ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

সবুজ হলো না হবিগঞ্জের ‘গ্রিন ড্রাইভ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৯
সবুজ হলো না হবিগঞ্জের ‘গ্রিন ড্রাইভ’ যত্ন ও তদারকির অভাবে মারা যাওয়া গাছের চারা। ছবি: বাংলানিউজ

হবিগঞ্জ: যথাযথ তদারকি আর যত্নের অভাবে বাস্তবায়ন হয়নি হবিগঞ্জের পর্যটন বিকাশে গৃহীত প্রকল্প ‘গ্রিন ড্রাইভ’। ২০১৮ সালে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের উদ্যোগে এ গ্রিন ড্রাইভ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। গত বছরে এ গ্রিন ড্রাইভের সৌন্দর্য বাড়াতে বেশকিছু দেশি-বিদেশি ফুলের গাছ লাগালেও যত্নের অভাবে প্রায় সবগুলোই নষ্ট হয়ে গেছে। 

মূলত সাবেক ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ থেকে জগদীশপুর পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়ককে গ্রিন ড্রাইভ নামকরণ করা হয়। এ সড়কটি এমনিতেই নয়নাভিরাম।

এর উভয়দিকে চা গাছ আর ঘন বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এই ড্রাইভে লাগানো হয় ১২ প্রজাতির দেশি-বিদেশি সাড়ে ৬ হাজার ফুলের গাছ। রয়েছে জারুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, কাঞ্চন, পলাশ, শিমুল, কদম,নিম এবং বিদেশি ফুল গ্রেসিয়াসহ আরও দুই প্রজাতির ফুল। এ ফুল গাছ লাগানোর উদ্দেশ্য হলো বারোমাস সেখানে ফুল থাকবে এবং এর সৌন্দর্যে সবাই বিমোহিত হবে।

৫ বছরের মধ্যে এটি পরিপূর্ণ বিকশিত হবে- এমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এক বছরের মধ্যেই যত্ন আর তদারিকর অভাবে বেশিরভাগ গাছ মরে গেছে। কোথাও বা ভেঙে পড়ে গেছে। আবার লোকজন ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করেছে অনেক গাছ। যত্ন ও তদারকির অভাবে মারা যাওয়া গাছের চারা।  ছবি: বাংলানিউজ‘পাহাড়-টিলা-হাওর-বন, হবিগঞ্জের পর্যটন’ -স্লোগানটিকে হচ্ছে এই জেলার ব্র্যান্ডিং। পাহাড়, নদী, হাওর আর সমতলের অপূর্ব মেলবন্ধনের জন্য হবিগঞ্জের ব্র্যান্ডিং হিসেবে পর্যটনকে বেচে নেওয়া হলেও পরিকল্পনা এবং অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় এ শিল্প এখনও বিকশিত হয়নি। তাই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গ্রিন ড্রাইভ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয় গত বছর।

কক্সবাজারে হাজার কোটি টাকা খরচ করে সাগরের তীর ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে মেরিন ড্রাইভ। এটি পর্যটন বিকাশে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। এরই আলোকে হবিগঞ্জে গ্রিন ড্রাইভ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে এটি সরকারি বড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নয়। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা সৌন্দর্য কাজে লাগিয়ে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ ড্রাইভটি নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রিন ড্রাইভের আশেপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি চা বাগান। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা রিজার্ভ ফরেস্ট, তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধসহ জেলার পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্পটগুলোতে যাতায়াতের মাধ্যম হবে এই গ্রিন ড্রাইভ। ফলে পর্যটকরা এখানে আসার জন্য উদগ্রীব থাকবেন। গ্রিন ড্রাইভটি এতোই বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং আঁকাবাঁকা যে এটি পার হওয়ার সময় মনে হবে রাস্তা দিয়ে নয়, যেন ফর্মূলা ওয়ানের ট্র্যাক দিয়ে গাড়ি চালানো হচ্ছে! রাস্তার পাশেই চোখে পড়বে বানরসহ বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখি। কিন্তু গ্রিন ড্রাইভের বিভিন্ন স্থানে লাগানো গাছগুলো মরে গেছে। কোথাও গাছের প্রতিরক্ষা খাঁচা ভেঙে গেছে। চানপুর চা বাগান এলাকায় অধিকাংশ গাছই আর জীবিত নেই।

স্থানীয় লোকজন জানায়, বন বিভাগ গাছ লাগানোর কাজ করলেও এটি দেখভাল না করায় এ সমস্যা হয়েছে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক ফজলুল জাহিদ পাভেল বাংলানিউজকে জানান, পর্যটনকে হবিগঞ্জ জেলার ব্র্যান্ডিং হিসেবে বেচে নেওয়া হয়েছে। এর কারণ হল এখানকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্য। পর্যটন বিকাশে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ পর্যন্ত নয়নাভিরাম সুন্দর সড়কটিতে গ্রিন ড্রাইভ নামকরণ করে এতে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জারুলসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি অনেক গাছই নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে নতুন করে আবারও গাছ লাগানো হবে।

হবিগঞ্জর সহকারী বন সংরক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, ৫০ শতাংশ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। জুন মাসে আবারও গাছ লাগানো হবে। ইতোমধ্যে চারা উৎপাদন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।