ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

অভিশপ্ত যমুনাই এখন বিনোদনপ্রেমীদের আশীর্বাদ

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৫ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৯
অভিশপ্ত যমুনাই এখন বিনোদনপ্রেমীদের আশীর্বাদ যমুনার শহর রক্ষা বাঁধ। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: প্রচণ্ড গরম আর কাঠফাটা রোদের উত্তাপে দিনের কর্মঘণ্টা শেষ হওয়ার পর বিকেল হলেই প্রকৃতির একরাশ স্নিগ্ধ বাতাস পেতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে মানুষ। দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে কিংবা ছুটির অবসরে পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রকৃতির নির্মল বিনোদন পিয়াসী মানুষের সংখ্যাও অনেক।

তাইতো সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়লেই শহরের কোলাহল ছেড়ে হাজারও মানুষ ছুটে আসেন প্রকৃতির ‘সুন্দরী কন্যা’ যমুনা নদীর পাড়ে। যমুনাও তার বুকের স্নিগ্ধ সমীরণ ঢেলে কর্মক্লান্ত মানুষের ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি প্রাণ জুড়িয়ে দেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের।

যমুনা নদী বেষ্টিত শহর সিরাজগঞ্জ। হিংস্র যমুনা এক সময় এ জনপদের মানুষের কাছে ছিল অভিশাপ। সেই অভিশপ্ত প্রকৃতি কন্যাই এখন বিনোদনপ্রিয় মানুষের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনছে।

এ নদী ঘিরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তৈরি করা শহর রক্ষা বাঁধ ‘হার্ডপয়েন্ট’ ও চারটি ক্রসবার এলাকা এখন অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে। বিনোদনপিয়াসী মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যমুনার পাড়।  

যমুনা পাড়।  ছবি: বাংলানিউজপাউবো সূত্রে জানা গেছে, যমুনার ভাঙন ঠেকাতে ২০০১ সালে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধটির উত্তরের অংশে নির্মাণ করা হয় একটি বৃত্তাকার হার্ডপয়েন্ট।

এদিকে, ২০১৭ সালে পানির গতিপথ পরিবর্তনের লক্ষ্যে যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ থেকে আড়াআড়িভাবে চারটি পয়েন্টে চারটি ক্রসবার নির্মাণ করা হয়। এ ক্রসবারগুলোর দৈর্ঘ্য এক থেকে পৌনে দুই কিলোমিটারের মতো। যেটা মূল বাঁধ থেকে লম্বালম্বিভাবে যমুনার মাঝখানে গিয়ে শেষ হয়েছে।

যমুনার পাড়ের হার্ডপয়েন্ট ও ক্রসবারগুলোতে দাঁড়িয়ে দর্শনার্থীরা উপভোগ করেন নদীর নির্মল বাতাস আর অনাবিল প্রাকৃতিক শোভা। এছাড়া হার্ডপয়েন্টে দাঁড়িয়ে অপরূপ সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের দৃশ্য বিনোদনপ্রেমীদের আরও মুগ্ধ করে তুলে।

যমুনার পাড়ে দর্শনার্থীরা।  ছবি: বাংলানিউজশুষ্ক মৌসুমে যমুনার বুকে জেগে ওঠা বিশাল আকৃতির চরগুলোতে চিকচিক করা বালি আর বর্ষা মৌসুমে চারদিকে থৈ থৈ পানি এবং এর ওপর দিয়ে বয়ে আসা নির্মল বাতাস যে কারও মন প্রাণ জুড়িয়ে দেবে। সকালের সূর্যোদয় এবং বিকেলে অস্তগামী সূর্যের সোনালী আভার প্রতিফলন নদীর ওপর পড়ে এক অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা সৃষ্টি করে।

যমুনার বুকে সবসময়ই ছুটে চলে নৌকা। অনেকেই আবার ভাড়ার নৌকায় নদীর বুকে জেগে ওঠা চরেও ঘুরে আসতে পারেন। চরের চিকচিকে বালি আর কাশফুলের সৌন্দর্য মন মাতিয়ে দেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের।

