবাদপত্রেও চিত্রা পাড়ের সৌন্দর্য নিয়ে প্রাকশিত হয় একাধিক প্রতিবেদন। এর প্রেক্ষিতে এই প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে ‘চিত্রা ইকো পার্ক’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

এ লক্ষ্যে সম্প্রতি সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম বলেন, আসলেই এই জায়গাটা অসাধারণ। খুবই সুন্দর! হটাৎ করে যে  কারোরই মনে হবে যে সুন্দরবন। ইতোপূর্বে এ বিষয়ে আপনারা (সাংবাদিকরা) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সরকার ও বন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সরেজমিন এখানকার বাস্তব অবস্থা দেখে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে বলা হয়েছিলো। যার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে আমরা ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি।

ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর জেগে ওঠা চরে প্রাকৃতিকভাবেই এই বনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে এই এলাকায় একটি জরিপ করে এখানে একটি ইকো পার্ক গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাবনা পাঠাব।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছরের ব্যবধানে চিত্রা নদীর চরের রায়গ্রাম, শুরিগাতী, খিলিগাতী, করাতদিয়া, ডুমুরিয়া, আড়ুলিয়া, খাড়িয়াসহ ১৫-২০টি গ্রামের অনেক এলাকা বনাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

বাগেরহাটে সমাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোল্যা রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, চিত্রা নদীর দু’তীরে সুন্দরবনের আদলে প্রাকৃতিকভাবে গাছপালা জন্মে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা সত্যিই নৈসর্গিক। কেওড়া, ছৈলা, গোলপাতা, ওড়া, সুন্দরীসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সমারোহে এখানে ভরপুর। এখানে ভ্রমণে এসে পর্যটকরা একটি সুন্দরবনের ডামি দেখতে পাবে।

এলাকাটি সংরক্ষণের মাধ্যমে পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে পারলে এখানকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সুন্দরবনের ওপর চাপ কমবে। এখানকার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে তাই একটি ইকো পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট তিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও সামাজিক বন বিভাগ মতবিনিময় করেছে।

সরেজমিন পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম তার (DC Bagerhat) ফেসবুক ওয়ালে চিত্রা পাড়ের ছবি দিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘অনেকেই সুন্দরবনের অংশ ভাবতে পারেন। আসলে তা নয়। চিত্রার দু’পাড়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা কয়েক মাইলব্যাপী বন। যেখানে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাগেরহাটবাসীর সহযোগিতায় গড়ে উঠবে “চিত্রা ইকো পার্ক, বাগেরহাট”।

মো. জাহাংগীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, জরিপ শেষে আমরা শিগগিরই বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠাব। যাতে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অধীনে এলাকাটি সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন করা যায়।

তিনি আরো বলেন, এখানে হয়তো বড় বড় বণ্যপ্রাণী রাখা যাবে না। তবে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বেষ্টনি তৈরি করে হরিণ বানর সহ পশু-পাখি সংরক্ষণ করা যাবে। যার মাধ্যমে পরিবেশ-জীববৈচিত্র সুরক্ষা করে পর্যটন বিকাশ এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।