ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

কাঠমান্ডুর সেবায় মুগ্ধ, কিন্তু ঢাকায়...!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও উর্মি মাহবুব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
কাঠমান্ডুর সেবায় মুগ্ধ, কিন্তু ঢাকায়...! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নেপাল থেকে: ভূমিকম্পের রেশ যে এখনও কাটেনি তা ত্রিভূবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পা দিয়েই অনুভূত হলো। জনা বিশেষ লোক অন অ্যারাইভাল ভিসার কাউন্টারে, পাশের কাউন্টারগুলো খা খা করছে।



তবে সেবা দিতে সবগুলো ডেস্কে কর্মকর্তারা রয়েছেন ঠিকই। ইমিগ্রেশন অফিসার শারদ কুমার পান্ডু উদাস ভঙ্গিতে জানালেন, ৬০ শতাংশ পর্যটক হোটেল বুকিং বাতিল করেছে।

তিনি বলেন, নেপাল ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ে হিমালয় দর্শন খুবই উপভোগ্য। এরপর শীত ও কুয়াশা বেড়ে যায় তখন এতো উপভোগ্য থাকে না।

কিন্তু সেই সেপ্টেম্বর মাসের একি অবস্থা! বিমানবন্দর পুরোই ফাঁকা।

অন্যান্য বছর এ সময়ে ইমিগেশন কাউন্টার থেকে ইউ আকৃতির লাইন প্রধান ফটক পার হয়ে যেতো, জানালেন শারদ কুমার।  

এই ইমিগ্রেশন অফিসার দাবি করেন, সেপ্টেম্বর মাসে ভালো মানের হোটেলে রুম পেতে হলে কমপক্ষে ২ মাস আগে বুকিং দিতে হতো। কিন্তু এখন বেশিরভাগ হোটেলের রুম ফাঁকা পড়ে আছে।

নেপালের জাতীয় আয়ের ৪০ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। সেই খাতের করুন অবস্থা এ নিয়ে লোকজনের মধ্যে কষ্ট আছে। কিন্তু হতাশা দেখা গেলো না। সবারই এক কথা, ‘ওবি ঠিক হো যায় গা’।

বিমানবন্দর স্টাফদের সেবা মুগ্ধ হওয়ার মতো। লোকজনকে অনেক বেশি ফ্রেন্ডলি বললে কম বলা হয়। ইমিগ্রেশনে ঢুকতেই হাতের বায়ে পড়বে বেশ কয়েকটি ডিজিটাল মেশিন। বড় হরফে লেখা ফ্রি ফর সার্ভিস।

এই মেশিনগুলো বসানো কারণ জেনে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। অন অ্যারাইভাল ভিসা পেতে হলে এক কপি ছবি প্রয়োজন হয়। কারো সঙ্গে যদি ছবি না থাকে তাদের জন্য এই ব্যবস্থা। এখানে দাড়িয়ে ঝটপট পাসপোর্ট স্ক্যান করে নিন। এরপর সংক্রিয়ভাবে ফরম পুরণ হয়ে যাবে।

বাড়তি কিছু তথ্য যুক্ত করতে হবে (নেপালে অবস্থানের ঠিকানা, হোটেলের নাম)। আর কতদিন অবস্থান করতে চান। লিখে দিলেই চলে আসবে ছবি তোলার অপশন। আর বাটন টিপে দিলেই ছবি ধারণ করবে মেশিন।

এরপর সাবমিট আপশন আসবে স্ক্রিনে। তাতে আলতো করে ছুয়ে দিলেই একটি রিপোর্ট চলে আসবে। সেই রিপোর্ট নিয়ে লাইনে সোজা ইমিগ্রেশনে গেলেই মিলে যাবে তৎক্ষণাৎ ভিসা।

