ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

রাঙা মাটির দ্যাশে যা...

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৭
রাঙা মাটির দ্যাশে যা... সবুজ পাহাড়ি সড়ক যেন ছুঁয়ে ফেলছে আকাশ। ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

রুইলুই পাড়া (বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি) থেকে: গন্তব্য রাঙামাটির সাজেক। রুইলুই পাড়ার এ পর্যটন কেন্দ্রটি পাহাড় আর মেঘের সান্নিধ্য একত্রে পাবার জন্য পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। আবার খুব উঁচু একটি জায়গা থেকে পৃথিবীটা কেমন, তা দেখার জন্যও অনেকের আগ্রহের স্থান এটি।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক আসার অন্যতম মাধ্যম হলো স্থানীয় ‘চান্দের গাড়ি’। অনেকটা লেগুনা আকারের এ গাড়িটি খাড়া পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে ওঠার জন্য বিশেষভাবে বানানো।

এ গাড়ি স্থানীয় চলাচলের জন্যও বিশেষ জনপ্রিয় বলে বাংলানিউজকে জানান একটি ‘চান্দের গাড়ি’র চালক আকবর হোসেন।

রাস্তার চারপাশে ছড়িয়ে আছে পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীগুলোর জীবনের গল্প।                                          ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর
সাজেকে আগত দর্শনার্থীরা চান্দের গাড়ির ছাদে ভ্রমণ করতে চাইলেও সাবধানতার কারণে স্থানীয় প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও পাহাড়ের অপরূপ রূপ দেখার নেশায় অনেকে তা ভুলে যান। এমনই ভুলে ঢাকা থেকে আগত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষক চান্দের গাড়ির ছাদে উঠলেও কিছুদূর এগোতেই বিজিবির চেকপোস্ট থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় তাদের।

কথা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, পাহাড়ি উঁচু নিচু ও আঁকাবাঁকা রাস্তার যে সৌন্দর্য, সবুজ আর আকাশের নীলের যে মিলন মেলা, তা গাড়ির ভেতরে বসে উপভোগ করার থেকে ছাদে বেশি উপভোগ্য। তবে যেহেতু নিরাপত্তাজনিত কারণে তা নিষেধ, সেহেতু এটা মেনেই চলতে হবে। পাহাড়ি শিশুরা দর্শনার্থীদের অভিবাদন জানায় হাসিমুখে হাত নেড়ে।  ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগরগাড়ির সামনে থেকে বা ছাদ, যেখান থেকেই দেখুন না কেন, খাড়া পাহাড়ের রাস্তা বেয়ে গাড়িগুলো যখন সোজা ওপরের দিকে উঠে, সত্যিই সে এক অসাধারণ অনুভূতি। যেন পাহাড়ের সিঁড়ি বিয়ে গাড়ি উঠে যাচ্ছে আকাশে। চারদিকের সবুজ যেন দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয় সবার। সে সবুজের আছে নানান রং, আছে নানান রূপ।

সবুজ অরণ্যের মাঝ দিয়ে নদীর মতো এঁকেবেঁকে চলে গেছে সরু রাস্তা। সে রাস্তার চারপাশে ছড়িয়ে আছে পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীগুলোর জীবনের গল্প। কেউ তাঁতে শাড়ি বুনে তো, কেউ আবার জুমের ফসল নিয়ে ঘরে ফেরে। রাস্তার পাশের ছোট্ট ঘরগুলোতে যেন অভাব নেই ভালোবাসার। তবে সবচেয়ে বেশি মন কাড়ে পাহাড়ি শিশুদের অতিথিদের বরণ করে নেওয়াটা।

যাত্রাপথে রাস্তার দু’ধারে প্রায়ই দেখা মিলবে ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের। তারা তাদের এলাকায় আগত দর্শনার্থীদের অভিবাদন জানায় ছোট্ট কোমল হাতে, হাসিমুখে হাত নেড়ে। তাদের সে অভিবাদন যেন বলে দেয়, তোমরা জাগতিক নৈসর্গে এসে গেছো। ‘রুইলুই পাড়ার পর্যটন এলাকায় আপনাকে স্বাগতম’।  ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগরপথের খুব বাকি নেই আর। দূর থেকে ভেঁসে আছে ‘লাল পাহাড়ির দ্যাশে যা/রাঙা মাটির দ্যাশে যা/হেথাকে তুকে মানাইছে নাই গ’,/ইক্কেবারেই মানাইছে নাই গ’ গানটি। সত্যিই যেন তাই। সামনেই যখন প্রবেশদ্বারে লেখা ‘রুইলুই পাড়ার পর্যটন এলাকায় আপনাকে স্বাগতম’, তখনই মনটা নেচে ওঠে অজানা আনন্দে, ‘এই তো চলে এলাম রাঙামাটির দ্যাশে’। শহরের কোলাহলের বাইরে অরণ্যের সবুজ আর আকাশের নীলের যে অভিসার, তার সৌন্দর্যে বুক ভরে শ্বাস নিতে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৭
এইচএমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।