ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ঢাকার সাংবাদিক-শিক্ষক মার্কিন মুলুকে ছাগল খামারি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
ঢাকার সাংবাদিক-শিক্ষক মার্কিন মুলুকে ছাগল খামারি!

বাংলাদেশের এক সময়ের নামকরা তরুণ সাংবাদিক ও বিশ্ববি্দ্যালয় শিক্ষক আবু নাসের রাজীব আমেরিকায় ছাগল খামারি! বেশ খুঁজে-পেতে এই আপাতবিস্ময়কর তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেল। দেখা গেলো প্রখর রোদ্দুরে ঘাস, গম, পানি নিয়ে ছাগলের পিছনে দৌড়ে ফিরছেন রাজীব।



কোলে তুলে আদর করছেন সদ্যভূমিষ্ট ছাগশিশু। গাড়ির পেছনে ট্রেইলার নিয়ে মার্কিন মূলুকের দূর গ্রামে ছুটছেন ছাগল কিনতে।

এমন দৃশ্য কল্পনায় নয়, বাস্তবেই দেখা গেল।

এই আবু নাসের রাজীবকে কেউ চেনেন বলে মনে হয় না। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর অধ্যাপক নওসের আলীর সন্তান রাজীব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও বিবিসি বাংলায় কাজ করে সাংবাদিক হিসাবে নাম কুড়িয়েছেন। কাজ করেছেন ঢাকাস্থ মার্কিন তথ্য দফতরে। আইইউবি’তে শিক্ষকতাও করেছেন তিন বছর। এরপর প্রথমে লন্ডন ও পরে আমেরিকায় পাড়ি জমান উচ্চতর শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে। বন্ধুমহল ও আত্মীয়-স্বজনের এই সাধারণ তথ্য জানা আছে। এদের ক’জন জানেন, রাজিব এখন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী স্যাকরামেন্টোর উপকন্ঠশহর এলকগ্রোভ মাঠের একজন পুরোদস্তুর ছাগল খামারি!

পূর্বপরিচিতির সূত্রে রবিবার কোস্টাল স্টারলাইট ট্রেনে চেপে অরেগন থেকে হাজার কিলোমিটার ছুটতে হলো। সাতসকালে স্যাকরামেন্টো ভ্যালি স্টেশনে পৌঁছার পর বিশ কিলোমিটার দূরের এলকগ্রোভে পৌঁছে এ নিবন্ধের নায়ক রাজীবকে পাওয়া গেল এক ভিন্ন চেহারা ও আদলে।

আশপাশেই ঘোড়া, বিড়াল ও মুরগীর খামার। পাশের ছাগল খামারে চলছে রাজীবের অভিনব কাজ-কারবার। মাথার ওপর তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে। আবহাওয়ায় মরুভূমির মতো লুহাওয়া বইছে। এর মধ্যে তিনি দৌড়ে ফিরছেন একগাদা ছাগলের পেছনে। গম, গ্রেইন আর ঘাস দিচ্ছেন ক্ষুধার্ত ছাগলকে, মুখের কাছে এগিয়ে দিচ্ছেন পানি। জানালেন, ছোটবেলা তাদের বাড়িতে একটা ছাগল ছিল। নাম ডন। ডনকে খুব আদর করে পালন করা হতো। এক সময় সে ছাগল মারা গেলে পরিবারের সবার মধ্যে নেমে আসে শোক। জানালেন,  যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষান্তে পেশাগত জীবনে প্রবেশের পরও মাথার কোণে তরুণ বয়সের ছাগল পালনের ভাবনাটি হয়তো রয়ে গিয়েছিল,  সেই ভাবনা থেকে এই খামার গড়ে তোলা।

এক সময়ের সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডিধারী রাজীবের এই ছাগলকাণ্ডে অন্তহীন বিস্ময় জাগে। দিনমান পিছুনিয়ে পাওয়া যায় ছাগল নিয়ে আরও মজার তথ্য। জানা গেল, তিনটি ছাগল দিয়ে এই খামারের শুরু হয়েছিল। এখন ২০টিতে পৌঁছেছে। প্রতিদিনই খামারে ছাগল আসছে। খামারে অলিভিয়া নামের ছাগল একটা বাচ্চা দিয়েছে। এই ছাগশিশুর বয়স এখন একসপ্তাহ। ছাগল নিয়ে রাজিবের দুই মেয়ে রাইসা, রাইনা ও একমাত্র পু্ত্র রায়ানের উৎসাহের অন্ত নেই। খামারি হওয়ার পক্ষে তিনি পরিবারের পক্ষ থেকে শুরুতে তেমন উৎসাহ পাননি। নতুন এক ছাগশিশুর জন্মকে ঘিরে পরিবারের সবার মধ্যে উৎসাহ ক্রমশ বাড়ছে। রাজীবের স্ত্রী ফাহমিদা সুলতানাতান্নি এ প্রসঙ্গে আরও এককাঠি সরেশ।   বললেন, ছাগলও এর মধ্যকার আন্তরিক সম্পর্কের ওপর আমরা এখন রীতিমতো পড়াশুনা করছি।

দুপুরে খবর এলো, একশ কিলোমিটার দূরে উডল্যান্ড শহরের পাশে স্প্যারটো গ্রামে ওয়াল্টার নামের এক কৃষক ছাগল বিক্রি করবেন। রাজীব গাড়ির পেছনে ছাগল বহনের বিশেষ ট্রেইলার নিয়ে ছুটলেন। অজানা গ্রাম, অজানা লোক বলে ভয় নেই, কিনতে হবে নতুন ছাগল।   গাড়িতে জিপিএস সেট করে ওয়াল্টারের কাছে ছুটে গেলেন রাজিব। দরদাম করে আড়াইশ ডলারে দুটি ছাগল কিনে নিলেন। বিকালেই খামারের ছাগলসংখ্যা হলো ২২।

খামারের পাশে ফিজিয়ান বংশোদ্ভূত মধ্যবয়স্কা সালা নামের নারী গড়ে তুলেছেন বিড়ালের অভয়ারণ্য। ৩২টি বিড়াল নিয়ে আপাতত চলছে তার বিড়ালরাজত্ব। পাশেই ‘সেভ দেম অল হর্স রেসকিউ’ নামের এক ঘোড়ার খামার।   ভিকি নামের ভদ্রমহিলা এর মালিক। অনিতদূরে এক মুরগীর খামার।

এলকগ্রোভের এই বিশাল মাঠে খামার এলাকার সবচেয়ে অভিনব চরিত্র বিশাল বপুওলা আমেরিকান নিক নামের আধপাগলা যুবক। সিনেমা চরিত্রকেও তিনি হার মানান। গায়ে ফুলশার্ট, পরণে ধুলোবালিমাখা জিন্স প্যান্ট আর গামবুট পরা নিক ঘোড়াখামারের স্বপ্রণোদিত তত্ত্বাবধায়ক। ভরদুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত সে ভুঁড়ি এলিয়ে ঘোড়ার খামারে বসে থাকেন। শহরের চাকরি থেকে ফিরে ভিকি ঘোড়ার খামারে এলে নিক ঘোড়ার যত্নে মন দেন।

উল্লেখ করা যায়, আবু নাসের রাজীব স্যাকরামেন্টো স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ছাগলপালন এখন তার অবসর সময়ের ধ্যান-জ্ঞান।

বাংলাদেশ সময় ১৩৩৪ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।