এছাড়া শিশু বিনোদনের জন্য শহর রক্ষার মূল বাঁধটির দক্ষিণে স্থাপন করা হয়েছে শহীদ শেখ রাসেল জাতীয় শিশুপার্ক। শিশুদের খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন ইভেন্টের পাশাপাশি রয়েছে নানা প্রজাতির পুষ্পকানন। নদীর তীরের পার্কটিতে শিশুদের কলরব আর যমুনার পানির কলকল ধ্বনিতে একাকার হয়ে যায় পুরো এলাকা।

...তাই ছুটির দিনসহ যেকোনো অবসর সময়ে সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের জেলার মানুষগুলোর গন্তব্যস্থল হয় যমুনার পাড়। প্রতিদিনই বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে যমুনার বুকের চারটি ক্রসবার ও শহর রক্ষা বাঁধ। বিশেষ করে ঈদ কিংবা পহেলা বৈশাখসহ যেকোনো ছুটির উৎসবে সব বয়সী মানুষের ঢল নামে যমুনার এসব এলাকায়।

সিরাজগঞ্জ শহরের কেন্দ্রস্থল বাজার স্টেশন এলাকা থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে হার্ডপয়েন্ট। হার্ডপয়েন্ট পাওয়ার আগেই দেখা মিলবে মালশাপাড়া মোল্লাবাড়ী এলাকার ক্রসবার-৩। ক্রসবার ১ ও ২ সিরাজগঞ্জ শহরের উত্তর পাশে যথাক্রমে শৈলাবাড়ী ও খোকশাবাড়ী এলাকায় এবং ক্রসবার-৪ এর অবস্থান শহরের দক্ষিণে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে পাইকপাড়া এলাকায়।

স্কেটিং করছে ২ যুবক।  ছবি: বাংলানিউজসিরাজগঞ্জ স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ডা. জহুরুল হক রাজা বাংলানিউজকে বলেন, যে যমুনা সিরাজগঞ্জবাসীর সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে, সেই যমুনাই আজ আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরবাসীর জন্য। সিরাজগঞ্জ অত্যন্ত প্রাচীন একটি শহর হলেও এখানে ছিল না কোনো নির্মল বিনোদনের স্থান। কিন্তু এবার সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ধ্বংসাত্মক যমুনাকে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি লাখো মানুষের বিনোদনের জন্য বিশাল বিশাল স্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধের পাশাপাশি ক্রসবারগুলোতে প্রতিদিন ভোর থেকেই মানুষের সমাগম হয় যেখানে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব বয়সী মানুষ একটু প্রশান্তি পেতে আর যমুনার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করেত ছুটে আসে এসব বাঁধ ও ক্রসবারে।

পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, যমুনার ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জকে রক্ষার জন্য শৈলাবাড়ী এলাকায় ১৩৬৮ মিটার, খোকশাবাড়ী এলাকায় ১০৬৭ মিটার, মোল্লাবাড়ীতে ১৭৮২ দশমিক ৫ মিটার ও পাইকপাড়ায় ১২০০ মিটার ভিলেজ রোডসহ আরও ১০৫৭ মিটার ক্রসবার নির্মাণ করা হয়। এসব বাঁধ মূল তীর থেকে লম্বালম্বিভাবে নদীর মাঝখানে গিয়ে শেষ হয়েছে। এখানে এলে সরাসরি নদীর অপরূপ সৌন্দর্য আর নির্মল বাতাস উপভোগ করা যায়। যে কারণে দর্শনার্থীদের প্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে ক্রসবারগুলো। পাশাপাশি ২০০১ সালে নির্মিত শহর রক্ষা বাঁধটিকে বিনোদনের স্থান হিসেবে অনেক আগে থেকেই বেছে নিয়েছে সিরাজগঞ্জবাসী।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৩ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৯
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।