ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-৫

দেশের সর্বোচ্চ চূড়ায় শ্রেষ্ঠ ঈদ উদযাপন

রিয়াসাদ সানভি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
দেশের সর্বোচ্চ চূড়ায় শ্রেষ্ঠ ঈদ উদযাপন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান থেকে ফিরে: পাড়ার দোকানটিতে কিছুক্ষণ জিরিয়ে এবার উঠতে হবে নেফিউ পাড়া, তলাংময় বেস ক্যাম্পে। রেমাক্রি ধরে একটু এগিয়ে এবার একটানা উঠছি।

বাংলাদেশে সম্ভবত একমাত্র নেফিউয়ের বনেই এখনো সভ্যতার আগ্রাসন হয়নি। বিশাল সব বনস্পতির ঝাঁকড়া কাণ্ডদেশ সাক্ষ্য দিচ্ছে তাদের প্রাগৈতিহাসিক উপস্থিতির। একেবার অসূর্যস্পর্শা বলতে যা বোঝায় নেফিউয়ের বন তাই।

নেফিউ ফলসের ধারা পেরিয়ে শেষ চড়াইটা ধরে যখন এগোচ্ছি তৌহিদ ঘোষণা করলো আজই তলাংময় সামিট। কেঁপে উঠলাম। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়!! আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। পাড়ায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর আড়াইটার মতো বেজে গেলো।

কারবারির ঘরে ব্যাগ প্যাক জিম্মা রেখে পা বাড়ালাম স্বপ্ন চূড়ার পথে। প্রখর সূর্য চারপাশ একেবারে তাঁতিয়ে দিয়েছে। পাড়া থেকে একটু দূরে ঝিরি পড়লো। সেখানে বোতলটি ভরে নিলাম। অদ্ভুত মিষ্টি জল। সারা জীবন মনে থাকবে।

ট্রেইলের আশপাশে বিশাল বিশাল সব গর্জন গাছ। এত দুর্গম পাহাড় বলেই বোধহয় টিকে আছে। একটানা উঠতে হবে এ পথে। এরপর বাঁশবনের শুরু। এতক্ষণ ভালোই ছিলাম।

বাঁশবন শুরু হতেই পথের দিশাও কমতে লাগলো। পায়ের নীচে আবার সেই প্যাঁচপ্যাঁচে কাদা। সঙ্গে জোঁকের ভয়। এই ভর দুপুরেও কি নির্জন চারপাশ। গা ছমছম করে।

এখান থেকে চূড়া দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে উঠতে উঠতে পাশের পাহাড়গুলোর সমতলে চলে এলাম। যত এগোতে লাগলাম পাল্লা দিয়ে শক্তি বাড়াতে লাগলো ক্লান্তি।

আসলে লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছালে তা ছোঁয়ার ব্যাকুলতা দুর্বলতাকে ডেকে আনে। এক পর্যায়ে বাঁশবনের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমলো। তৌহিদ বললো আর দশ মিনিট হাঁটলেই চূড়া।

এখানে আবার বাঁশবনের উপদ্রপ। চারপাশে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই যেখানে এসে পৌঁছালাম যার পর আর যাওয়ার জায়গা নেই। তৌহিদ চেঁচিয়ে দেখালো ওই দূরের মায়ানমারের পিংক্যাং জলপ্রপাতের সাদা রেখা।

আমার কি আর সেদিকে খেয়াল আছে। আমার সান্নিধ্য তখন দেশের সর্বোচ্চ চূড়ার সঙ্গে। অনেক সময় ধরে দেদারসে ফটো সেশন চললো। ছোট হোক বড় বড় হোক আমার দেশের সর্বোচ্চ চূড়া বলে কথা!

তলাংময়কে তাই সম্মান দিতেই হবে। ঈদের দিনের বিকেলটা কাটলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে। এর চেয়ে ভালো ঈদ কেটেছে কখনো? আধ ঘণ্টার মতো ছিলাম। বিকেলের মরা আলো আমার চিবুক ছুঁয়ে ঘুমের দেশে চলেছে। দূরে দেখা যাচ্ছে মায়ানমারের ঢেউ খেলানো পাহাড় সারি।

দু’দেশের একেবারে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে মোদক রেঞ্জের সবচেয়ে উঁচু এ চূড়া।   তৌহিদ ফিরে যাওয়ার কথা বললেও যেতে ইচ্ছে করছিলো না। কিন্তু নীচের ফেলে আসা পথের কথা ভাবতেই উঠে দাঁড়ালাম। আজ রাতে থাকবো নেফিউ পাড়ায়। ঈদ রাতের কেমন অভিজ্ঞতা তা আগামী পর্বে...

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
এএ

** জোঁকে রক্তাক্ত হয়ে আমার দেখা সুন্দরতম পাড়ায়
** বর্ণনাতীত কষ্ট, তবু স্বপ্ন ছোঁয়ার আশায় পাড়ি
** বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-১: পাহাড়জয়ের স্বপ্নপথে যাত্রী আমি একা
** বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-২: মেঘ চেপে ধরলো চারপাশ থেকে, পথ দেখা দায়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।