ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-২

মেঘ চেপে ধরলো চারপাশ থেকে, পথ দেখা দায়

রিয়াসাদ সানভি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫
মেঘ চেপে ধরলো চারপাশ থেকে, পথ দেখা দায় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান থেকে ফিরে: বিভীষিকার এক রাত পার হয়েছে। ভয়ংকর বৃষ্টির সঙ্গে কানে তালা লাগানো বজ্র-বাতাস।

শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম বগা লেক পাড়া আবার ডুবেই যাবে নাকি! এ যাত্রায় কি আর ত্লাংময় পৌঁছানো হবে না?

কিন্তু রাতের তুলনায় সকালের পরিবেশটা বেশ আশাবাব্যঞ্জক। আকাশ গোমড়ামুখো। মেঘ নেমে এসে ঠিক টিনের চালের উপরে বসেছে। কিন্তু আমাদের অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে। তৌহিদের সঙ্গে আলাপ সেরে নিলাম। মূলত দুটো পথের একটি আমাদের বেছে নিতে হবে। হয় থাইকিয়াং পাড়া হয়ে রেমাক্রি খালে নেমে যেতে হবে, খাল ধরে দুলাচরণ পাড়া হয়ে হাজরায় পাড়া। কিন্তু রেমাক্রির প্রবল স্রোতের খবরে আমরা একটু দ্বিধায়।

আরেকটি পথ আছে। থাইকিয়াং পাড়ার পাশ দিয়ে তাম্লো পাড়ার পথ ধরতে হবে। কিন্তু সেটি একটু ঘুর পথ। যাই হোক আমরা তাড়াতাড়ি সকালের খাবার খেয়ে ব্যাকপ্যাক কাঁধে চাপিয়ে দে ছুট। এর আগের ট্যুরগুলোতে দলবেঁধে এসেছি। এবার আমি আর তৌহিদ। পা চলছে ইঞ্জিনের গতিতে।

দার্জিলিং পাড়ার যাত্রী ছাউনি অবধি পৌঁছাতে একঘণ্টাও বোধহয় লাগেনি। কিন্তু সেখানে এসে টের পেলাম পায়ে জোঁকের আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টির মধ্যে বান্দরবানে ট্রেকিং করতে এলে জোঁকের কামড় সহ্য করতে হবে সেটি জানি। কিন্তু তার মাত্রা নিয়ে খানিকটা চিন্তিত।

দার্জিলিং পাড়া আসতে আসতেই মেঘ আমাদের চেপে ধরলো। এখন হাত দিয়ে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের শীতল উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। বৃষ্টি এলো ঝেপে। রাস্তার পাশের অতলে চলে যাওয়া খাদ থেকে একে একে মেঘেরা দলবেঁধে উপরে উঠে আসছে।

দার্জিলিং পাড়ায় পৌঁছে শরীর গরম করবার জন্য খানিক চা পানের বিরতি। সেখানে রেমাক্রির অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে কোনো খবর জানা গেলো না। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই আমরা কেওক্রাডং উঠতে লাগলাম।

পথে দেখা কেওক্রাডংয়ের মালিক লালা বমের সঙ্গে। তিনি সতর্ক হয়ে চলার পরামর্শ দিলেন। বললেন, থাইকিয়িং পাড়া থেকে যেনো স্থানীয় কাউকে নিয়ে যাই। আরাকান আর্মি নাকি আশেপাশেই আছে।

দার্জিলিং পাড়া থেকে কেওক্রাডং উঠতে ঘড়ি ধরে আধ ঘণ্টা লাগলো। সেখানে পৌঁছে আমরা দাঁড়ালাম না। ক্যাম্পে ফরম জমা দিয়ে আবার চলা। পাসিং পাড়া পার হওয়ার পর থাইকিয়াং পাড়ার আগ পর্যন্ত আর কোনো জনবসতি নেই। এখন একটানা চলছি।

ট্রেইলের বাঁ দিকে খাদ নেমে গেছে একেবারে অতলে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে সুংসাং পাড়া, রুমনা পাড়া দেখা যায়। চোখে পড়ে দিগন্তে ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি। কিন্তু এখন মেঘের রাজত্বে আছি। বৃষ্টি একটু ধরে এসেছে। আগে মেঘ, পেছনে মেঘ, আশপাশে সব জায়গায় মেঘ। পথের পাশে একটানা জুমের খেত। এবার পাহাড়ে ব্যাপক জুম হয়েছে। একেবারে হলুদ হয়ে পেকে আছে। মোটামুটি সমতল পথ ধরে আমরা ক্যাপিটাল পাহাড় পর্যন্ত চলে এলাম। এখান থেকে একটি পথ গেছে বাকত্লাই পাড়ার দিকে, আরেকটি থাইকিয়াংয়ের দিকে।

ক্যাপিটালের চূড়া দেখা যাচ্ছিলো না। তৌহিদকে বললাম এরপর ক্যাপিটাল চূড়াতেও অভিযান চালাতে হবে। থাইকিয়াং পাড়ার কবরস্থান অবধি আসার পর এবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা। একটু বসে বিস্কুট চিবানোর ফাঁকে ফাঁকে ঠিক হলো তাম্লো পাড়া দিয়েই যাবো। কথা হলো স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে। তারাও সে পথে যাওয়ার পরামর্শ দিলো।

আগামী পর্বে পড়ুন: বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-৩: বর্ণনাতীত কষ্ট, তবু স্বপ্ন ছোঁয়ার আশায় পাড়ি

বাংলাদেশ সময়: ০০২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৫
এএ

** পাহাড়জয়ের স্বপ্নপথে যাত্রী আমি একা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।