ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১০ জুন ২০২৫, ১৩ জিলহজ ১৪৪৬

পর্যটন

ঈদ আনন্দে জমজমাট খুলনার বিনোদনকেন্দ্রগুলো

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১৪, জুন ৯, ২০২৫
ঈদ আনন্দে জমজমাট খুলনার বিনোদনকেন্দ্রগুলো

খুলনা: কখনো মেঘে ঢাকা আকাশ, কখনোই বা ঝলমল কমলা রোদ। এরই মধ্যে ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস উঠছে।

কিছুটা প্রশান্তির জন্য মানুষ ছুটছেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে। ঈদের ছুটিতে কেউ যাচ্ছেন নদীর পাড়ে কেউবা পার্ক কিংবা রেস্টুরেন্টে।

ঈদের তৃতীয় দিনেও সোমবার (৯ জুন) নারী-পুরুষ ও শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ ভিড় করেছেন খুলনার বিনোদনকেন্দ্রে।

কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে কয়েকটা দিন পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মেতেছেন সবাই। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে মহানগরীর কোলঘেঁষা ভৈরব নদের ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এলাকা ও খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে।

ছয় ও সাত নম্বর ঘাট এলাকা এখন দর্শনার্থীদের উন্মুক্ত বিনোদনকেন্দ্র। ঈদকে কেন্দ্র করে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে এ এলাকা। নদীর পাড়ে দৃষ্টিনন্দন বেঞ্চে বসে নদীর নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ  করতে বিকেল হলেই দলবেঁধে ছুটে আসছেন সবাই। কেউ নৌকায় আবার তেউ ট্রলার ভাড়া করে নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

মোংলার দিগরাজ থেকে বন্ধুদের নিয়ে সাত নম্বর ঘাটে ঘুরতে আসা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, এখানে সুন্দর একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ এখানে এসে উপভোগ করা যায়। এখানে এসে ভীষণ ভালো লাগছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই আসেন এখানে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের খুলনা জোনের পরিদর্শক সুমীর কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, খুলনাসহ আশপাশের লোকজন এখানে বেশি আসে। ঈদের সময় যা বেড়ে যায়। আমার সব সময় চেষ্টা করি এখানে যারা ঘুরতে আসে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। ঈদের তিন দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল। ঈদের ছুটি যাবে নির্বিঘ্নে কাটে আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। শহীদ হাদিস পার্কেও ঈদ উপলক্ষে মানুষের ঢল নেমেছে। হাদিস পার্কে রয়েছে বিশাল লেক। লেকের ওপর শহীদ মিনার ও পানির ফোয়ারা হয়েছে। শহীদ হাদিস পার্কে নির্মিত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে এক নজরে খুলনা শহরটাকে দেখা যায়। যে কারণে এখানে ভিড় একটু বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

পার্কে ঘুরতে আসা খুলনা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তাসমিদ হাসান বলেন, আমরা দুই ভাই এখানে ঈদের ছুটিতে ঘুরতে আসছি। খুব ভালো লাগছে এখানে এসে।

মহানগরীর শান্তিধাম মোড়ের কাছে জাতিসংঘ শিশুপার্কে এবার ঈদ মেলা না থাকলেও মানুষের ভিড়ের কমতি নেই।

খুলনার উল্লাস পার্ক, যা আগে মজগুনী পার্ক নামে পরিচিত ছিল। দৌলতপুর থেকে মাত্র ২০ টাকায় ইজিবাইকে পৌঁছানো যায় পার্কটিতে। পার্কের প্রবেশমূল্য ১শ টাকা। ঈদের ছুটিতে এ পার্কটিও জমজমাট হয়ে উঠেছে।

খালিশপুর এলাকার চিত্তবিনোদনের একমাত্র স্থান ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্ক। যেখানে এখন লোকে লোকারণ্য। পার্কটিতে ফ্যামিলি কোস্টার, জেট কোস্টার, সুউচ্চ ওয়ান্ডার হুইল, বৃহৎ মেরি গো রাউন্ড সোয়ান ট্রেন, কিড রাইডস ও ওয়াটার পুল রয়েছে। যে কারণে শিশুদের পছন্দের জায়গা এ পার্কটি।

বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পার্কটি নিরাপত্তা বেষ্টিত খুলনার একমাত্র চিড়িয়াখানা। যেখানে দেখা মেলে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতা বাঘ, কুমির, হরিণ, বানর, হনুমান, অজগর সাপসহ বিভিন্ন পশু-পাখি।  

ঈদের ছুটিতে এসব বন্য প্রাণী দেখতে দল বেঁধে ছুটছেন মানুষ।  
নান্দনিক সৌন্দর্য ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর কারণে রূপসা সেতু বরাবরই খুলনার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আর ঈদ এলে তো কোনো কথাই নেই। সবার গন্তব্য যেন রূপসা সেতুতে।  

রূপসা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিকেল হলেই দলবেঁধে সেতুতে আসছেন মানুষ। রূপসা রেল সেতু সংলগ্ন এলাকায় আর একটি নান্দনিক জায়গার নাম প্রশান্তি ক্যাফে। এখানে নদীর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে খুলনা রিভারভিউ পার্ক সাবেক শেখ রাসেল ইকোপার্ক। শহরের কোলাহল ও যান্ত্রিকতা ছেড়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার অন্যতম স্থান এ পার্কটি। ঈদের ছুটিতে সবুজে ঘেরা এ পার্কে হাজারো দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন।  

পার্কটিতে রয়েছে বনজ, ফলদ ও শোভাবর্ধনকারী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। রয়েছে কৃত্রিম লেক। পার্কের প্রবেশদ্বারের এক পাশে রয়েছে পার্কিং প্লেস ও অপর পাশে প্লাজা। যেখান থেকে পার্কের একটি অবয়ব দেখার সুযোগ পাওয়া যায়।

খুলনা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বটিয়াঘাটা উপজেলার মাথাভাঙ্গা এলাকায় রূপসা নদীর তীরে ৪৩ একর খাস জমিতে নির্মিত পার্কটিতে কোনো প্রবেশ মূল্য না থাকায় নগরবাসী ছুটছেন এখানে।

খুলনার উল্লেখযোগ্য এ বিনোদনকেন্দ্রে ঈদের তিন দিন ধরে শিশুরা হাত ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে ঘুরছে, তরুণ-তরুণীরা দলবেঁধে সেলফি তুলছেন, আর মধ্যবয়সীরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্মৃতির ঝুড়ি ভরছেন।

এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।