ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

সান্দাকফু ট্রেক

পূর্ণতা এনে দিলো রূপসী কাঞ্চনজঙ্ঘা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
পূর্ণতা এনে দিলো রূপসী কাঞ্চনজঙ্ঘা পূর্ণতা এনে দিলো রূপসী কাঞ্চনজঙ্ঘা

হতে পারতো সকালটা অপূর্ণতার বেদনায় বিবর্ণ। ট্রেকিংয়ের উদ্দেশ্যেই এসেছি, ট্রেকিং তো হলো, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেলে তা বোনাস। বারবার একথা বলে মনকে সান্ত্বনা দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। রাস্তায় শুনে এসেছি গত কয়েকদিন সান্দাকফু থেকে কিছুই দেখা যায়নি। মোটামুটি ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনকে শক্ত করেই নিয়েছিলাম।

কিন্তু আমার যে পর্বত অরণ্য দেবের সঙ্গে সম্পর্কটা ভালোবাসার সুতোয় বাঁধা! কখনো খালি হাতে ফেরনানি তিনি। তার নমুনাই দেখলাম সকালে।

ভোর পৌনে পাঁচটায় হুটোপুটির আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। জানালা গলিয়ে দেখলাম চারপাশ পরিষ্কার। কোনো রকমে বাইরে এসে দেখি তিনি ঘরের কাছে এসে বসে আছেন। তাও আবার একা নন একেবারে সপরিষদে। কাঞ্চনজঙ্ঘা শীর্ষে বাতাসের তোড়ে উড়তে থাকা বরফগুলোকেও দেখা যাচ্ছিলো, এতটাই পরিষ্কার। আছে জানু বা কুম্ভকর্ণ, কাব্রু, থ্রি স্টিটার্স। উত্তর আকাশ পুরোটা দখল করে আছেন তেনারা। আরও পশ্চিমে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট, চতুর্থ লোৎসে, পঞ্চম মাকালু। পূর্ণতা এনে দিলো রূপসী কাঞ্চনজঙ্ঘাপ্রথম সূর্যের আলোয় আস্তে আস্তে রাঙা হয়ে গেলো চূড়াগুলো। চোখের সামনে তখন জাদু বাক্সের ডালি খুলে গেছে। আমাদের অবস্থা তখন কোনটা রেখে কোনটার ছবি তুলি। সান্দাকফুও নেপাল ও ভারতীয় অংশে বিভক্ত। এর উপরের অংশটি মূলত নেপালের ইলাম জেলায় পড়েছে। আমরা ছিলাম এ জেলার শেরপা শ্যালে লজে। দৌড়ে এখানকার সবচেয়ে উচুঁ পাথুরে জায়গাটায় দাঁড়ালাম। জীবনে প্রথমবারের মতো বরফ পাহাড়ের চূড়া দর্শন বলে উত্তেজিত নই বরং একদিন শীর্ষে আমি তো দাঁড়াতে পারি, এমন ভাবনায় তোলপাড় মন-প্রাণ। কাঞ্চনজঙ্ঘা আসলে আগামীর চ্যালেঞ্জ। দেদারসে চারপাশ থেকে শুধু ক্যামেরার ক্লিকের শব্দ। এমন মুহূর্ত বেশিক্ষণ পাওয়া যাবে না। তাই সুযোগ ছাড়তে কেউ রাজি নয়।

আমি এক সময় ক্লিক করা বন্ধ করলাম। হোটেলের সামনের বসবার জায়গা থেকে একেবারে নাক বরাবর দেখা যাচ্ছিলো কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়াগুলো। নীরবে এবার তাকে ধারণ করবার পালা। সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিট, ঘণ্টা, ভেতরের ক্যামেরাটায় সবটুকু ছবি তুলে নেওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করে গেলাম শুধু। কিন্তু পুরোটাকে কি ধারণ করা যায়। এ যে বিশাল এক সত্ত্বা। পৃথিবীর তাবত বাঘা বাঘা পর্বতারোহীরা পর্যন্ত আরোহণ করে একবারে শীর্ষে দাঁড়াবার সাহস করে না। নিচের জনগোষ্ঠী তাকে দেবতা জ্ঞানে দেয় অঞ্জলি। ঠিক তার সামনেই আমি দাঁড়িয়ে আছি।

উঠে নাস্তা করতে হলো। আজ লম্বা এক পথ পাড়ি দিতে হবে। ২১ কিলোমিটার দূরে যেতে হবে সেই ফালুটে। নাস্তা করে ব্যাগ গুছিয়ে আবার এসে বসলাম। আজ যেন প্রকৃতিও আমাদের প্রতি সহৃদয়। বেলা বাড়ছে কিন্তু মেঘের নাম গন্ধ নেই। রোদ উঠেছে তার সবটুকু শক্তি নিয়ে। আমি কিন্তু সব ভুলে সেখানে বসেই আছি। মনগাড়ি ছুটে যেতে চায় ফালুট ছাড়িয়েও আরও বহুদূরে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
এএ

**সিঙ্গালিলা পার্ক ছেড়ে অবশেষে ফালুটে

**পাহাড়ি নেপালি গ্রাম কালাপোকরিতে
** ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় খিচুড়ি-ডিমে ভোজ
** যে শহর অর্ধেক নেপাল, অর্ধেক ভারতের
** পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল
** ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্ত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।