ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

দ্বীপ গ্রাম ‘কাট্টলি’

সমির মল্লিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫
দ্বীপ গ্রাম ‘কাট্টলি’

ঢাকা: নিঃশব্দের জলাভূমি আর নীল আকাশের নিচে জেগে আছে কাট্টলি বিলের অনেকগুলো দ্বীপ। কাপ্তাই লেকের বিস্তৃত জলরাশির ঠিক মধ্যখানে এই দ্বীপগুলোতে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি।



মৎস্য শিকার কেন্দ্র করে দ্বীপের বুকেই গড়ে উঠেছে বাজার। গড়ে উঠেছে শুঁটকি পল্লী। যা দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে এখানকার নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।

কাট্টলি বিলের দূরত্ব রাঙামাটি সদর থেকে জলপথে প্রায় ৪ ঘণ্টার। বাহন লঞ্চ বা দেশীয় নৌকা। তবে আমাদের যাত্রাপথ ছিল লংগদু হয়ে। লংগদু থেকে কাট্টলির দূরত্ব প্রায় দুই ঘণ্টার মতো।

ভোরের কুয়াশা মোড়ানো স্নিগ্ধতাকে সঙ্গী করে মোটরবাইকে রওনা হলাম খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে, আঁকা বাঁকা সরু পাহাড়ি পথ পেরিয়ে একঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম লংগদু বাজারে।

রাঙামাটির পুরানো বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম লংগদু বাজার। পাশেই মায়ানী মুখ যেখানে কর্ণফুলীর উপনদী কাছালং মিশেছে।

স্থানীয়রা জানান, মায়ানী নদীর মুখে গড়ে উঠা মাইনী বাজার এ অঞ্চলের পুরাতন এবং প্রধান বাজার। বাজারের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই স্থানীয় অধিবাসী। মায়ানী মুখ পেরিয়ে রাঙামাটির দিকে যেতেই সমুদ্র সদৃশ্য বিশাল জলরাশির বুকে দ্বীপের মতো গড়ে উঠেছে কাট্টলি বাজার।

চারপাশে হ্রদের নীল জলরাশি জুড়ে শীতের আগমন বার্তা জানিয়ে দেয় মিষ্টি কুয়াশা।

লেকের এই অংশজুড়ে মাছধরার সারি সারি নৌকা। পানকৌড়ি আর নানা জাতের পাখির ঝাঁক বিলের চারপাশে। মূলত শীতের পাখি দেখতে কাট্টলি বিলেই আগমন, যদিও তখনও সেভাবে আসেনি শীত।

মাছের প্রাচুর্যের কারণে কাট্টলি বিল পাখিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছোট সরালি, টিকি হাঁস, বড় সরালি, মাথা মোটা টিটি, গাঙচিল, গাঙ কবুতর, চ্যাগা, চখাচখিসহ নানান প্রজাতির পাখির ঝাঁকে মুখরিত পুরো বিল।

নৌকায় চড়ে রওনা হলাম লংগদু ঘাট থেকে-যাত্রী সংখ্যা ১২ জন । নীল জলরাশির বুক চিড়ে, ঢেউ তুলে চলেছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা।

চলতি পথে দেখা মিললো ছোট ছোট দ্বীপ আর দূরে পাহাড়ের সারি। মাঝে মাঝে চোখে পড়েছে দুই-একটা পরিবারের বাস।

বর্ষায় দ্বীপগুলো পানির নিচে থাকে- তাই যোগাযোগের জন্য প্রত্যেক পরিবারের একটা করে নৌকা থাকা বাধ্যতামূলক।
জলে ভাসতে ভাসতে চলেছি কাট্টলি বিলের দিকে। জলের বুকে আকস্মিকভাবে ভেসে উঠে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। যা আরও আকর্ষণীয় ও নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়।

স্থানীয়রা জানালেন, শিকার কমে যাওয়ায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেড়েছে। পাখির ঝাঁক দেখলেই বোটের গতি কমানো হয়, যাতে পাখি উড়ে না যায়।

জলে ভাসা আর পরিযায়ী পাখি দেখতে দেখতে দুপুর নাগাদ পৌঁছে যাই কাট্টলি বিলে। লেকের নীলাভ স্বচ্ছ ঠাণ্ডা জলে দীর্ঘ স্নান শেষে ৩-৪ পদের তাজা মাছ দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সেরে নিলাম।

তৃপ্তির স্বাদ নিয়ে কাট্টলি বিল থেকে আবার যখন রওনা হলাম লংগদুর পথে ততক্ষণে সূর্য সোনা রঙা আলোয় চরাচরকে মুড়িয়ে দিয়ে মুখ লুকাচ্ছে পাহাড় ঘেষা লেকের জলের আড়ালে।

যেভাবে যাবেন:
কাট্টলি বিল যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে রাঙামাটি অথবা লংগদু উপজেলা সদরে।

ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস যায় রাঙামাটিতে। রাঙামাটি থেকে সকালে মারিশ্যা এবং লংগদুর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে করে কাট্টলি বিলে যাওয়া যায়।

সবচেয়ে ভালো হয়  আপনি যদি লংগদু হয়ে যান ,এক্ষেত্রে রির্জাভ করে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়তে পারবেন। ভাড়া পড়বে ১২০০-১৫০০ টাকা।

প্রয়োজনীয় তথ্য
লেকে বেড়াতে গেলে সাঁতার জানা আবশ্যক। না জানলে পানিতে না নামাই উত্তম। কেননা হৃদ পানি বেশ গভীর। সঙ্গে রাখতে পারেন লাইফ জ্যাকেটও।

কাট্টলি বিলে রাতে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। দিনেদিনেই ঘুরে ফিরে আসতে হবে।

এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০১৫৫৬-৭১০০৪৩ ও ০১৮১৫৮৫৬৪৯৭ (সিএইচটি ট্র্যাভেল) নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।