ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র মহামায়া

অমিয় দত্ত ভৌমিক ও মাহবুব আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৫
সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র মহামায়া ছবি: কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মহামায়া ঘুরে এসে: মহামায়া ইকো পার্ক! নামেই যেন একটি মায়া ছড়িয়ে আছে। সত্যিই মহামায়া তার মায়া ভোলানো সৌন্দর্য দিয়ে হাতছানি দিচ্ছে ভ্রমণ পিপাসুদের।


 
এখানকার পাহাড়ের পরতে পরতে আদিবাসীদের বিচিত্র জীবন-যাপন ও পাহাড় লেকের সৌন্দর্যে বিমোহিত হন পর্যটকরা।
 
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের ঠাকুরদিঘী এলাকায় প্রকৃতির অপরূপ রূপে সজ্জিত ‘মহামায়া’র অবস্থান। এটি হতে পারে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মীরসরাইয়ে গড়ে উঠেছে এ পর্যটন স্পট। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার অভাবে মহামায়া এখনও সেভাবে পর্যটক টানতে পারেনি।

তবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হলে এটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। যা থেকে আয় হবে বিপুল পরিমাণ রাজস্বও।

সূত্র জানায়, এলাকায় জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি ঢল নিরসন এবং শুষ্ক মৌসুমে কৃষিখাতে সেচ সুবিধা জন্য মহামায়া ছড়া সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

এর অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে মহামায়া ছড়ার ওপর একটি স্লুইস গেট স্থাপন করা হয়। স্লুইস গেট অপারেটিংয়ের জন্য পাশে একটি উচু সড়ক নির্মাণ করে পাউবো।
 
১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প এলাকায় স্পিল ওয়ে, ইনটেক স্ট্রাকচার, মাটির ড্যাম ও খাল খনন করা হয়েছে। লেকের বিভিন্ন অংশে প্রাকৃতিক ঝর্ণা, নানা জাতের বৈচিত্র্যময় বাগানসহ অরণ্যে ঘেরা অনন্য সুন্দর এলাকায় রূপান্তর করা প্রকল্পটিকে।

২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মহামায়া ইকো পার্কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পর্যাযয়ক্রমে লেকে প্রায় ৩০ টন বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা অবমুক্ত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং মৎস্য বিভাগ।

পরবর্তীতে মহামায়াকে পর্যটক ও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রথম দিকে মানুষের আগমন ঘটলেও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার অভাবে এখন তেমন লোক সমাগম ঘটে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

তবে প্রতিদিনই লেকে মাছ ধরতে চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন শখের মৎস শিকারীরা। টাকা দিয়ে জায়গা ভাড়া নিয়ে দিনভর মাছ শিকার করেন তারা।

তেমনি একজন আবুল কালাম (৩৫)। যিনি কুমিল্লা থেকে এসেছেন মহামায়ায়।
 
লেকে বরশি ফেলে মাছ শিকারের সময় কথা হয় বাংলানিউজের সঙ্গে। বললেন, ‘লেকে প্রচুর মাছ আছে। বরশি ফেললেই মাছ ধরে। তাই শখের বশে প্রায়ই এখানে মাছ ধরতে আসি। মাছও ধরে, নিজে বরশি দিয়ে মাছ শিকার করে আনন্দ পাই। ’
 
এদিকে লেকটিকে পর্যটন বান্ধব ও আকর্ষণীয় করে তুলতে মহামায়াকে বেসরকারি খাতে ইজারা দিয়েছে ‍চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ। ৫০ লাখ টাকায় ৩ বছরের জন্য পার্কটি ইজারা নিয়েছে মেসার্স আহসান ট্রেডিং।
 
পার্কের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত মো. বাচ্চু বাংলানিউজকে জানান, পার্কের প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। প্রথম প্রথম পার্কে মানুষের আনাগোনা ছিল বেশি। এখনও ছুটির দিনে বেশি মানুষ আসে।

ছুটির দিন ছাড়া গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন পর্যটক আসেন জানিয়ে তিনি বলেন, শীতকালে পিকনিক করতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আসেন।

বাচ্চু জানান, ‍লেকে মাছ শিকারের জন্য প্রত্যেককে ৫০০ টাকা করে জমা দিতে হয়। নির্দিষ্ট জায়গায় তিনি ১০টি বরশি ফেলতে পারেন।

এদিকে পার্কের নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় বেশ ক্ষুব্ধ দর্শনার্থীরা।
 
নোয়াখালী থেকে আসা তরুণ শিহাব উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, ‘ফেরারী লাভ গ্রুপে’র হয়ে তারা ১২জন এসেছেন মহামায়ায়। কিন্তু পার্কের সার্বিক পরিস্থিত দেখে বেশ হতাশ হয়েছেন তারা।

বললেন, ‘বিভিন্ন জনের কাছে মহামায়ার সৌন্দর্য্যের কথা শুনে বন্ধু-বান্ধব মিলে এসেছি। কিন্তু স্বচক্ষে পার্কের অবস্থা দেখে হতাশ হয়েছি। ’
 
‘পুরো পার্ক জুড়ে বসার জন্য একটি ব্যাঙের ছাতা নির্মাণ করা হয়েছে। টয়লেট কিংবা বসার মতোও কোনো জায়গা নির্মাণ করা হয়নি,’ শিহাবের সঙ্গে যোগ করে বলেন ফারহানা আহমেদ।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মিরাজ আলী জানান, পার্কে ঘুরতে এসে অনেকেই ছিনতাইয়ের মতো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হয়েছেন। কেউ টাকা-পয়সা খোয়ানোর পাশাপাশি হারিয়েছেন মোবাইল ফোন।
 
তিনি জানান, লেকের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি ঝরনা বিশেষ করে নয়াতিকুম ও ডেলাবানিকুম এলাকার সৌন্দর্য দেখতে আসেন পর্যটকরা। পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় চার’শ আদিবাসীর বাস রয়েছে। তারা সকলেই চাকমা সম্প্রদায়ের।

‘নৌকায় চড়ে সেখানে যেতে হয়, নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকে পর্যটকই যেতে অনীহা প্রকাশ করেন,’ বলেন মিরাজ।

যোগাযোগ করা হলে আহসান ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু সুফিয়ান বাংলানিউজকে জানান, এরইমধ্যে মহামায়াকে পর্যটক গন্তব্যে পরিণত করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। অবকাঠামাগত উন্নয়ন কাজও চলছে।

তিনি জানান, এরইমধ্যে কার পার্কিং, টয়লেট, ফুড কর্নার, ছাউনি, পিকনিক কর্নার নির্মাণের কাজ চলছে। কোনোটির কাজ শেষ হয়েছে।

নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে কটেজসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানালেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।