ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ঘুরে আসুন টইটুম্বুর বাইক্কা বিলে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
ঘুরে আসুন টইটুম্বুর বাইক্কা বিলে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): বাইক্কা বিল। দেশের অন্যতম মৎস্য অভয়ারণ্য।

আমরা সবাই শীতের বাইক্কা বিলের সঙ্গে পরিচিত। তখন পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে মুখর থাকে এর চারদিক।

কিন্তু বর্ষার বাইক্কা বিলের সঙ্গে এবার পরিচিত হই, পরিচিত হই পানি থৈ থৈ বাইক্কা বিলের সৌন্দর্যের সঙ্গে।

৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাইক্কা বিলের সুনাম দারুণভাবে জড়িয়ে রয়েছে। যার অবস্থান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায়।

একশ হেক্টর আয়তনের এই সংরক্ষিত জলাশয়টি মৎস্য সম্পদে ভরপুর। নানা জাত-প্রজাতির মাছের সঙ্গে রয়েছে সাপ-ব্যাঙ আর জলজ উদ্ভিদের নিত্য বসবাস।
 
তবে বর্ষা মৌসুমে রাস্তার দুর্ভোগ একদমই মনে রাখার মতো! সোজাসাপ্টা, বাইক্কা বিলের টলমল পানির সৌন্দর্য দেখতে ভ্রমণগ্লানিকে হিসেবে রাখতে হবে। বিলের পানিঘেরা রূপকে প্রত্যক্ষ করতে হলে পায়ে হেটে কষ্ট করে আসতে হবে।
 
মাটির রাস্তা। তাই পায়ে পায়ে বিড়ম্বনা। চলে না তখন কোনো সিএনজি অটোরিকশাও, প্রাইভেট গাড়ি অথবা অন্য কোনো যানবাহন। এক্ষেত্রে নিজের ‘পা’ হয় বাহন।
 
এভাবেই একসময় পৌঁছে যাওয়া যায় বাইক্কা বিলে। মাঠ-ঘাট-প্রান্তরের মতো বিলেও শুধুই পানি আর পানি।

নির্দিষ্ট সীমারেখা থেকে বর্ধিত হয় পানির উপস্থিতি। মাছগুলো ছোটাছুটি করতে করতে পানির উপর হঠাৎ মুখ উচিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করে। জলজপাখিগুলো গলা ছাড়ে ডাক ছাড়ে। সঙ্গীর উদ্দেশ্যে।
 
ঝিমিয়ে পড়া হিজল-করচ গাছের পাতাগুলো সতেজ হয়ে উঠে। ঢোলকলমি চোখ তুলে তাকায় আগত অতিথির দিকে। কাছে-দূরে ব্যাঙের লাফালাফি। বিলের জলে পানকৌড়ি, ছোট সরালি আর পাতিহাঁসের ডুব।
 
বৃষ্টিময় প্রাণপূর্ণতার সৌন্দর্য বাইক্কা বিলে এসেও ধরা পড়বে দারুণভাবে। টইটম্বুর বিলের পানিতে ঢেউ ওঠে ছলাৎ ছলাৎ।

অনেক সময় পানিতে তলিয়ে যায় হিজল-করচের বনটিও। যেন নতুন প্রাণ জেগেছে। বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে।

হাইল হাওরে অবস্থিত সংরক্ষিত মৎস্য অভয়াশ্রম ‘বাইক্কা বিল’। ইউএসআইডি’র অর্থায়নে ‘অ্যাকুয়াকালচার ফর ইনকাম অ্যান্ড নিউট্রেশন’ প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে মৎস্য ও পাখির অভয়াশ্রম।

২০০৩ সালের ১ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় বাইক্কা বিলকে স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এই বিল শুধু মাছের জন্যই নয়, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণীর জন্য একটি চমৎকার নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
 
অপরূপ সৌন্দর্যের  লীলাভূমি এ বিল এখন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে নজর কাড়ছে পর্যটকদেরও। নয়নাভিরাম এই জলাভূমিতে রয়েছে হাজারও শাপলা পদ্মসহ নানান জলজ উদ্ভিদ।
 
এ প্রসঙ্গে ক্লাইমেট-রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুডস (ক্রেল) প্রকল্পের সাইট (বাইক্কা বিল) অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, তখন চারদিকে পানি থৈ থৈ করে। এই হাওরের আশপাশের গ্রামের মানুষের তখন একমাত্র বাহন হয় নৌকা।
 
‘বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি পনের/ষোল ফুট হয়ে যায়। আর শুষ্ক মৌসুমে তা কমে দাঁড়ায় চার/পাঁচ ফুটে,’ যোগ করেন তিনি।  
 
বাইক্কা বিল ছাড়াও যা আছে শ্রীমঙ্গলে
প্রকৃতিই শ্রীমঙ্গলের প্রাণ। সবুজের নিসর্গে ভরা ৪৪টি চা বাগান, জীববৈচিত্র্যপূর্ণ সমৃদ্ধ বনাঞ্চল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী খাসিয়া, ত্রিপুরা, সাঁওতালদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র, রামনগরের প্রসিদ্ধ মণিপুরী তাঁতশিল্প ও কাপড়, বৃটিশ চা ব্যবস্থাপকদের কবরস্থান ডিনস্টন সিমেট্রি,  ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়া বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, ৫০০ বছরের পুরানো নির্মাই শিববাড়ি, লেবু-পান-আনারস বাগানের প্রাকৃতিক রূপ প্রভৃতি।
 
যেভাবে যাবেন
শ্রীমঙ্গলের সঙ্গে সারা দেশের রেল ও সড়কপথে রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঢাকা থেকে তিনটি, চট্টগ্রাম থেকে দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন শ্রীমঙ্গল হয়ে সিলেটে চলাচল করে।

ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ বা শ্যামলী পরিবহনেও শ্রীমঙ্গল আসা যায়। শ্রীমঙ্গলে নেমে অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, জিপ, প্রাইভেটকার বা মাইক্রো ভাড়া করে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন দর্শণীয় স্থান।
 
কোথায় থাকবেন
পর্যটকদের রাতযাপনের জন্য এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি হোটেল, রিসোর্ট, রেস্ট হাউস, কটেজ।

নির্জন পরিবেশে পাহাড়ি টিলার ওপর নির্মিত টি-রিসোর্ট ও পাঁচ তারকা মানের গ্র্যান্ড সুলতান টি-রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের নজরকাড়া সৌন্দর্য পর্যটকদের বিমোহিত করে তোলে।

বিভিন্ন পাহাড়ি টিলার ওপর নির্মিত কটেজগুলোতে রাতযাপন করে পর্যটকরা প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাবেন।
 
আর খাওয়া-দাওয়ার জন্য শ্রীমঙ্গলে রয়েছে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। তবে পরিষ্কার-পরিছন্ন ও ভালোমানের খাবার খেতে হলে অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোতে যেতে হবে। সেখানে বাঙালি খাবারের পাশাপাশি চাইনিজ খাবারও পাওয়া যাবে।

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক।

আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে। আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
 
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে। আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।

travelers_notebook_5

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
বিবিবি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।