ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

‘হাতির মাথা সিঁড়ি’ পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০০ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৯
‘হাতির মাথা সিঁড়ি’ পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ সিঁড়ির উপরের অংশে দাঁড়ালে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ পাহাড়ের সারি দেখা যাবে

খাগড়াছড়ি: দেশের অধিকাংশ পর্যটন স্পটই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট। যেগুলো সময়ে সময়ে পর্যটকদের জন্য আধুনিকায়ন করা হয়। তবে এর বাইরে মানুষের তৈরি করা কিছু কাজ নান্দনিকতার কারণে কাকতালীয়ভাবে পর্যটন স্পটের তকমা পেয়ে বসে। তেমনি একটি হলো খাগড়াছড়ির ‘হাতির মাথা সিঁড়ি’। প্রায় ৩শ ফুট দীর্ঘ এই সিঁড়িটি এখন দেশের পর্যটকদের জন্য নতুন আকর্ষণ।

২০১৫ সালের আগে পর্যটন কেন্দ্র এলাকাটির তেমন পরিচিতি ছিলো না। স্থানীয়রা ছাড়া বাইরের কেউ যেতে চাইতেন না বললেই চলে।

তবে সেখানকার কঠিন জীবন সংগ্রামের কথা উঠে আসে সাংবাদিকদের লেখনিতে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ির পেরাছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্যই নির্মিত হয় একটি সিঁড়ি। হাতির মাথা কিংবা মায়ূং কপাল নামে পরিচিত দৃষ্টিনন্দন দীর্ঘ সিঁড়িটির কারণে এলাকাটি ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। এখন সুযোগ পেলে পর্যটকরা ছুটে যান সিঁড়িটি দেখতে। সঙ্গে রয়েছে পাহাড়ের কোলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য।

২০১৫ সালের ১৩ জুন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করে ৩শ ফুট উচ্চতার লোহার সিঁড়িটি নির্মাণ করা হয়। এতে করে মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুমতি ইউনিয়ন ও খাগড়াছড়ির পেরাছড়া ইউনিয়নের ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের সীমান্তবর্তী এই এলাকায় ভাঙ্গামুড়া, বাদলছড়া, মাখন তৈসা, কিনাপাপাড়া, হাজাপাড়া, কেশ মহাজনপাড়া, সাধুপাড়া, নতুনপাড়া, কাপতলা, হাতির মাথাসহ ১৫টি গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে।

‘হাতির মাথা সিঁড়ি’ এর আগে গ্রামগুলোর সঙ্গে শহরসহ আশপাশের এলাকার যোগাযোগের মাধ্যম ছিলো হাতির মাথা এলাকায় অবস্থিত সুউচ্চ ঐ পাহাড়টি। যেখানে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিলো ৩০ ফুট উচ্চতার এক তুলা গাছ। এটিকে বিশেষ পদ্ধতিতে কেটে সিঁড়ি হিসেবে তৈরি করে খাঁড়া পাহাড়ের সঙ্গে লাগানো হয়েছে। আর আশপাশের গ্রামসহ জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের এটিই একমাত্র পথ ছিল। যা সিঁড়ি হওয়াতে বদলে গেছে সেই চিত্র। পাহাড়ের গায়ে খাড়া এমন দীর্ঘ সিঁড়ি দেশে আর দ্বিতীয়টি নেই বললে চলে।

তবে সিঁড়ি দেখতে হলে আপনাকে দেড় ঘণ্টার হাঁটা পথের প্রস্তুতি নিতে হবে। খাগড়াছড়ির পেরাছড়া দিয়ে চেঙ্গী নদী পাড় হয়ে পাক্কা দেড় ঘণ্টার হাঁটা পথ। আঁকা-বাঁকা, উচুঁ-নিচু রাস্তা, সবুজ পাহাড় পেরিয়ে যেতে হবে গন্তব্যে। যেতে যেতে চোখে পড়বে সবুজ পাহাড়ের সারি, স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সহজ জীবনযাত্রা। এমন চোখজুড়ানো দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন সিঁড়িতে।

হাতির মাথা সিঁড়ি দেখতে আসা ভ্রমণপ্রেমী জয় দে ও ফারাবি সালাম জানান, ‘সিঁড়িটির কথা অনেকবার শুনেছি। আজ নিজের চোখে দেখলাম। অসাধারণ স্থাপনা। স্থানীয়দের যোগাযোগ সহজ করার জন্য নির্মাণ করা হলেও এখন এই সিঁড়িটি দেখার জন্য পর্যটকরা আসছেন’।

‘হাতির মাথা সিঁড়ি’ প্রথম দিকে খুব সহজে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারলেও এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম করার পর খাঁড়া পাহাড়ের কাছাকাছি গেলে নিশ্চিত আপনার শরীর কাঁপবে। এতো উপরে উঠতে গিয়ে নিচে থাকতে একটু ভয়তো লাগবেই। তবে সিঁড়ির উপরের অংশে দাঁড়ালে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ পাহাড়ের সারি দেখা যাবে। যা নিমিষে আপনার ক্লান্তি দূর করবে।

দীঘিনালার বাসিন্দা মো. হানিফ প্রধান ও মানিকছড়ির বাসিন্দা রাকিব হাসান জানায়, খাগড়াছড়ির অন্য পর্যটন স্পটগুলো একদম হাতের কাছে। হাঁটতে হয় না বললেই চলে। কিন্তু এই সিঁড়ি দেখতে হলে দেড় ঘণ্টার মতো হাঁটতে হয়। এটি জেলার নতুন ট্রেকিং স্পটও বলা যায়।

খাগড়াছড়ির পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন ত্রিপুরা বলেন, ওই এলাকাটি ছিল ভীষণ দুর্গম। এখন সিঁড়ি হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা আসেন। তবে শুক্রবার ও শনিবার পর্যটকদের উপস্থিতি বেশি থাকে। যা খাগড়াছড়ির পর্যটনখাতকে সমৃদ্ধ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪২ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৯

এডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।