ফরম পুরণে কেউ ভুল করলেও সমস্যা নেই। শুধু ভুল বা এড়িয়ে যাওয়া তথ্যের ঘরে লাল ইন্ডিকেটর আসবে। সেই ঘরে তথ্য দিয়ে সাবমিট করা যাবে। আর রিপোর্টের নিচে ছোট্ট করে লেখা চাইলে একটা মোবাইল ফোনের সিম পেতে পারেন। সে জন্য ইনফরমেশন ডেস্কে যোগাযোগ করতে হবে।

ডিজিটাল মেশিন পার হয়ে কয়েক কদমের মধ্যেই মানি চেঞ্জ কাউন্টার। আর দশটি দেশের মতো নয় এরা, একেবারেই ভিন্ন ধাচের।   বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণে যাওয়া মাকসুদা আফরোজ চৌধুরী ডলার ভাঙানোর অভিজ্ঞতা এভাবেই শেয়ার করলেন বাংলানিউজের সঙ্গে।

অন্য কোন দেশ হলে ডলার তাদের নির্ধারিত দরে চেঞ্জ করে দিতো। কিন্তু চমকে দিয়ে এখানকার অফিসার জানালেন ম্যাম, আপনি চাইলে বাইরেও এই ডলার ভাঙাতে পারেন। সেখানে বেশি দর পাবেন।  

ভাবা যায় এমন উদারতা, নিজের ব্যবসার কথা না ভেবে ভ্রমণকারি বিদেশি অতিথির কিভাবে সুবিধা হবে সেটাই ভাবছেন, বিষ্ময়ের প্রকাশ সেই নারী ভ্রমণকারীর কণ্ঠে।

বাংলাদেশের সঙ্গে একই বিষয়ে আচরণের পার্থক্য টানতেও ভুললেন না।

সে অভিজ্ঞতা এই প্রতিবেদকদ্বয়েরও হয়েছে।

শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পুবালী ব্যাংকের মানি চেঞ্জ কাউন্টারে নেপালি রূপি আছে কি-না জানতে চাইলে, কর্মকর্তা জানিয়ে দেন নেই।

অন্য কোথাও পাওয়া যায় কি? এ প্রশ্ন দু’ফায় করেও কোন উত্তর পাওয়া গেলো না। এভাবে আরও তিনটি কাউন্টারে গিয়ে ব্যর্থ হতে হয়।

সোনালী ব্যাংকের কাউন্টারে জিজ্ঞেস করলে জবাব মেলে, তারা নেপালি রূপি বিক্রি করেন না। অন্য কোথাও পাওয়া যাবে কী? সে প্রশ্নে বললেন সামনে দেখেন। মনে হল কত ব্যস্ত তিনি। অথচ ওই কাউন্টারে মাত্র একজন যাত্রী ডলার কিনছিলেন। আর দুইজন অফিসার বসা।

কাঠমান্ডুতে তৃতীয়বারের মতো ভ্রমণে এসেছেন বাংলাদেশি তৌহিদুল ইসলাম। নেপাল ভ্রমণের কারণ জানতে চাইলে বলেন, দেশটিতে সার্ক কান্ট্রির লোকজনের জন্য সব ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে। মাত্র ২মিনিটেই ফ্রি ভিসা দিয়ে দেয়। দ্বিতীয়বার এলে চার্জ নেয় সামান্য।  

আরও জানালেন, দর্শনীয় স্থান সমুহে প্রবেশ ফিতে রয়েছে বিশাল ছাড়। কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ারে সার্ক দেশভুক্ত দেশ সমুহের নাগরিকদের জন্য প্রবেশ ফি মাত্র ১৫০ নেপালি রুপি। কিন্তু অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ৭’শ ৫০ রুপি।

নান্দনিক সোয়েনবু মন্দিরে অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য প্রবেশ ফি ২৫০ রুপি। কিন্তু সার্কের নাগরিকদের জন্য মাত্র ৫০ রুপি।

তবে আশার কথা হচ্ছে বিমানের ফ্লাইটের ভেতরের সার্ভিসটা ভালোই পাওয়া গেলো।   যাত্রীদের প্রয়োজন মেটাতে ক্রুদের আন্তরিকতা ছিলো মুগ্ধ করার মতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
এসআই/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।