ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

কোলাহল আর নিস্তব্ধতা পেরিয়ে...

আতাউর রহমান খসরু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
কোলাহল আর নিস্তব্ধতা পেরিয়ে...

ক্যাম্পাসের নিয়মবদ্ধ জীবন ও যান্ত্রিক নগরীতে যখন হাপিত্যোশ অবস্থা, তখন হঠাৎ শিক্ষা সফরের ঘোষণা মনে স্বস্তির শীতল বাতাস বইয়ে দিল।

ক্যাম্পাস জীবনের সাড়ে তিন বছরে শিক্ষা সফর ছিলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের (৭ম ব্যাচ) কাছে পরম পাওয়া।

কেননা আমাদের রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা।

এখনও শিক্ষা সফরের রীতি গড়ে ওঠেনি বিভাগে। তবে সে নিরাশায় আশার আলো জ্বালালেন রেজাউল হোসাইন স্যার।

নিজ উদ্যোগে শিক্ষা সফরের গল্প শুনিয়ে সাহস যোগালেন শিক্ষার্থীদের। ব্যস, এবার শুরু স্যারদের কাছে অবদারের...।

বিভাগের নবীন স্যারদের উদ্যোগ আর চেয়ারম্যান স্যারসহ সিনিয়রদের আন্তরিকতায় অবশেষে বাস্তবায়ন হলো ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম শিক্ষা সফর-২০১৫।

সে হিসেবে আমরা হলাম ইতিহাসের অংশ। শিক্ষা সফরে যাত্রা শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান স্যার শুভকামনা জানিয়ে আমাদের বিদায় জানালেন।

শিক্ষা সফরে সঙ্গী পেলাম নূরুল্লাহ স্যার, জুয়েল স্যার, তাজাম্মুল স্যার ও সৈকত স্যারকে। মেয়েরা সঙ্গে পেলো নূরুল্লাহ স্যার ও সৈকত স্যারের স্ত্রীকে। ক্যাম্পাসের শান্ত চত্বর থেকে শুরু হলো ৫ দিনের শিক্ষা সফর।

ঘুরবো প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, ছেঁড়া দ্বীপ, কক্সবাজার, হিমছড়ি, ইনানি ও মহেশখালী। আপাতত গন্তব্য কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। বাসের চাকা ঘুরতেই উল্লাস ছড়িয়ে পড়লো সবার মাঝে।

নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই আমরা পৌঁছে যাই কমলাপুর স্টেশনে। বেলা ৩টায় ভেঁপু বাজিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছুটলো আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস। ঝক-ঝকাঝক শব্দে এগিয়ে চলছে ট্রেন আর আড্ড, হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠছি আমরা।

কেউ বেসুরো গলায় গান ধরলো, কেউবা ট্রেনের জানালায় দৃষ্টি মেলে দিলো সবুজ‍াভ দিগন্তে। হারিয়ে গেলো গ্রামীণ জনপদ, ফসলের মাঠ, নদী ও প্রকৃতিতে।

তবে এ দৃশ্য বেশি সময় দেখা যায়নি। কেননা নরসিংদী পেরোতেই শীত ও সন্ধ্যের আমেজ নেমে আসে।

অন্ধকারে ডুবন্ত নিঃসঙ্গ রেলপথ। মাঝে মাঝে হঠাৎ ব্যস্ত বাজার। আঁধারের বুকে মনে হচ্ছিলো প্রতি জনপদই যেনো লণ্ঠন হাতে জেগে থাকা একেকজন নৈশপ্রহরী।

কিন্তু নির্জনতা খুব বেশি সময় টিকেনি। এরইমধ্যে তাজাম্মুল স্যার তার গানের ঝাঁপি খুলে দিলেন। আর সৈকত স্যার যেনো গানের অফুরন্ত ভাণ্ডার। সামনে থেকে স্যারদের সঙ্গে গলা মেলালো আরিফ, আলিম, আসিফ, আশা, স্বপ্না, মৌ ও তানজিলা।

সুরেলা ও বেসুরে কণ্ঠে তাল মেলালো প্রায় সবাই। এভাবেই গান, ফান আর আড্ডায় কেটে গেলো ছয়টি ঘণ্টা।

রাত ৯টায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে নেমে চলে গেলাম হোটেলে। সেখানে আধ ঘণ্টার খাবারের বিরতি। এরপর বাসে টেকনাফের উদ্দেশে যাত্রা শুরু।

সুর লহরী থেমে থাকলো না বাসেও। প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত চললো রকমারি গানের অবিন্যস্ত উল্লাস। ধীরে ধীরে কণ্ঠের সংযুক্তি...।

তবে ধীরে ধীরে রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেমে এলো নীরবতা। সকাল আটটায় পৌঁছালাম পাহাড়, নদী ও সবুজে ঘেরা টেকনাফে।

সকালের চা-নাস্তা ও নাফ নদীর তীরে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি। একঘণ্টার বিরতি শেষে কেয়ারি সিন্দাবাদে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা হলাম।

পরের পর্বে থাকছে নাফ নদী ধরে সমুদ্র পেরিয়ে নারকেল জিঞ্জিরার গল্প...
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক।

আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে। আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।