১৮৮৫ সালে মানিকগঞ্জ ছিল ঢাকার মহকুমা। আনুমানিক প্রায় পাঁচ একর জায়গার ওপর এ বালিয়াটি প্রাসাদ স্থাপিত।
মোট সাতটি প্রাসাদে প্রায় ২০০টির বেশি কক্ষ রয়েছে। আর এ প্রাসাদের চারদিকে বিশাল উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ১৯৮৭ সালে বালিয়াটি প্রাসাদকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে।
গোবিন্দ্ররাম শাহ আঠারো শতকের দিকে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। পরে তার উত্তরাধিকারীরা আরও কিছু স্থাপনা নির্মাণ করেন। এর মধ্যে রয়েছে পূর্ব বাড়ি, পশ্চিম বাড়ি, উত্তর বাড়ি, মধ্য বাড়ি এবং গোলা বাড়ি। জমিদার বাড়ির সামনের চারটি প্রাসাদ এখনও টিকে আছে আর বাকি সব কয়টি ধ্বংস হয়ে গেছে। চারটি প্রাসাদের প্রবেশপথে রয়েছে পাথরের তৈরি সিংহের মূর্তি। আর মূল ভবনের দেয়াল জুড়ে নানান কারুকার্যময় প্রত্যেকটি ভবন। এ জমিদার বাড়িতে প্রবেশের পর মূল প্রাসাদ অতিক্রম করলে তিন তলা বিশিষ্ট আরও দুইটি প্রাসাদ। আর এ দুটি প্রাসাদের মাঝখান দিয়ে এগিয়ে গেলে দেখা মিলবে ছয়টি শান বাঁধানো পুকুর ঘাট।
এছাড়া সামনের মূল ভবনের দুই নম্বার ভবনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে জমিদারদের ব্যবহারিক কিছু সামগ্রী। সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান এ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি।
কুমিল্লা থেকে আসা দর্শনার্থী সুকান্ত কুমার চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে যারা একবার এ বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে এসেছে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে পুনরায় আবার আসবে। কারণ এ জমিদারি প্রথা সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মাহবুবা কামাল বেনু বাংলানিউজকে বলেন, আমি ঘুরতে খুব পছন্দ করি। একটু সুযোগ পেলেই ঘুরতে বের হই। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন জায়গাতে ঘুরেছি তবে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি আসার সুযোগ হয়নি। ছবিতে এটি দেখেছি। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল এখানে আসবো ও দেখবো, সেই ইচ্ছেটা পূরণ হলো। বালিয়াটি জমিদার বাড়ির সাইট পরিচালক মাসুদ রানা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যারা বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের স্টাফ আছি তারা সবাই ঈদকে সামনে রেখে জমিদার বাড়িটি পরিষ্কার-পরিছন্ন করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত রাখা হবে।
বালিয়াটি জাদুঘর (বালিয়াটি প্রাসাদ) প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ইনচার্জ সঞ্জয় বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে বালিয়াটি জাদুঘরটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের দ্বিতীয় দিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকবে। সারা বছর এ জাদুঘরটি দেখার জন্য দেশ ও বিদেশি দর্শনার্থীরা আসেন।
তবে ঈদে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে কয়েক হাজারে দাঁড়ায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইনচার্জ সঞ্জয়।
যেভাবে যাবেন:
বালিয়াটি জাদুঘর-ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে জনসেবা বা এসবি লিংক গেটলক পরিবহনের বাসে করে মাত্র দুই ঘণ্টায় সাটুরিয়া পৌঁছে যাওয়া যায়। বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৭০ টাকা। সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৩০ টাকা রিকশা ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন বালিয়াটি জাদুঘর।
টিকিট:
বালিয়াটি জাদুঘরের জনপ্রতি টিকিটের দাম দেশি দর্শনার্থীদের জন্য ১০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য ১০০ টাকা। রোববার জাদুঘর পূর্ণদিবস বন্ধ থাকে এবং সোমবার বন্ধ থাকে অর্ধদিবস। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৯
আরআইএস/